ধর্ম ও জীবন

তওবা কেন মুক্তির উপায়

ঝিনাইদহের চোখ ডেস্ক:

তওবা হচ্ছে কনফেশন। স্বীকারোক্তি। আমার মধ্যে কিছু ভুল, পাপ লুকিয়ে আছে তা কারো কাছে স্বীকার করা। খ্রিস্টানরা যেমন তা করে যাজকের কাছে, হিন্দুরা পুরোহিতের কাছে, মুসলমানরা পীরের কাছে অথবা সরাসরি স্বয়ং আল্লাহর কাছে। কেউ ঈশ্বর বিশ্বাস না করলেও নিজের মানসিক যন্ত্রণা দূর করার জন্য যায় মনোবিজ্ঞানীর কাছে; কাউন্সেলিং করে। কনফেশন মানে একপ্রকার কাউন্সেলিংও। অনেকে খুব বিশ্বস্ত বন্ধুর কাছে হলেও নিজেকে প্রকাশ করে। নিজেকে নগ্ন করে প্রকাশ করার নামই তওবা। নিজেকে নগ্ন করা মানে হচ্ছে নিজের সমস্ত মুখোশগুলো খুলে ফেলে শিশু হয়ে যাওয়া। আরবিতে তওবা শব্দের অর্থ ফিরে আসা। ফিরে আসা মানে নিজের প্রকৃত সত্তার কাছে ফিরে আসা। পাপ থেকে ফিরে আসা। আর আমাদের প্রকৃত সত্তা নিষ্পাপ শিশুত্ব।

তওবা বা কনফেশন বা কাউন্সেলিং শব্দগুলো সাইকোলজিক্যালি একই। মূল ব্যাপারটা হচ্ছে অচেতন স্তর থেকে তাকে চেতন স্তরে নিয়ে আসা। অচেতন মানে আমিও জানতাম না আমার মধ্যে এমন খারাপ কিছু ছিল। অনেক কিছু পাপ বা ভুল আমার নিজের অজান্তেই নিজের ভেতর গোপন ছিল। এখন জানি, এখন আমি সচেতন। সচেতনতা মানেই মুক্তি।

যখন আমার ইদের সাথে ইগোর কনফ্লিক্ট শুরু হয় তখনই মানসিক যন্ত্রণা শুরু হয়। ইদ মানে আদিম প্রবৃত্তি। তা আমার নিজের অজান্তেই হয়ে যায়। লোভ, ঘৃণা, ঈর্ষা, অহংকারবশত আমি নানা ভুল করে ফেলি। তারপর নিজেই পুড়তে থাকি যন্ত্রণার আগুনে। কারণ আমার মধ্যে ইগোও আছে। হাজার বছর ধরে গড়ে তোলা মানুষের সামাজিক মূল্যবোধ। আমার শিক্ষা, আদর্শ আমাকে বারবার শাসায়, তুমি এ রকম কাজ করতে পারো না। তখন আমি দ্বৈতসত্তায় বিভাজিত হয়ে যাই। আমি নিজেও যেন নিজেকে চিনতে পারি না। আমার কাছে শুধু বারবার মনে হয়, আমি এমন একটা কাজ করলাম! আমি তখন কারো কাছে আশ্রয় চাই। যে আমার দোষগুলো ক্ষমাশীল দৃষ্টিতে দেখে আমাকে শুদ্ধ করে তুলবে। আমাকে আমার নিজের প্রকৃত সত্তার কাছে ফিরিয়ে দেবে।

তওবা মানে মানে নিজের কাছেই নিজের অপরাধ স্বীকার করা। তওবা মানে নিজের মুখোমুখি হওয়া। যখন নিজেকে নিজে ক্ষমা করা যায় আল্লাহও তখন ক্ষমা করে দেন। সবচেয়ে কষ্টকর হচ্ছে নিজেকে ক্ষমা করা। এমনকি অন্যকেও সহজে ক্ষমা করা যায়, কিন্তু, নিজেকে যায় না। নিজেকে ক্ষমা করতে পারে না বলেই অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত করে ফেলে। কিন্তু, মুক্তির উপায় অবশ্যই আছে। আর তা হচ্ছে চোখের পানি। চোখের পানি সব ধুয়ে দেয়। একমাত্র চোখের পানিই আমাদের আত্মাকে শুদ্ধ করে তুলতে পারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button