পুরুষদের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার হারাম
ঝিনাইদহের চোখঃ
প্রত্যেক মুমিনের জন্য ইসলামী শরীয়তে বিধি-বিধান সমূহের রহস্য হচ্ছে আল্লাহ তাআলার নিন্মের বাণী। আল্লাহ তাআলা বলেন, “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোনো মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখে না।” (সূরা আহযাব-৩৬)
কুরআন ও সুন্নাহ থেকে প্রমাণিত কোনো বিষয়ে ওয়াজিব বা হারাম সম্পর্কে প্রশ্ন করলে আমরা তাকে বলব, এটা আল্লাহ তাআলার নির্দেশ কিংবা রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশ। বিষয়টি মেনে নেওয়ার জন্য এটুকু কথাই একজন মুমিনের জন্য যথেষ্ঠ।
কেননা হযরত আয়শা রাঃ. কে যখন জিজ্ঞেস করা হলো, কী ব্যপার ঋতুবতী নারী রোজা কাযা আদায় করবে, অথচ নামাযের কাযা আদায় করবে না? তিনি বললেন, আমরা ঋতুবতী হতাম আমাদেরকে রোজা কাযা আদায় করতে নির্দেশ দেওয়া হত, কিন্তু নামায কাযা আদায় করতে নির্দেশ দেওয়া হত না। (সুনানে আবু দাউদ, হা- ১০৫/২৬২)
কুরআন ও সুন্নাহর উক্তি পাওয়া গেলে অন্য কোনো হেকমত বা রহস্য অনুসন্ধান করা উচিত নয়। বিনা দ্বিধায় মুমিন সেটা মেনে নিবে এবং আমল করবে, কোন প্রশ্ন করবে না। অবশ্য উক্ত নির্দেশে কারণ ও রহস্য অনুসন্ধান করা নিষেধ নয়। শরীয়তের বিষয়ে রহস্য জানা থাকলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
পুরুষের জন্য স্বর্ণ হারাম নারীর জন্য নয়। কেননা আলী ইবনু আবুতালিব রাঃ. বলেন, আমাকে রাসূল (সাঃ) স্বর্ণের আংটি পরতে, রেশমী পোশাক পরতে, রুকু ও সিজদায় কুরআনের আয়াত পরতে এবং হলুদ রং এর পোশাক পরতে নিষেধ করেছেন। (সুনানে তিরমিযী, হা- ১৩/১৭৩৭)
এর কারণ হচ্ছে মানুষের সৌন্দর্যের জন্য স্বর্ণ হচ্ছে সর্বাধিক মূল্যবান বস্তু। বস্তুটি সৌন্দর্য ও অলংকার হিসেবে ব্যবহার করার জন্যে। আর এটি পুরুষদের দরকার নেই। অর্থাৎ পুরুষ এমন মানুষ নয় যে, তাকে অন্যের সাহায্য নিয়ে পরিপূর্ণ হতে হবে বরং তার পুরুষত্বের কারণে নিজেই পরিপূর্ণ একজন মানুষ। তাছাড়া নিজের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য পুরুষের সৌন্দর্য্য অবলোকন করারও দরকার নেই। কিন্তু নারী এর বিপরীত। নারী অপূর্ণ, তার সৌন্দর্যকে পূর্ণতা দান করা দরকার। এ কারণে সর্বোচ্চ মূল্য দিয়ে তাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করার প্রয়োজন দেখা যায়। যাতে করে তার এই সৌন্দর্য অন্য মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য নয় বরং স্বামী স্ত্রীর মাঝে সদ্ভাব সৃষ্টি করার জন্য।
আর এ কারণেই আল্লাহ তাআলা নারীর জন্য স্বর্ণ দ্বারা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হালাল করেছেন। আর পুরুষের জন্য স্বর্ণ হারাম করেছেন। আল্লাহ তাআলা নারীর প্রকৃতির বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, নারী অলংকারে মণ্ডিত হয়ে লালিত-পালিত হয় এবং তর্ক-বির্তককালে স্পষ্ট বক্তব্যে অসমর্থিত। (সূরা যুখরুফ- ১৮)
আর এভাবেই শরীয়তে পুরুষদের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার না করার রহস্য সুস্পষ্ট হয়ে গেল। শরীয়তের সীমা রেখার মধ্যে পুরুষের জন্য রৌপ্য ব্যবহার বৈধ্য রয়েছে। সাহাবী আনাস রাঃ. বলেন, রাসূল (সা.) এর আংটি ছিল রুপার এবং তাতে লাল রংয়ের পাথর বসানো ছিল। (সুনানে তিরমিযী, হা- ১৪/১৭৩৯)
যে সমস্ত পুরুষ স্বর্ণ ব্যবহারে অভ্যস্ত, তারা নিজেদেরকে নারীর কাতারে শামীল করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে নিজ হাতে বা গলায় জাহান্নামে জ্বলন্ত অঙ্গার পরিধান করছে।
লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতীব, দুপ্তারা, কুমারপাড়া, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।