জমজমের পানি খাদ্য ও রোগমুক্তির উৎস
নবী করিম (সা.) অত্যন্ত মহব্বত ও ভক্তিভরে জমজমের পানি পান করতেন। আর তা দাঁড়িয়ে পান করতেন। এ জন্য জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করা নবী (সা.) এর আমল। এ ব্যাপারে মূল কথা হলোÑ সাধারণ পানি দাঁড়িয়ে পান করা মাকরুহ।
শরিয়তে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করলে মাকরুহ হবে না। মুস্তাহাব হবে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী (সা.) এর কাছে এক মশক জমজমের পানি পেশ করা হলে তিনি দাঁড়িয়ে পান করেন। ইবনে আব্বাস (রা.) এর আরেকটি বর্ণনা হলোÑ নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে উত্তম, উপকারী ও স্বাদযুক্ত পানি হলো জমজমের পানি।’ অন্য একটি হাদিসে এসেছে, নবী (সা.) বলেছেন, যে কোনো উদ্দেশ্য পূরণের নিয়তে জমজমের পানি পান করলে উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যায়। আরোগ্যের জন্য পান করলে আল্লাহ শেফা দেন। পিপাসায় পান করলে পিপাসা নিবারণ ও ক্ষুধা দূর করেন।
জমজম হলো জিবরাইল (আ.) এর কূপ। শিশু ইসমাইলের পিপাসা নিবারণের জন্য জিবরাইল (আ.) এই কূপ খনন করে দেন। ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেনÑ আল্লাহ তায়ালা ইসমাইলের মাতার ওপর রহমত বর্ষণ করুন। তিনি জমজমের পানিকে বাঁধ দিয়ে না আটকালে জমজম একটি বড় নদীতে পরিণত হতো। জমজমের পানি পবিত্র ও বরকতপূর্ণ। এটি বাইতুল্লাহর উঠানেই অবস্থিত। বাইতুল্লাহর দক্ষিণ-পূর্ব কর্নারে আনুমানিক ৫০ ফুট দূরত্বে বিদ্যমান। এর গভীরতা হলো আনুমানিক ২০৭ ফুট।
জমজম আল্লাহ তায়ালার একটি বিশেষ নিয়ামত। হাজার হাজার বছর যাবত উৎসারিত হচ্ছে। এখন বৈদ্যুতিক নলকূপের সাহায্যে পানি উঠিয়ে ব্যবহার করা হয়। জমজমের মতো পরিষ্কার, পবিত্র ও স্বাস্থ্যকর পানি দুনিয়ার আর কোথাও নেই। জমজমের পানি পান করে নবী (সা.) দোয়া করতেনÑ হে আল্লাহ, আপনার কাছে উপকারী ইলম, প্রশস্ত রিজিক ও সব রোগমুক্তি কামনা করছি।
জমজম নিয়ে একটি গবেষণায় জানা গেছে, জমজমের এক ফোঁটা পানি অন্য সাধারণ পানির সঙ্গে মিশ্রণ করলে সব পানিই জমজমের বৈশিষ্ট্য ধারণ করবে। এখন পর্যন্ত জমজম পানির কোনো বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ।
রাসায়নিক ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম সালফেট, সোডিয়াম ক্যালরাইট, ক্যালশিয়াম কার্বনাইট, পটাশিয়াম নাইট্রেন ছাড়াও জিঙ্ক, ক্যালোরিন ইত্যাদিসহ এ ধরনের আরও পদার্থ জমজমের পানিতে কুদরতিভাবে মিশে আছে। যেগুলো মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। পদার্থগুলোর প্রত্যেকটির আলাদা আলাদা বিশেষত্ব আছে। ম্যাগনেশিয়াম সালফেট মানব শরীরের তাপের ভারসাম্য ধরে রাখে। বমি, মাথাব্যথা ইত্যাদির উপশম করে। সোডিয়াম সালফেট শরীরের সন্ধি ও গ্রন্থির বেদনা দূর করে। সোডিয়াম ক্যালরাইট ও ক্যালশিয়াম কার্বনাইট রক্ত ও শ্বাস প্রশ্বাস, ভালো হজমের জন্য কার্যকরী উপকারী পদার্থ। পটাশিয়াম নাইট্রোনাইট থুতু ও লালার জীবাণু ধ্বংস করে এবং রক্ত চলাচল নির্বিঘœ করতে সাহায্য করে। জমজমের পানি ঠান্ডা ও শীতল রাখতে পটাশিয়াম নাইট্রোনাইটের ভূমিকা অপরিসীম।