ঝিনাইদহের আরিফ কী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবে না?
মাহবুব মুরশেদ শাহীন-
দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণকারী মেধাবী এতিম আরিফুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ে চ্যান্স পেয়েও অর্থের অভাবে ভতির অধিকার হতে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে অকালেই ঝরে যাচ্ছে এই মেধাবীর সোনালী ভবিষ্যত।
২০১৮ সালে সরকারি লালন শাহ কলেজ হতে এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্র্তির জন্য লড়তে থাকে উদ্দমী তরুন শিক্ষার্থী আরিফ। সে গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমান বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি ইউনিটে মেধা তালিকায় ৫১তম স্থান অধিকার করে।
একটি প্রথম সারির সাবজেক্টে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করার পরও এতিম এই শিক্ষার্থী মাত্র আঠারো বিশ হাজার টাকার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির অধিকার হতে বঞ্চিত হচ্ছে। আরিফ হরিণাকুণ্ডু পৌরসভার অদূরে গোপীনাথপুর গ্রামের দরিদ্র শফি উদ্দীনের পুত্র।
শফি উদ্দীন এক পুত্র এবং দুই কন্যা রেখে ২০০৬ সালে স্ট্রোকে আক্রন্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যান।
৩য় শ্রেণিতে পড়–য়া একমাত্র পুত্র আরিফ এবং ছোট দুটি মেয়েকে নিয়ে জীবন সংগ্রামের লড়ায়ে নামেন হতভাগ্য বিধবা মা বিউটি খাতুন। ক্যাথা সেলাই, হাঁস-মুরগি পালন, মাঝে মধ্যে স্বজনদের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে তিনটি সন্তানকে বুকে আকড়িয়ে অনাহারে অর্ধহারে জীবন কাটাতে থাকেন তিনি।
শৈশব মেধাবী আরিফ দঃুখীনি মায়ের দুঃখ মোচনের জন্য ছোট বেলা থেকেই বড় হওয়াা স্বপে বিভোর হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় জঠরের জ্বালা নিবারনের সাথে সাথে পড়াশোনা অব্যাহত রাখার জন্য সে অন্যের কৃষি ক্ষেতে শ্রমিকের কাজ করে অর্থ সংগ্রহ করে সামনে এগুতে থাকে। এত কিছু প্রতিবন্ধকতার পরও পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণির ফলাফলে সে মেধার সাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে এসএসসি এবং এইএসসি-ও কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়। মাত্র ৪ শতক ভিটেই একটি পুরাতন টিনের ছাপড়ায় বাঁশের চেগারের বেড়া দিয়ে কোন রকমে তাদের বসবাস। রান্নাঘর এবং ল্যট্রিন উভয়টিতে পলিথিনের ছাউনি দেওয়া। এযেন পল্লী কবির জসিম উদ্দিনের আসমানীদের নব্য সংস্করন।
অশ্র বিগলিত নয়নে আরিফ জানায়, কুরবানির সময় এতিম মিসকিনের শিন্নির ভাগের গোস্তÍ ছাড়া বাজার থেকে গোস কিনে খাওয়া তাদের ভাগ্যে জোটে না। এইচএসসির পরীক্ষার পর মাত্র দুই দিন বাজার থেকে এক পোয়া করে চুনো মাছ আর সামান্য কিছু শবজি কেনা ছাড়া বাজার করা তাদের সম্ভব হয়নি।
কিশোর আরিফ লেখাপড়া শেষ করে বিসিএস এডমিন ক্যাডারে যোগদান করে দেশ সেবার স্বপ্নে বিভোর। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে পড়তে আগ্রহী আরিফের আকাক্সক্ষা এখন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে।
অসহায় বিধবা মায়ের আকুতি, জেলা-উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের দানশীল ব্যক্তি/সংস্থা তার মেধাবী এতিম সন্তানের লেখাপড়া অব্যাহত রাখার জন্য আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের মহতি উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।