অন্যান্য

৯০-এ ‘মিকি মাউস’

ওয়াল্ট ডিজনি’র বিশ্বখ্যাত চরিত্র ‘মিকি মাউস’ নব্বই বছরে পা দিল। কার্টুনিস্ট অব আইওয়ার্কস-এর সঙ্গে মিলে ‘মিকি মাউস’ চরিত্রের সৃষ্টি করেন প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট ওয়াল্ট ডিজনি। আরেক কার্টুন চরিত্র ‘ওসওয়াল্ড, দা লাকি ব়্যাবিট’-এর স্বত্ব ডিজনি সংস্থা হারিয়ে ফেললে বিকল্প হিসেবে জন্ম নেয় ‘মিকি মাউস’৷ ‘মিকি’ নামটি প্রস্তাব করেন ওয়াল্ট ডিজনি’র স্ত্রী লিলিয়ান।

আট মিনিট দৈর্ঘ্যের সাদা-কালো ছবি ‘স্টিমবোট উইলি’-তে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করে মিকি মাউস, মিনি মাউস ও মিকির শত্রু-চরিত্র ‘পিট’। ১৯২৮ সালে প্রকাশিত এই ছবিটি সেই সময়ের প্রথম শব্দযুক্ত কার্টুন ছিল। এই ছবির হাত ধরেই ডিজনি সাম্রাজ্যের সাফল্যের সূত্রপাত ঘটে।

মজার কথা হলো, ১৯২৮ থেকে ১৯৪৬ সাল অবধি ওয়াল্ট ডিজনি নিজেই মিকি’র জন্য কন্ঠদান করতেন।

‘স্টিমবোট উইলি’ প্রকাশের ছয় মাস আগেই প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল নির্বাক চলচ্চিত্র ‘প্লেন ক্রেজি’৷ কিন্তু প্রযোজকের পছন্দ না হওয়ায় পিছিয়ে পড়ে তার কাজ। পরে ১৯২৯ সালে শব্দযুক্ত কার্টুন হিসেবেই প্রকাশ পায় ছবিটি। অামেরিকা থেকে ইউরোপে একটানা উড়ে যাওয়া কিংবদন্তি পাইলট চার্লস লিন্ডবার্গের চরিত্রে অভিনয় করেও মিকি দর্শক টানতে বিফল হয়।

১৯৩৫ সাল পর্যন্ত মিকি মাউসকে কেবল সাদা-কালোতেই দেখা যেত। ‘দ্য ব্যান্ড কনসার্ট’ ছবি দিয়েই মিকি’র রঙিন ছবির জগতে পদার্পণ। ১৯৩৮ সালের ছবি ‘দ্য ব্রেভ লিটল টেইলার’ রঙিন হওয়া ছাড়াও অন্যান্য প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্যের কারণে নব্বইয়ের দশকের কার্টুনেও প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়।

মিকি, তার প্রেমিকা মিনি ও প্রতিদ্বন্দ্বী পিটের সঙ্গে ১৯৩০ সালে নতুন চরিত্র হিসেবে যোগ দেয় রোভার নামের একটি কুকুর। পরে সেই চরিত্রের নাম বদলে হয় ‘প্লুটো। সবার আগে স্রেফ গন্ধ শুঁকে বিপদ আঁচ করতে পারা প্লুটো সহজেই হয়ে ওঠে মিকির সবচেয়ে কাছের বন্ধু। কিন্তু মজার বিষয়, ডিজনি’র অন্যান্য চরিত্রের মতো প্লুটো কথা বলতে পারে না।

১৯৩৯ সালে এসে দেখা যায়, আরেক ডিজনি চরিত্র ‘ডোনাল্ড ডাক’-এর খ্যাতি ছাপিয়ে যাচ্ছে মিকি মাউসকেও। ফলে মিকিকে নিয়ে একদম ভিন্নধর্মী ফিচার ছবি ‘ফ্যান্টাসিয়া’ তৈরি করেন ওয়াল্ট ডিজনি। পল ডুকাসের সুরে পশ্চিমা ক্লাসিক্যাল সংগীতে সাজানো ছবিটি ১৯৪২ সালে ওয়াল্ট ডিজনিকে এনে দেয় অস্কার পুরস্কার। শুধু তাই নয়, দর্শকদেরও প্রশংসা কুড়োয় এই অ্যানিমেশন ছবিটি।

১৯৯৪ সালে পাকাপাকিভাবে চরিত্রের শেষ ঘোষণা পর্যন্ত মোট ১৩০টি ছবিতে দেখা যায় মিকি মাউসকে। প্রথম কার্টুন চরিত্র হিসেবে হলিউডের বিখ্যাত ‘ওয়াক অব ফেম’-এও রয়েছে তার নামাঙ্কিত স্থান।

১৯৫৪ সালে ডিজনি সাম্রাজ্যের অভাবনীয় সাফল্য তুলে ধরতে গিয়ে ওয়াল্ট বলেছিলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে এর সবকিছুই শুরু হয়েছিল একটি ইঁদুরের হাত ধরে।’

কার্টুন চরিত্র হিসেবে মিকি’র জীবন ১৯৯৪ সালে শেষ হয়ে গেলেও তার প্রভাব বর্তমান জীবনে কমেনি। রাজনৈতিক জগতে আজও মিকি মাউস বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠে, যেমন হয়েছিল ১৯৬৯ সালের প্যারোডি কমিক ‘মিকি মাউস ইন ভিয়েতনাম’-এ। এ ছাড়া প্রাণ পাওয়ার ৯০ বছর পর আজও একাধিক টেলিভিশন সিরিজ, চলচ্চিত্র বা পর্যটনক্ষেত্রে ঘুরে ফিরে আসে মিকি মাউসের স্মৃতি।

সূত্র : ডয়চে ভেলে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button