মা’কে খুঁশি করতে ঝিনাইদহের বেগবতি নদীর তীরে তপস্যা শুরু করেন সন্যাসি নবাই
মনজুর আলম
মা’কে খুঁশি করতে পারলেই মিলবে মানবতার মুক্তি। আর মাকে সেবা করেই পরম সৃষ্টি কর্তার নৈকট্য লাভ করে ছিলেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বড়বাড়ি গ্রামের নবাই। নবাই ভক্তরা তাকে নবাই সন্যাসি বলেই জানেন। হাজারো নবাই ভক্তের পদচারনায় মুখরিত হয়ে থাকে ভিটেটি। এখানে দুর দুরান্ত ছাড়াও বিদেশি নবাই ভক্তের আগমন ঘটে।
ইতিহাস থেকে জানা গেছে, প্রায় পাঁচশ বছর পুর্বে এ অঞ্চলের রাজ বংশের আদি পুরুষ ছিলেন ভট্টা নারায়ন। তিনি ফরিদপুরের তেলহাটি পরগনার ভবরাসুর গ্রামে বসবাস করতেন। আর এ আঞ্চলের দেখভালের দায়ি্েত্ ছিলেন বিষ্নদাস হাজরা। নবাবের দরবারে বিষœদাস হাজরা চাকুরি করতেন। কাজকর্ম আর বিশ্বস্থের জন্য নবাব তাকে হাজরা পদবি উপাধি দেন। শেষ বয়সে তিনি ধর্মের প্রতি বিশেষ অনুরাগি হন এবং ঝিনাইদহের বেগবতি নদীর তীরে তপস্যা শুরু করেন।
১৫৯০ সালে মোঘল সুবেদার মানসিংহ বঙ্গ বিজযের পর নৌকা যোগে রাজশাহীর রাজমহলে যাচ্ছিলেন। সৈন্যরা পথিমধ্যে রসদ সংগ্রহের জন্য বনে যান এবং তপস্যিকে দেখতে পান। হাজরা দ্রুত তাদেরকে রসদ সংগ্রহ করে দেন। সুবেদার খুশি হয়ে তাকে অত্র এলাকার ৫টি গ্রাম দিয়ে হাজরাহাটি জমিদার ক্রমন্বয়ে নলডাঙ্গারর রাজ্য হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।
১৮৭০ সালে রাজ বংশের ইন্দুু রাজা যক্ষারোগে আক্রান্ত হন। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। সে সময় তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া গ্রামে বসবাসরত রাজা গুরুগোবিন্দ ঘোষালের কনিষ্ট পুত্র রাজা বাহাদুরকে দত্তক হিসাবে গ্রহন করেন। তার মৃত্যুর পর রাজা বাহাদুর প্রথম ভুষন দেবরায় উপাধি নিয়ে সিংহাসন গ্রহন করেন। তিনি ধর্মের প্রতি বিশেষ অনুরাগি ছিলেন। তিনি ঝিনাইদহের বেগবতি নদীর তীরে কয়েটি মন্দির তৈরি করেন। যা আজো কালের স্বাক্ষি বহন করে কোন রকম মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কথিত আছে নবাই ঝিনাদিহ সদর উপজেলার মধুুহাটি ইউনিয়নের বড়বাড়ি গ্রামে বসবাস করলেও এ মন্দিরের গোসাইদের নিকট দিক্ষা নিতেন। তিনি সৃষ্টি কর্তার নৈকট্য লাভ করেন। শেষে তিনি মাকে ভালোবেসে সাথে নিয়ে নিরুদ্দেশ হন।
সরেজমিনে দেখা যাই, প্রতি সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার হাজারো নবাই ভক্তের পদচারনায মুখরিত হয়ে ওঠে নবাই সন্যাসির বসত ভিটেটি। ভক্তরা পরম ভক্তিতে নবাইয়ের নাম মুখে নিচ্ছেন। দর্শনার্থীদেরও উপচে পড়া ভিড়। স্থানটিতে যেন তিল পরিমান ঠাই নেই।
নবাই সন্যাসির ভক্ত পরিমল বিশ্বাস এবং উল্লাসি দাসের নিকট জানতে চাইলে তারা জানান, অনেক দিন আগের কথা এখানে নবাই নামে এক জন বসবাস করতেন। তিনি মায়ের সেবা করেই নৈকট্য লাভ করে ছিলেন। একদিন রাতে তপস্যা শেষে বাড়িতে এসে মায়ের নিকট পানি চান। সে সময় চৈত্র মাস। সে সময় চারদিকে পানির অভাব চলছিল। মা বলেন, তার বয়স হয়েছে। তাই দুর থেকে পানি আনতে পারেনি। তবে কলসে চাউল ধোয়ার পানি আছে এই পানি দিয়ে পা ধোও। নবাই মায়ের কষ্ট আর পানির অভাবে কথা অনুভব করেন। তার হাতের আশা ( বিশেষ লাঠি) নিয়ে বাড়ির চার পাশে ঘুরতে লাগলেন। মা নবাইয়ের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে উত্তর পাশের গ্রামে যাবার জন্য একটা রাস্তা রাখার জন্য জানান। যা আজো সেই রাস্তাটি স্মৃতি বহন করে।
তারা আরো জানান, নবাই পরবর্তিতে মাকে সাথে নিয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে সন্যাসি হন। তিনি যে এখানে বসবাস করতেন ১৮.০২ একর জমিই বিশেষ করে প্রমান করে বলে তারা জানান।
নবাই সন্যাসির দোহার গোসাই শ্রী নৃপেনন্দ্র নাথ জানান, মাকে সেবা করেই নবাই পরম নৈকট্য লাভ করে ছিলেন। মাকে খুঁশি করা বা মায়ের সেবা করা ছাড়া কোন উপায়তো দেখিনা।
নবাই ভিটের পরিচালনা কমিটির সভাপ্রতি বাবু উত্তম কুমার গাঙ্গুলি জানান, সারা বছরই দেশি বিদেশি নবাই ভক্তে আগমন ঘটে। তাছাড়া উন্নয়ন কাজের জন্য নবাই ভক্তদে উপরই নির্ভর হতে হয়। সরকারের একটু সহযোগিতা পেলে আরো উন্নতি করা সম্ভব হত।