বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ কি ঝিনাইদহের শের আলী মিয়া ?
”শরিয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার রাহাপাড়া গ্রামে তারা বসবাস করতেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশরা যখন সৈন্য সংগ্রহ শুরু করে, তখন শের আলী ও তার বড় মামা আমজাদ আলী সরদার যুদ্ধে যাওয়ার জন্য ব্রিটিশ সৈন্যদলে নাম লেখান। সে সময় তারা তাকে একটি সার্টিফিকেটও দেন, যেটি তার ছেলেরা হারিয়ে ফেলেছেন। যুদ্ধের দামামা বেজে উঠলে তার মা-বাবাসহ বাড়ির সবাই কান্নাকাটি শুরু করেন। যুদ্ধে যাওয়া বাধ্যতামুলক করে ব্রিটিশ নেতৃত্বাধীন জোট ফরমান জারি করলে শের আলী মিয়া ও তার বড় মামা তখন যুদ্ধে না গিয়ে পালিয়ে যান ভারতের বনগাঁর কাঠালিয়া গ্রামে। পরবর্তীতে সপরিবারে ভারতে বসবাস শুরু করেন। আনুমানিক ২০/২২ বছর বয়সে তিনি পাশ্ববর্তী ফরিদপুরের নলতা গ্রামের করম আলী খুনকারের মেয়ে আছিয়া খাতুনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রথম পক্ষের এক কন্যা সন্তান হওয়ার পর স্ত্রীর আর কোন সন্তান হবে না জানতে পেরে তিনি একই গ্রামের তমিজ উদ্দীন মাঝির কন্যা রুপভান বেগমকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে ঘরে তোলেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর পক্ষে ৫ ছেলে ও ১ মেয়ে। ১৯৬৮ সালে ছোট স্ত্রী রুপভান ও ১৯৯৯ সালে বড় স্ত্রী আছিয়া খাতুন ইন্তেকাল করেন” জানালেন শের আলী মিয়া।
শের আলী মিয়ার ছোট ভাই আইজুদ্দিন মিয়া জানান, ১৯৪৬ সালে ভারতে পাঞ্জাবে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা শুরু হলে সম্পত্তি বিনিময় করে তিনি ৫ ভাই ও পিতা মাতার সাথে চলে আসেন যশোরের চৌগাছা উপজেলার ভাদড়া গ্রামে। ভাদড়া গ্রামে এসে দেখেন মুসলিমদের নামাজ পড়ার কোন মসজিদ নেই। ১০/১৫ ঘর মানুষের বেশির ভাগ মুসলিম হিন্দু রীতি অনুসরণ করেন। এ সব দেখে তিনি নিজের ইমান আকিদা রক্ষা করতে চলে আসেন ঝিনাইদহের কুলবাড়িয়া গ্রামে। রাস্তাহীন গ্রামে এসে তিনি ও তার ভায়েরা কুড়ে ঘর বেধে বসবাস শুরু করেন। কুলবাড়িয়ার ইয়াকুব আলীর মাধ্যমে জমি কেনেন ৬৫ বিঘা।
শের আলী মিয়ার ছেলে স্কুল শিক্ষক আব্দুল হক জানান, তার পিতার বয়স এখন ১২৫ বছর চলছে। সদর উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামে শের আলী মিয়ার বাড়ি। পিতার নাম মৃত আমির আলী বক্স। মাতা জয়গুন নেছা ওরফে যমুনা বিবি। শের আলী মিয়া ৭ প্রজন্মকে দেখছেন। তার ছেলে ও মেয়ের সন্তানসহ ৯০ জন বংশধর রয়েছে। বর্তমান তার দ্বিতীয় স্ত্রীর পক্ষের ছোট মেয়ে মনোয়ারা বেগমের বয়স ৭০ বছর ও ছোট ছেলে শহিদুল ইসলামের বয়স ৫২ বছর। প্রথম পক্ষের স্ত্রীর বড় মেয়ে আনোয়রা খাতুন জীবিত থাকলে এখন তার বয়স হতো ৮৪ বছর। ২০০৪ সালে ৭৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন আনোয়ারা খাতুন।
শের আলীর ছেলে শহিদুল হকের স্ত্রী রিনিয়া খাতুন জানান, এখনো নিজে ওজু করে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন শের আলী হাওলাদার। জীবনে কোনো অসুখ বিসুখ তাকে স্পর্শ করেনি। জীবন সয়াহ্নে এসেও তিনি এক প্রাণবন্ত মানুষ। চুল দাড়ি অনেকটাই কাঁচা আছে। জ্ঞান, দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি ভালো থাকায় একাই নিজের কাজ নিজে করতে পারেন। তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে তিনিই বিশ্বের সেরা বয়স্ক মানুষ। সে কারনে গিনেস বুকে তার নাম লেখানোর দাবি জানানো হয়েছে।
নাতি ছেলে রাব্বি মিয়া জানানা, শের আলী মিয়াই পৃথিবীর দীর্ঘজীবী পুরুষ মানুষ। শের আলী মিয়া জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৩ সালের জুলাই মাসে। আর বাংলা সান ছিল ১২৯৯ সালের ভাদ্র মাস।
নাতি ছেলে সাব্বির হোসেন জানান, বর্তমান জাপানের ১১২ বছর বয়সী নাগরিক মাসাজো নোনাকা পৃথিবীর সবচাইতে বেশি বয়সী পুরুষ হিসেবে গিনেস বুকে স্থান পেয়েছে।
মেঝো ছেলে আব্দুল হক জানান, পুরোনাম শের আলী মিয়া হাওলাদার। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা তিনি। জাতীয় পরিচয়পত্র মোতাবেক বয়স ১১০ বছর। কিন্তু এই বয়স তার আসল বয়স না। মিডিয়া ও দর্শনাথীদের উটকো ঝামেলা থেকে বাঁচতে তার ছেলেরা পিতার বয়স ১৫ বছর কমিয়ে দিয়েছেন।
বড় ছেলে ফজল মিয়া বলেন, তার পিতা জীবদ্দশায় ৯ বার বাড়ি বদল করেছেন। ভারতের কাঠালিয়া, পাচপোতা, যশোরের ভাদড়া, রহমতপুর, বর্তমান গ্রামের তিন স্থানেসহ ৯টি স্থানে ঘরবাড়ি করেছেন। ঘনঘন বাড়ি পরিবর্তনের কারণে ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া সেনা রিক্রুটের সনদটি হারিয়ে যায় বলে ফজল মিয়া জানান।
মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম জানান, কুলবাড়িয়া গ্রামের শের আলী মিয়া হতে পারে বিশ্বের সবচে প্রবিণতম পুরুষ। তিনি বলেন জাতীয় পরিচয়পত্রে তার বয়স কম দেখানো হয়েছে এটা সত্য। প্রকৃতপক্ষে বৃদ্ধ শের আলীর বয়স অনেক বেশি।