ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রধান হাট চাঁদনীটি বর্তমানে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। চাঁদনীর অংশ বিশেষ যে কোন মুহুর্তে ভেঙে পড়ে আবারো ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘ঝুকিপূর্ণ ভবন জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ’ মর্মে সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এই ঝুকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে বসেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সমুদয় ছাদটি এখন চরম দুর্বল, বিমগুলোতে ফাটল ধরেছে। ছাদের বিভিন্ন অংশের ঢালাই প্রায়ই খসে পড়ছে।
হাট চাঁদনীটি কালীগঞ্জ শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। চাঁদনীর ব্যবসায়ী অজয় সাহা নিহত হওয়ার পর থেকে ভূক্তভোগী ব্যবসায়ীরা এটি ভেঙে নতুন বহুতল মার্কেট নির্মাণের দাবি করে আসছে। ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ১৯৮৬ সালে কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পৌরসভার আনন্দবাগ গ্রামের মরহুম রফিউদ্দিন আহমেদের চেষ্টায় কালীগঞ্জ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে হাট চাঁদনীটি নির্মাণ করা হয়।
ব্যবসায়ীরা জানায়, চাঁদনীটিতে ১৫৩টি খোলা দোকান আছে। এক একটি দোকানের ৪টি খোপে ৪ জন করে ব্যবসা করেন। কেউ চাল, মুদি, মিষ্টি, পান-সুপারী, কাঁচা তরকারি, আবার কেউবা মাংসের দোকান বসিয়ে ব্যবসা করছেন। চাঁদনীর উপর তলায় কালীগঞ্জ বাজার কমিটির প্রধান কার্যালয়।
তারা আরো জানান, ২০০৭ সাল থেকে চাঁদনীর ছাদের বিভিন্ন স্থানের প্লাষ্টার খসে পড়তে শুরু করে। গত ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে চাঁদনীর পূর্বপাশের ছাদের কার্ণিস ভেঙে মাথার উপর পড়ে ব্যবসায়ী অজয় সাহা (৩৫) মারা যান। এরপর থেকে ব্যবসায়ীরা ভয়ে মাথার ওপর বাঁশের মাচা তৈরি করে ঝুঁকির মধ্যেই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। অন্যদিকে মাছ-মুরগী বাজার ও আটা চাঁদনীর টিনের ছাউনি মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। এ চাঁদনীতে বর্ষা মৌসুমে ব্যবসা করা সম্ভব হয় না।
ভূক্তভোগী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চাঁদনীটি সংস্কার অথবা নতুনভাবে বহুতল মার্কেট নির্মাণে তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য, পৌর মেয়র সহ স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ধর্না দিয়ে আসছেন। ইতিপূর্বে পৌর কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ী প্রতি এক লক্ষ টাকা করে পৌর ফান্ডে জমা দিলে এটি বহুতল মার্কেট করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করা হয়নি। ব্যবসায়ীসহ এলাকাবাসীর দাবী, দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে আবারো বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
কালীগঞ্জ হাট চাঁদনী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, চাঁদনীতে প্রায় ৮১৫ জন ব্যবসায়ী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করছেন। ছাদের বিভিন্ন অংশের প্লাষ্টার ও ঢালাই প্রায়ই খসে পড়ে। বিমগুলোতে ফাটল দেখা দিয়েছে। সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাঁদনীর প্রবেশদ্বারে ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, জনসধারণের প্রবেশ নিষেধ’ সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে গেছেন। কিন্তু আমরা নিরুপায় হয়ে পেটের তাগিদে জীবন হাতে নিয়েই ব্যবসা করছি। বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, খোঁজ খবর নিয়ে পরে বিস্তারিত জানাবো।
স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার বলেন, এটি একটি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রধান হাট চাঁদনী। যেখানে প্রতিদিন ব্যবসায়ী সহ হাজার হাজার ক্রেতা সাধারণের আগমন ঘটে। তিনি জানান, এটি নির্মাণে বড় ধরনের সরকারি বরাদ্দ প্রয়োজন।
এ জন্য তিনি আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন। বরাদ্ধ পেলেই এটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।