ভাল কাজের স্বীকৃতি অবশ্যই মেলে—–শামীমা রহমান শিমু
বিয়ের পর থেকেই আমি বিভিন্ন ধরনের রান্না বান্না করে, সাজিয়ে মেহমানদের সামনে পরিবেশন করতাম। ব্যপারটা সবাই এপ্রিসিয়েট করলেও আমার ভাসুর এই কাজটা একদমই পছন্দ করতেন না।
তিনি ঢাকা ভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছেন। তিনি একজন লেখক।আমার শ্বশুর ছিলেন চেয়ারম্যান।মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি শহীদ হন।
পুরো সংসারের দায়িত্ব এই ভাসুরের উপর পরে যায়।
।অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়ে সংসারের বোঝা মাথায় নিয়ে নিজের এবং ভাই বোনদের পড়াশুনা চালিয়ে গেছেন।তিনি একজন সফল ব্যক্তি।
তিনি অতিরিক্ত রান্নাকে অপচয় মনে করতেন জেনেও, আমি হরেক রকম রান্না করে সাজিয়ে তাঁর সামনে পরিবেশন করতাম।এটা আমার স্বভাব।আমি আমার এই স্বভাবকে প্রায়োরিটি দিতে যেয়ে অনেক বকা শুনেছি। শুধু বকেই ক্ষান্ত হতেন না, তিনি খাবার গুলোকে রীতিমত ইগনোর করতেন।
তিনি আমাকে খুব রাগত স্বরে বলতেন” অপচয় করোনা।নাস্তা হোক আর ভাত হোক, আমাকে শুধু দুটো আইটেম দিবে।
আমি কষ্ট করে ভাইদের পড়িয়েছি।ওরা এখন ভাল চাকরী করছে।আমি চাই ওদের ঢাকায় বাড়ী হোক, গাড়ী হোক সর্বপরি ওরা ভালো থাকুক।
কিন্তু তুমি যা শুরু করেছো। আমার খুব আশংকা হচ্ছে।”
আব্বার সাথে ও তিনি আমার অপচয় নিয়ে অনেক কথা বললেন।
আব্বা আমাকে নানান ধরনের উপদেশ দিলেন।
কিন্তু কোন লাভ হলো না।আমি আমার স্বভাবে অটল। আমি রান্না- বান্নাকে অপচয় মনে করি না। আমার কাছে মনে হয়, নস্ট করে ফেলে দেওয়াটা অপচয়।আপনজনকে ভালবেসে খাওয়ানোটা অপচয় না। যে যাই বলুক, আমি আমাকে চিনি, আমি ব্যলেন্স করে চলতে জানি, তাই কারো কথায় কখনই কস্ট পাই নি। হেসে উড়িয়ে দেই সব কস্টগুলোকে।
যাই হোক, আজ আমার ঢাকাতে বাড়ী হয়েছে, গাড়ী হয়েছে,। ছেলে বুয়েটে ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে, আর মেয়ে ঢাকা র্ভাসিটি থেকে মাস্টার্স করছে , আল্লাহর রহমতে।সবাই দোয়া করবেন।
গত কয়েক দিন আগে ভাসুরের বাসায় সকালের নাস্তা পাঠালাম।স্বভাব মতোই হরেক রকম নাস্তা। রুটি পরটার পাশাপাশি দুধে ভিজানো পিঠাও ছিল।আমার মেয়েটা চাচাকে বসায়ে বসায়ে সব আইটেম খাওয়ালো।তিনি খেয়ে আনন্দের একটা হাসি দিয়ে বললেন “তোর মা একটা একসিলেন্ট মেয়ে, অসম্ভব ভাল মনের গুণী মেয়ে। সে নামাজও পড়ে ভাল রান্নাও করে।তোরা তোর মাকে মুল্যায়ন করিস।”
কথাটা মেয়ের মুখে শুনে আবেগে কখন যেনো চোখের কোনটা আদ্র হয়ে উঠে।
মনে মনে ভাবছি, ভাল কাজের স্বীকৃতি অবশ্যই মেলে, কোন এক সময়ে।শুধু ধৈর্য ধরে সবাইকে ভালবেসে যেতে হবে।
শামীমা রহমান শিমু