দাফন সম্পন্ন পুলিশ রিমান্ডে দগ্ধ নিহত ঝিনাইদহের মশিয়ারের
“মাত্র ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার জন্য আতিকুর দারোগা আমার নিরিহ স্বামীকে নির্যাতন করে মেরে গায়ে কম্বল পেঁচিয়ে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে মেরে ফেললো। আমার না বালক দুইটি সন্তানকে এতিম করে দিলো। আমিতো ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম আরও দিতে চেয়েছিলাম। ওদের দেরি সহ্য হয়নি। ওরা টাকার জন্য আমার স্বামীকে না খাইয়ে রেখেছিলো। নির্যাতন করে বেহুস করে রেখেছিলো। হুস ফিরলে আবার আমার কাছে ফোন করিয়ে টাকা পাঠাতে বলেছিলো। আমি চেষ্টা করছিলাম কিন্তু তার আগেই আতিকুর দারোগা আমার স্বামীকে থানার মধ্যেই মেরে ফেললো। টাকার জন্য মানুষ এত নির্মম হতে পারে তা আমার জানা ছিলো না। আইনের লোকরা যদি এমন করে তাহলে আমরা কার কাছে যাব।”
কথাগুলো বিলাপ করতে করতে বলছিলো ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলার হলিধানী গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে নিহত মশিয়ার রহমানের স্ত্রী। ময়না তদন্তসহ সকল আইনি প্রক্রিয় শেষে আজ নিহতের লাশ দাফন করা হলো তার পারিবারিক গোরস্থানে। এলাকার হাজার হাজার লোক নিহতের জানাজায় উপস্থিত থেকে তাকে দাফন সম্পন্ন করে।
জানাজায় উপস্থিত এলাকাবাসি বলে নিহত মশিয়ার নিরিহ মানুষ ছিলো।
উল্যেখ ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী গ্রামের মশিয়ার রহমান (৪০) রোববার (২৫ নভেম্বর) ঢাকার গাজীপুর মেট্রো থানা হাজতে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন। তিনি হলিধানী গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ মিয়ার ভাতিজা।
পারিবারিকভাবে অভিযোগ, গাজিপুর থানার আতিক দারোগা ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা না পেয়ে মশিয়ারকে শারীরিক নির্যাতন করে মেরে মারের চিহ্ন ঢাকতে গায়ে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে। উক্ত টাকা প্রদানের জন্য মশিয়ারের স্ত্রী ও বোন কে বারবার তাগাদা দিচ্ছিল। দিতে দেরি হচ্ছিল বলে তাদেরকে অকথ্যভাষায় গালিগালাজও করেছিলো। এখন ভুল হয়ে গেছে বলে ক্ষতিপুরণ দেওয়ার জন্য লোক মারফত তদবীর করছে এস আই আতিকুর বলে জানায় নিহতের স্ত্রী।
মাইক্রো ড্রাইভার সাধুহাটী গ্রামের আসাদের বাবা জানায়, আতিক দারোগা আমার কাছ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা নেয় এবং আরও ২০ হাজার টাকা দিতে বার বার চাপ দিচ্ছিলো কিন্তু আমি কোনভাবেই টাকার ব্যবস্থা করতে পারিনি তাই দিতে পারিনি। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় আতিক দারোগা একদিন আমার ছেলে আসাদকে দিয়ে ফোনের মাধ্যমে টাকার জন্য বলায় কিন্ত আমি ব্যবস্থা করতে পারি নাই। আমার ছেলে আমাকে বলেছিলো বাবা মশিয়ারকে অন্য ঘরে নিয়ে মেরে বেহুস করে রেখেছে তিন ঘন্টা পর হুস হয়েছে। টাকা না দিলে আমাকেও ঐ ঘরে নিয়ে যাবে বলেছে। তুমি যেভাবেই পারো টাকার ব্যবস্থা কর।
গত বুধবার থেকে পুলিশ রিমান্ডে ছিলেন বলে জানান গাজীপুর মেট্রো থানার এসআই এবং ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান আতিক।
পুলিশের ভাষ্য শনিবার পৌনে ১০টার দিকে তিনি থানার বাথরুমে নিজ শরীরে আগুন দেন।