২ নারীর মাউন্ট ইয়ানাম জয়ের গল্প
পর্বত মানেই স্বপ্ন। আর সে স্বপ্ন মানেই তার চূড়ায় গিয়ে যেন গোটা পৃথিবীকে দেখা। কিন্তু তা এত সহজ কোথায়। উচ্চতার রাজা বিশাল পর্বতে যেতে চাই মনের টান। আর মনের সাথে সে টান পর্বতের, প্রকৃতির। তাই অনেক ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে ১১ ডিসেম্বর দিনটি বিশেষ কিছু। কারণ দিনটি যে আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস। নানা প্রতিকূলতা আর বাধা উপেক্ষা করে বাংলাদেশের তরুণরা আরোহণ করেছেন বিশ্বের অনেক পর্বত। যেখানে একেবারেই পিছিয়ে নেই নারীরা।
তেমনি উদ্যোমী ২০ জন তরুণ অভিযাত্রীদের নিয়ে এ বছর বাংলাদেশ অ্যাডভেঞ্চার অ্যান্ড ট্যুরিসম সোসাইটি (ব্যাটস) ভারতের ৬১১১ মিটার উচ্চতার মাউন্ট ইয়ানাম পর্বত বিজয়ের মিশন নিয়ে বেরিয়ে পরে।
কিন্তু এই অভিযান কতটা সহজ ছিল? বাংলাদেশ অ্যাডভেঞ্চার অ্যান্ড ট্যুরিসম সোসাইটি (ব্যাটস) এর ফাউন্ডার মেহেদী রাজীব বলেন, এই তরুণ অভিযাত্রীদের নিয়ে এভারেস্টও জয় করা সম্ভব। আর ইয়ানাম জয় দিয়ে তার যাত্রাই শুরু হলো।
কিন্তু পর্বত শোনে কার কথা। তাই পর্বত আরোহণ মানেই তা হলো ভয়, চ্যালেঞ্জ, সাহস ও উদ্যোমের গল্প। আমার ট্রেকিং করার শুরুটা হয়েছিল ২০১৬ সালে। প্রথম ট্রেকিং ছিল সিলেট থেকে কালা পাহাড় আর হামহাম ঝড়না। এরপর বান্দরবান এবং শেষে ইয়ানাম পর্বত। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় প্রায় কোনো শীতের কাপড় ছাড়াই আমাদের রাখা হয়েছিল। এছাড়া পাহাড়ে উঠা নামার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল।
সাধারণত আমাদের সমাজে একজন নারী যেকোনো কাজেই নানা রকম বাধায় পড়েন। আর পাহাড় আরোহণ তো চ্যালেঞ্জের কাজ। যদিও আমার পরিবারের সাহায্য পেয়েছি বলেই আমার পাহাড় জয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। এই অভিযানে ২০ জন অভিযাত্রীর প্রত্যেকেই বিভিন্ন রকম চ্যালেঞ্জের সামনে পড়েছে। আমার ক্ষেত্রেও ভিন্ন কিছু নয়। সামিটের শেষ রাত ২.৩০ মিনিটে আমাদের ইয়ানাম জয়ের যাত্রা শুরু হয়।
উপরে উঠার সময় হঠাৎ বুঝতে পারি কোনো ভাবেই শ্বাস নিতে পারছি না। মনে হচ্ছিল পিছনে ঘুরতেই পড়ে যাব। কিন্তু অন্য সদস্যদের সাহায্যে এবং কিছু চাইনিজ ব্রিদিং এক্সারসাইজ করার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে সামিট শেষ করি।
অভিযাত্রী হিবা শেহরিন: এতো উঁচু পর্বতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা এটাই আমার প্রথম। কিন্তু পাহাড়ের সাথে শুরুটা ২০১৪ থেকেই। ইয়ানাম পর্বত জয়ের এই অর্জন আমাকে শিখিয়েছে আমি আরো অনেক উঁচু পর্বতও জয় করার মানসিক ক্ষমতা রাখি। চ্যালেঞ্জের মধ্যে অন্যতম ছিল পাহাড়ের প্রতিকূল আবহাওয়ায় নিজেকে মানিয়ে নেয়া। তবে সব থেকে বেশি চ্যালেঞ্জ অনুভব করেছি যখন ভেবেছি সবার সাথে সফলভাবে চূড়ায় পৌঁছাতে পারবো তো? তবে পাহাড়কে ভালোবাসতে পারার ক্ষমতাটাই আসলে পাহাড়ে যাওয়ার মানসিক শক্তি তৈরি করে। আর এই মানসিক শক্তিই নিজেকে শারীরিক ভাবে প্রস্তুত করতে সাহায্য করে।
অভিযাত্রী শাহারিয়া সম্পা: পাহাড় আর বরফ আমাকে সব সময়েই একটু বেশি টানে। আর এই সংমিশ্রণের যে সৌন্দর্য তা প্রকাশ করা বেশ কঠিন। ভারতপুর থেকে যখন আমরা ক্যাম্প ১ এর উদ্দেশ্যে অভিযান শুরু করি তখন ছিল সকাল। আমরা সবাই জানতাম যে এই পথে আমাদের পাড় হতে হবে একটি ঝিড়ি অর্থাৎ একটি বরফের খাল। কিন্তু তখনই বিপদ! দেখলাম পানির স্রোত আমাদের চিন্তার থেকে অনেক বেশি। কারণ, সেদিন সূর্যের তাপে বরফ বেশি গলেছে। তাই স্রোতের এই ভয়াল অবস্থা।
এই অবস্থায় আমরা পাথরের উপরই আমাদের ক্যাম্প করি। কিন্তু দিনটি ছিল চ্যালেঞ্জের কারণ একে খোলা জায়গা তার উপর অক্সিজেনের পরিমান ছিল অসম্ভব কম। কিন্তু এমন অনেক বিপদকে নিয়েই আমাদের এই জয়ের অভিযান শেষ হয়।