ঝিনাইদহে হাটে-বাজারে রমরমা অবৈধ পেট্রোল ব্যবসা
শাহজাহান আলী বিপাশ
ঝিনাইদহের হাটেবাজারে,রাস্তার পাশে অবৈধ ভাবে অবাধে চলছে দাহ্য পদার্থ পেট্রোলের ব্যবসা। রাস্তার পাশে, টোং দোকানে, চায়ের দোকানে কিংবা মুদির দোকানে পাওয়া যাচ্ছে পেট্রোল। আর এইসব স্থান থেকে পেট্রোল ক্রয় করে ঠকছে ক্রেতারা। এক লিটার পেট্রোল ৮৬টাকার পরিবের্ত তারা বিক্রি করছে ১০০ টাকায়। আবারও অভিযোগে রয়েছে ঐ সকল খুচরা পেট্রোল ব্যবসায়ীরা পেট্রোলের সাথে কেরোসিন মিশিয়ে বিক্রি করছে। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুর্বৃত্তরা এসব স্থান থেকে পেট্রোল কিনে নাশকতাও করতে পারে বলে সাধারণ জনগনের আশংকা। বিষয়টি প্রশাসনের চোখের সামনে ঘটলেও আইন গত কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
বিভিন্ন সুত্রে ও বাজার ঘুরে জানা গেছে ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলায় প্রায় ৫শতাধিক বাজার ও রাস্তার মোড়ে বিক্রি করা হচ্ছে দাহ্য পদার্থ পেট্রোল। সরাসরি খুচরা ব্যবসায়ীরা পেট্রোল পাম্প থেকে পেট্রোল ক্রয় করে বিক্রি করছে। তাদের নেই কোন অনুমোদন। অবৈধ ভাবে বেশি লাভের আশায় তারা এ ব্যবসা করছে। পেট্রোল পাম্প থেকে কোমল পানীর বোতলে কিংবা পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতলে আধা লিটার ও ১ লিটারের বোতলে ভরে তারা এই পদার্থ বিক্রি করছে। পেট্রোল পাম্প থেকে তারা সরকারী দরেই ক্রয় করে নিচ্ছে। আর দোকানে গিয়ে বিক্রি করছে ১০০ টাকা লিটার। সাধারনত পেট্রোল পাম্প থেকে ১০০ টাকায় ১.৬ লিটার পেট্রোল দেওয়া হয়। খুচরা ব্যবসায়ীর কাছে এভাবে খোলাবাজারে পেট্রোল বিক্রির অনুমতি না থাকলেও এগুলো মানছেন না পেট্রোল পাম্পগুলো।
ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা,হলিনাকুন্ডু,সদর,কালীগঞ্জ,কোটচাদপুর ও মহেশপুর উপজেলায় প্রায় ৪০টির মতো পেট্রোল পাম্প রয়েছে। যে গুলো মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের পাশেই অবস্থিত। এছাড়াও কয়েকটি লাইসেন্স ধারী তেল বিক্রির ডিলার রয়েছে। সরকারী পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ডিপোর ডিলারশিপ নিয়ে এসকল পেট্রোল পাম্পগুলো পেট্রোল, ডিজেল ও অকটেন সংগ্রহ করে। এবং নিজের ফিলিং স্টেশনে যানবাহনের চালকদের কাছে মেমো দিয়ে বিক্রি করার কথা। কিন্তু তারা খোলাবাজারে বিক্রির জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে প্রকাশ্য বোতলে ভরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। গত ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে দাহ্য তেল পেট্রোলের অপব্যবহার দেখেছে সাধারণ জনগন। খোলাবাজারে পাওয়া যাওয়ার কারনে সেই সময় দুর্বৃত্তরা ক্রয় করে বিভিন্ন যানবাহনে পেট্রোল ঢেলে নাশকতা করে যান মালের ব্যাপক ক্ষয়
ক্ষতি করেছিলো। খোলবাজারে এসব পেট্রোল পাওয়াই শিশুথেকে বয়স্ক মানুষ যে কেউ চাইলেই পেট্র্রোল ক্রয় করতে পারছে।
সাংবাদিক ও শিক্ষক সাবজাল হোসেন জানান, তিনি নিয়মিত মটরসাইকেল চলাচল করেন। সাধারণত পেট্রোল পাম্প থেকেই পেট্রোল সংগ্রহ করেন। তবে মাঝে মাঝে রাস্তার মাঝে তেল ফুরিয়ে গেলে রাস্তার পাশের বাজার থেকে খোলাবাজার থেকে পেট্রোল ক্রয় করে থাকেন। তিনি বলেন হয়তো কিছুটা উপকার হচ্ছে কিন্তু খোলাবাজারে প্রতি লিটারে ১৪ টাকা বেশি নিচ্ছে এই সকল খুচরা ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, এমনও অভিযোগ আছে পেট্রোলের সাথে খুচরা ব্যবসায়ীরা কেরোসিন ভেজাল দিয়ে বিক্রি করছে।
এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি পেট্রোল পাম্প কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বললে তারা মতামত দিতে রাজি হননি।
ঝিনাইদহের আমতলা বাজারের খুচরা পেট্রোল ব্যবসায়ী আমিনুল জানান, তিনি প্রতিদিন গড়ে ২০লিটার পেট্রোল বিক্রি করেন। বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প থেকে তিনি এই পেট্রোল সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন আমরা তো মানুষের উপকারই করছি। হঠাৎ কারো মটরযানের তেল ফুরিয়ে গেলে গ্রামের রাস্তা কিংবা বাজার থেকে সংগ্রহ করছেন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঝিনাইদহ সহকারী পরিচালক সুচন্দন মন্ডল জানান, আমাদের চোখেও পড়েছে এবং তথ্য পেয়েছি জেলার অনেক বাজারে,রাস্তার পাশে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে দাহ্য পদার্থ পেট্রোল। তিনি বলেন, দাহ্য পদার্থ বিক্রির জন্য লাইসেন্স নিতে হয় কিন্তু অধিকাংশ বিক্রেতাই অবৈধ ভাবে বিক্রি করছে। সুচন্দন মন্ডল আরো জানান, সামনে সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পেট্রোলের অপব্যবহার দেখেছে মানুষ। এবার যেন সেটা না হয় তার জন্য দুই এক দিনের মধ্যে জেলায় অভিযান পরিচালনা করা হবে। বন্ধ করা হবে এসব পেট্রোল বিক্রি।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মী ইসলাম জানান, বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপুর্ন। আমরা এ ব্যাপারে খোজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট সাদেকুর রহমান জানান, বিষয়টি নিয়ে জেলা আইন শৃংখলা মিটিংয়ে আলোচনা করা হবে এবং যাতে অবাধে দাহ্য পদার্থ পেট্রোল যত্রতত্র বিক্রি না হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।