ঝিনাইদহের কৃতি সন্তান খোন্দকার আবু নাসর মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
ঝিনাইদহের চোখঃ
খোন্দকার আবু নাসর মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
জন্মঃ ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৬১/১৯৫৮, ঝিনাইদহ
মৃত্যুঃ ১১ মে ২০১৬, মাগুরা
জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী
পেশাঃ অধ্যাপনা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
ওয়েবসাইটঃ আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট।
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় ইসলামী ব্যক্তি, লেখক ও গবেষক। তিনি আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট এর প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর পুরো নাম ড. খোন্দকার আ.ন.ম. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর।
তিনি ছিলেন একাধারে ইসলামী চিন্তাবিদ, টিভি আলোচক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিস বিভাগের অধ্যাপক, বিশিষ্ট ‘আলেমে দ্বীন, গবেষক ও লেখক। তিনি পিস টিভি, ইসলামিক টিভি, এটিএন, এনটিভি, চ্যানেল নাইন সহ বিভিন্ন টিভিতে ইসলামের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। বিদেশী টেলিভিশন চ্যানেল আইটিভি ইউএস-এর উপদেষ্টা ছিলেন। বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে বিস্তারিত উত্তর প্রদানে পারদর্শীতাই তাঁর জ্ঞানের গভীরতা প্রমাণ করে।
এই বরেণ্য ব্যক্তিত্বের জন্ম হয় ১৯৬১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহের ধোপাঘাট গোবিন্দপুর গ্রামে। তার পিতা খোন্দকার আনওয়ারুজ্জামান এবং মাতা বেগম লুৎফুন্নাহার। তিনি ১৯৭৩ সালে ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করেন। এরপর একই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৭৫ সালে আলিম এবং ১৯৭৭ সালে ফাজিল ও ১৯৭৯ সালে হাদিস বিভাগ থেকে কামিল পাস করার উচ্চতর শিক্ষার জন্যে সৌদি আরব গমন করেন। রিয়াদে অবস্থিত ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাঊদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৮৬ সালে অনার্স, ১৯৯২ সালে মাস্টার্স ও ১৯৯৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে দেওয়া ডঃ আব্দুস সালাম আযাদীর ভাষ্যমতে, “বিদেশিদের মাঝে তিনি ইসলামের দাওয়াত ছড়াতেন। ইংরেজিতে খুব ভালো ছিলেন বলে আমেরিকান সেনা ছাউনিতে তিনি ইসলাম পৌঁছানোর কাজ করতেন। … ড. জগলুল নাজ্জার ও জাহাঙ্গীর ভাইদের দাওয়াতে তিন শতাধিক সৈন্য মুসলিম হয়ে যায়।” ছাত্র জীবনে তুখোড় মেধাবী হিসেবে পরিচত ছিলেন তিনি।
রিয়াদের মুহাম্মাদ বিন সাউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি বর্তমান সৌদি বাদশা ও তৎকালীন রিয়াদের গভর্নর সালমান বিন আব্দুল আজিজের হাত থেকে পর পর দু’বার সেরা ছাত্রের পুরস্কার গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায, বিন উসায়মিন, আল জিবরিন ও আল ফাউজানের মতো বিশ্ববরেণ্য স্কলারদের সান্নিধ্য লাভে সক্ষম হন।
লেখাপড়ার পাশাপাশি ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি উত্তর রিয়াদ ইসলামি সেন্টারে দাঈ ও অনুবাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। লেখাপড়া শেষ করে ১৯৯৮ সালে কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামি স্টাডিজ বিভাগের লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন।
১৯৯৯ সালে তিনি ইন্দোনেশিয়া থেকে ইসলামি উন্নয়ন ও আরবি ভাষা বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
২০০৯ সালে তিনি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগে প্রফেসর পদে উন্নীত হন। কর্মজীবনে তিনি ঢাকার দারুস সালাম মাদ্রাসায় খণ্ডকালীন শায়খুল হাদিস হিসেবেও পাঠদান করতেন। তিনি বাংলা, ইংরেজি ও আরবি ভাষায় সমাজ সংস্কার, গবেষণা ও শিক্ষামূলক প্রায় অর্ধশত গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ইংরেজি ভাষায় :
A Woman From Desert (1995)
Guidance For Fasting Muslims (1997)
A Summary of Three Fundamentals of Islam (1997)
আরবি ভাষায় লিখিত :
بُحُوثٌ في عُلُومِ الْحَدِيْث
বাংলায় উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো :
হাদীসের নামে জালিয়াতি
এহইয়াউস সুনান
কুর’আন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা
রাহে বেলায়াত
ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ
একজন জাপানি নারীর দৃষ্টিতে হিজাব
কুরআন-সুন্নাহর আলোকে পোশাক, পর্দা ও দেহ-সজ্জা সহ অনেক মুল্যবান গ্রন্থ।
তাছাড়া তিনি :
মুসনাদে আহমাদ
ইমাম আবু হানিফা (রাহিঃ) রচিত :
আল-ফিকহুল আকবার
এবং রাহমাতুল্লাহ কিরানবী (রাহিঃ) রচিত :
ইযহারুল হক্ব সহ বেশ কয়েকটি গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন।
দ্বীন প্রচারে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ