ধর্ম ও জীবন

প্রিয়নবির যে অভ্যাসগুলো বিজ্ঞানে প্রমাণিত

ঝিনাইদহের চোখঃ

দেড় হাজার বছর আগের (৫৭০ খ্রিস্টাব্দে) মানবতা বিবর্জিত অন্ধকার যুগে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগমন করেন। শিক্ষাসহ সার্বিক দিক থেকে সভ্যতা ও সামাজিক আচার-আচরণ ছিল চরম অন্ধকারে।

অন্ধকার যুগের সে সময়ে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলোকবির্তকা হয়ে এ পৃথিবীতে আগমন করেন। মানবজাতিকে সঠিক পথের সন্ধান দেন। উন্নত জীবন ব্যবস্থার পথ দেখান।

দেড় হাজার বছর আগের প্রিয়নবির দৈনন্দিন নিয়মিত অভ্যাস-আচরণগুলো বিজ্ঞানেও সঠিক এবং সর্বোত্তম বলে প্রমাণিত। অভ্যাসগুলো হলো-

> ভোরে বিছানা ত্যাগ

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব ভোরে জেগে ওঠতেন। সূর্য ওঠার আগে ফজর নামাজ আদায়ের মাধ্যমে প্রিয়নবি তার দিন শুরু করতেন।

বিজ্ঞানে প্রমাণিত যে, যারা ভোরে ঘুম থেকে ওঠে তাদের উৎপাদনশীল (কর্মস্পৃহা) ক্ষমতা বেড়ে ওঠে এবং তাদের হতাশ হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম।

> খাবার গ্রহণে সংযম

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাবার গ্রহণে পেটকে (পাকস্থলী) ৩ ভাগ করতেন। এক অংশ খাবার, এক অংশ পানি এবং এক অংশ খালি রাখতেন।

এমনভাবে খাবার গ্রহণ করতেন যাতে খাবার গ্রহণের কিছু চাহিদা থেকে যায়। খাবার গ্রহণে সংযম করতে পারলে অনেক জটিল ও কঠিন রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়।

অনেক দিন পরে হলেও বিজ্ঞানে প্রমাণিত যে, অল্প খাবার গ্রহণ রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং সুস্থ থাকার এক কার্যকারী টনিক।
এ কারণেই ডায়াবেটিক ও হার্টের রোগীদের জন্য নির্দেশনা হলো, অল্প পরিমাণে খাবার গ্রহণ করা। সারাদিনে তা হতে পারে ৫ বারেরও অধিক।

> ধীরস্থিরভাবে খাবার গ্রহণ

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধীরে ধীরে খাবার গ্রহণ করতেন। ধীরে ধীরে খাবার গ্রহণ করলে তা সঠিকভাবে হজম হয়। আর সঠিক হজম শাক্তি থাকলে খাবার গ্রহণের যাবতীয় অসুস্থতা থেকে সুস্থ থাকা যায়।

মানুষ কাজই করুক না কেন কিংবা যে কথাই বলুক না কেন, মস্তিক সে কথা ও কাজের সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে সময় নেয় প্রায় ২০ মিনিট। সুতরাং খাবার গ্রহণে তাড়াহুড়ো নয়, ধীরে ধীরে খাবার গ্রহণ করুন। সুস্থ থাকুন।

> এক সঙ্গে খাবার গ্রহণ

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় নসিহত করতেন যে, পবিরারের সব মানুষ যেন এক সঙ্গে খাবার গ্রহণ করে। তিনি বলতেন, ‘এক সঙ্গে খাবার গ্রহণ কর, আলাদা আলাদাভাবে নয়; বরং এক সঙ্গে খাবার গ্রহণ সবার জন্য উপকারী।’ (নাসাঈ)
এখন বিজ্ঞানে প্রমাণিত যে, এক সঙ্গে খাবার গ্রহণে অনকে চাপ থেকে মুক্ত থাকা যায়। খাদ্য সংকট মোকাবেলা করা যায়। খাবারের চাহিদাও পরিপূর্ণ হয়।

> ৩ নিঃশ্বাসে পানি পান

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এক নিঃশ্বাসে পানি পান করিও না। পানি পান কর দুই কিংবা তিন নিঃশ্বাসে।
বিজ্ঞানে প্রমাণিত যে, যদি কেউ এক নিঃশ্বাসে পানি পান করে তবে সে মাথাব্যাথা, মাথা ঘোরানো, রক্ত সঞ্চালনে ভারসাম্যহীনতা হতে পারে।

> ফল খাওয়া

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফল খেতে পছন্দ করতেন। এ কারণেই কুরআন এবং সুন্নাহ মোতাবেক যে ফলগুলো খাওয়া প্রয়োজন তাহলো- খেজুর, ডুমুর, ডালিম, দারুচিনি, আঙ্গুর, জলপাই, কলা।

বিজ্ঞানে প্রমাণিত যে, মানুষের সুস্থাস্থ্যের জন্য ফল খাওয়া হলো অলংকার পরিধানের মতো। যাতে মানুষ সুন্দর ও সবল থাকে।

> উপবাস করা

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের ফরজ রোজা ছাড়াও মাঝে মাঝে রোজা রাখতেন। রোজার মাধ্যমে উপবাস করা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি।

জাপানি বিজ্ঞানীরা মুসলমানদের রোজা পালনের উপবাস সম্পর্কে বলেছেন যে, রোজা মানুষকে সুস্থ রাখতে এবং ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে সুস্থ থাকতে সর্বাধিক সুরক্ষা দেয়।

> নির্ধারিত সময়ে খাবার গ্রহণ

সুস্থ থাকতে নির্ধারিত সময়ে খাবার গ্রহণের বিকল্প নেই। শারীরিক সুস্থতার জন্য নির্ধারিত সময়ে খাবার গ্রহণের অভ্যাস গঠন করা জরুরি। কেননা খাবার গ্রহণের পর তা প্রক্রিয়াকরণের জন্য সময় দেয়া প্রয়োজন। যাতে মানুষের রক্ত ও শক্তি তৈরি হয়। আর তাতে মানুষের কর্মক্ষমতায় ভারসাম্য থাকে।

বিজ্ঞানে প্রমাণিত যে, সময়মতো খাবার গ্রহণ করলে পরিপাক তন্ত্রের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মানুষের কাজের গতি বেড়ে যায়।

> সুস্থ থাকতে ইবাদত

ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে ৩টিই মানুষকে সুস্থ রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ৩টি কাজ হলো- নামাজ, রোজা ও হজ।

নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় মানুষের শারীরিক অসুবিধাগুলো দূর করে দেয়। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার মধ্যমে অজু করে নামাজ আদায় মানুষের জন্য পরিপূর্ণ প্রশান্তি ও বিশ্রাম হয়ে যায়।

এভাবে রোজা ও হজের মাধ্যমেও মানুষ অনেক শারীরিক ও মানসিক উপকারিতা লাভ করে থাকে।

সুতরাং মানুষের উচিত, নিয়মিত উপরের অভ্যাসগুলো নিজেদের মধ্যে পরিচালিত করা। এর মাধ্যমেই মানুষ সুস্থ ও সুন্দর জীবন লাভ করবে। পরবর্তী জীবনও হবে সুন্দর ও সফল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button