নবী-রাসুলের নাম উচ্চারণে সতর্কতা
ঝিনাইদহের চোখ ডেস্ক:
মানুষের মাঝে শ্রেষ্ট মানুষ হচ্ছেন নবী-রাসুলরা। নবীদের মর্যাদা অনেক উঁচুতে। যে মর্যাদা অন্য কারো শাথে তুলনা হতে পারে না। কেন তাদের এতো মর্যাদা? কারণ বিশুদ্ধ হাসীসের বর্ণনামতে তারা মাসুম অপরাধ মুক্ত নিষ্পাপ মানুষ। দুনিয়ার কোনো পঙ্কিলতা আঁধারতা কলুষতা তাদের ছোঁতে পারে না। মনুষ্য স্বভাবে যে নষ্ট দিকগুলো রয়েছে এগুলোও তাদের মাঝে নেই।
আল্লাহ এমন সব মানুষদেরই নবুওয়াতের মর্যাদায় উন্নীত করেছেন যাদের ভিতরে পাপ কর্মের প্রতি যৎসামান্য লালসা ছিল না। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে তারা কিভাবে মানুষদের ইচ্ছা অভিলাষ অভিরুচি বুঝেছেন। এর উত্তর হলো তাদের ভিতরে মনুষ্যস্বভাবে সবগুলো দিক ছিল তবে আমাদের মতো নয়। তাঁরা হচ্ছেন, হেদায়েতের আলোকবর্তিকা; তারা অন্ধকার পৃথিবীকে আলোকিত করেছেন, হৃদয়গুলোর পাশবিকতা দূর করে কোমলতা এনেছেন। তাঁদেরকে ছাড়া শান্তি ও সফলতার কোনো পথ নেই।
নবীদেরকে গালি দেয়া, হেয় প্রতিপন্ন করা, গালমন্দ করা হারাম। যে ব্যক্তি কর্তৃক এমন কিছু সংঘটিত হবে সে মুরতাদ (স্বেচ্ছায় ধর্মত্যাগী) হয়ে যাবে; যেমনিভাবে কেউ আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালি দিলে মুরতাদ হয়ে যায়। কোন মুসলমানের উচিত নয় যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত নবী-রাসুলদের মাঝে কোন পার্থক্য করবে। একজনকে ভালোবাসবে অন্যজনকে গালমন্দ বা গালি দিবে। এমনটাই বলেছে আমাদের পাক কুরআন ‘বলুন- আমরা আল্লাহতেও আমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং ইবরাহিম ইসমাঈল ইসহাক ইয়াকুব ও তাঁর বংশধরগণের প্রতি যা নাযিল হয়েছিল এবং যা মুসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাঁদের রবের পক্ষ থেকে যা প্রদান করা হয়েছিল তাতে ঈমান এনেছি; আমরা তাঁদের কারও মধ্যে কোন তারতম্য করি না। আর আমরা তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণকারী (তথা মুসলিম)। (আলে ইমরান : ৮৪)
অন্য এক আয়াতে আরো স্পষ্ট বলেছেন মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত। ‘..যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আন এবং তাঁর শক্তি যোগাও ও তাঁকে সম্মান কর .. (আল ফাতহ : ৮-৯।) এই আয়াতের ব্যাখ্যাকারীগণ বলেছেন, যেমনিভাবে আমাদের নবীকে সম্মান করার কথা বলা হয়েছে তেমনিভাবে অন্যনবীদের সম্মান করার বিষয়টিও এখানে রয়েছে। নবীদেরকে গালি দেওয়ার ফিকহে হানাফির প্রসিদ্ধ ইমাম ইবনে নুজাইম রহ. বাহরুর রায়েক গ্রন্থে লিখেন, কেউ কোন নবীর উপর কোন দোষারোপ করলে সে কাফের হয়ে যাবে, পৃষ্ঠা ৫/১৩০। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. লিখেন, নবীদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যে ব্যক্তি কোনো একজন নবীকে গালি দিবে ইমামদের সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হলো তাকে মুরতাদ হিসেবে হত্যা করা হবে। যেমনিভাবে কোন নবীকে অস্বীকার করলে ও তিনি যা নিয়ে এসেছেন সেটাকে অস্বীকার করলে যে কেউ মুরতাদ হয়ে যায়। কারণ কারো ঈমান পরিপূর্ণ হবে না যতক্ষণ না সে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর গ্রন্থাবলীর প্রতি ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান না আনবে। (সাফাদিয়্যা ১/২৬২)
সতর্কতার সাথে আমাদের নবীকে যেভাবে সম্মান ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করি, ঠিক সেইভাবে অন্যান্য নবীদের ক্ষেত্রেও কথাবার্তা সাবধান ও সতর্কতার সাথে বলতে হবে। বিষয়টি হালকা বা নরমাল মনে করলে হবে না। এই বিষয়টার সাথে মিশে আছে আমাদের ঈমানের দৌলত। নামাজ রোজা সব করলাম, এদিকে কোন নবী সম্পর্কে এমন কথা বললাম যা নবীর শানের বিরোধী হয়। আল্লাহ পাক আমাদেরকে এই বিষয়ে সর্তকতা অবলম্বন করার তৌফিক দান করুন আমিন।