ঝিনাইদহ সদরটপ লিড

ঝিনাইদহে জমে উঠেছে পিঠার দোকান

দিনে রোদের প্রখরতা, তাতে যেন রয়েছে এক ধরনের হিমেল পরশ। জানান দিচ্ছে বছর ঘুরে বাংলার প্রকৃতিতে এসেছে শীত। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে হিম ভাবের তীব্রতা আরো বেড়ে যায়। এ কারণে শীতের কাপড়-চাদর, লেপ ও কম্বলের যেমনি কদর বেড়েছে, সেই সাথে কদর বেড়েছে নানা রকম শীতের পিঠারও।

শীত এলেই মনে হয়ে যায় শীতের পিঠার কথা। পিঠা ছাড়া বাঙালীর জীবনে শীত যেন পরিপূর্ণ হয় না। এই শীতের পিঠা নিয়ে বাংলা সাহিত্যে কত গান-কবিতা রচিত হয়েছে। কবি সুফিয়া কামাল ‘পল্লী মায়ের কোল’ কবিতায় গ্রাম বাংলার পৌষ পার্বণে শীতের পিঠা খাওয়ার শাশ্বত রূপ অঙ্কন করেছেন এভাবেই- “পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসি খুশিতে বিষম খেয়ে/ আরো উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে।”

শীতের সকালে কাঁপতে কাঁপতে মায়ের উনুনের পাশে বসে পিঠা খাওয়া গ্রামের অতি পরিচিত দৃশ্য। কিন্তু শীতের পরিচিত এই দৃশ্যটি আর আগের মত ঝিনাইদহে দেখা যায় না। ব্যস্ত নাগরিক জীবনে ঘরে ঘরে পিঠা বানানোর সময় মেলা ভার। সে জন্য বর্তমানে বাইরের দোকান পিঠায় একমাত্র ভরসা। আর সেই কারনেই ঝিনাইদহে বিভিন্ন জায়গায় গড়ে ওঠেছে ভ্রাম্যমান পিঠার দোকান।

শীতের এই পিঠার ব্যবসা করে যেমন সংসারের অভাব দুর করছে অনেকেই। সেই সাথে শহরের অভিজাত গৃহবধূদের মুক্তি দিয়েছে পিঠা তৈরির কষ্ট থেকে।

শীতকালে গ্রাম থেকে শহরের সকল পরিবারেই মাঝে পিঠার চাহিদা থাকে। কিন্তু এ পিঠা তৈরিতে নানা ঝক্কি-ঝামেলা সামলাতে হয়। প্রয়োজন পড়ে নানা উপকরণ। সেই সাথে লাগে অভিজ্ঞতা। সব মিলে অন্যসব খাবারের মত সহজে তৈরি করা যায় না শীতের পিঠা।

তবে কোন ঝামেলা ও অভিজ্ঞতা ছাড়া শীতের পিঠা খাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হল ভ্রাম্যমান পিঠা দোকান। এ সকল দোকান প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে সকাল ৯টা এবং বিকাল ৪টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত রমরমা বেচা-কেনা। এ সমস্ত ভ্রাম্যমান পিঠার দোকানের অধিকাংশ মালিকরাই হলো হতদরিদ্র।

ঝিনাইদহে শহরের পিঠা বিক্রেতা কামাল হোসেনের সাথে আলাপকালে জানা গেলে, শীতের পিঠার ব্যবসাটা লাভ জনক হওয়ায় বছরের এই সময়টায় তিনি পিঠা ব্যবসা করে থাকেন। এই ব্যবসায় তার ৫ জনের সংসারের ফিরেছে সচ্ছালতা।

তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন সকাল ও বিকালে তিনি শহরের পোষ্ট অফিস মোড়ে পিঠার দোকান দেন। তিনি এখানে ভাপা পিঠা বা ধুপি বিক্রয় করেন। চালের গুড়া, খেজুরের পাটালি, নারিকেল ও লবণের মিশ্রিনে তৈরি হয় তার এ পিঠা। প্রতিদিন তিনি ২০ কেজি চাউলের গুড়া, ৮/১০ কেজি খেজুরের পাটালি ও ৬টা নারিকেল ব্যবহার করে থাকেন পিঠা তৈরিতে। তার প্রতিটি পিঠা ৫ টাকা দরে বিক্রয় করা হয়। যা থেকে তার প্রতিদিন লাভ হয় ৫ থেকে ৬ শত টাকা।

কামাল হোসেনের মতো আরো অনেক মৌসুমী পিঠা ব্যবসায়ী রয়েছেন এখানে। এসব দোকানে ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, কুলি পিঠা, পাটি সাপ্টাসহ বিভিন্ন ধরনের বাহারী ও মজাদার পিঠা পাওয়া যায়। যা বিক্রি করে সবার সংসার ভালো ভাবেই চলছে।

হারুন-অর-রশিদ নামে এক জন পিঠা খেতে খেতে বললেন, ব্যস্ততার কারনে বাড়িতে পিঠা খাওয়ার সময় হয়ে ওঠে না, তাই এখানে সেই স্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করছি। শীতের এই পিঠা খেয়ে অন্য রকমের মজা পেয়েছি। সত্যিকার অর্থে যেটা বুঝিয়ে বলা যাবে না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button