কালীগঞ্জজানা-অজানাটপ লিডদেখা-অদেখা

কালীগঞ্জে তহমিনার গর্ভের সন্তান বিক্রি করতে হলো না

সাবজাল হোসেন, ষ্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহের চোখ-

অন্তঃসত্ত¡া স্ত্রী তহমিনাকে ফেলে পালিয়েছে স্বামী। নিরুপায় হয়ে বাবার বাড়িতে থাকেন তিনি। বাবা আব্দুল মালেক ৪ বছর ধরে অসুস্থতায় শয্যাশায়ী। দু’বেলা দ’ুমুঠো খেয়ে বেঁচে থাকতে বৃদ্ধা মা শিশুদের কাপড় নিয়ে গ্রাম গ্রাম ঘুরে বিক্রি করেন। এভাবে তিনি যা রোজগার করেন তা দিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটে তাদের। এমন অভাবের সংসারে তহমিনার সিজার করা জরুরী। কিন্ত কাছে একটি টাকাও নেই। বাধ্য হয়ে টাকার জন্য শশুরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তহমিনা। কিন্ত তিনি টাকা দেয়া তো দুরের কথা সন্তান বিক্রির প্রলোভন দেখাচ্ছেন। গর্ভের সন্তান টাকার জন্য বিক্রির কথাটা কোন মায়ের পক্ষেই মেনে নেয়া সম্ভব নয়।

তারপরও টাকার কাজ কথায় হয় না। তাই উপায়ান্তর না পেয়ে সন্তান বিক্রির শশুরের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। কিন্ত গর্ভের সন্তান বলে কথা। বুকের ধন টাকার জন্য আরেকজনকে দিয়ে দিতে হবে। এটা নির্মমতা ভেবেই সন্তান রক্ষায় সন্ধ্যায় কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের মুখাপেক্ষি হন তহমিনা। তার মুখের কষ্টজড়িত কথা শুনে সন্তান রক্ষায় এগিয়ে এসে যাবতীয় ব্যয়ভার বহনের আশ্বাস দেন তারা। পরের দিন চিকিৎসকের পরামর্শানুযায়ী তহমিনার যাবতীয় পরীক্ষার নিরীক্ষার কাজ শেষ করে সোমবার দুপুরে কালীগঞ্জ হাসপাতালে সিজারের ব্যবস্থা করেন। তহমিনা একটি ফুটফুটে চেহারার পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এখন আর সন্তান হারানোর চিন্তা নেই। ঔষধ কেনার টাকার চিন্তাও নেই। তহমিনার বর্তমান ঠিকানা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌর এলাকার আড়পাড়া গ্রামে।

অসহায় তহমিনা খাতুন জানান, ৯ বছর আগে তার বিয়ে হয়েছিলো বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ উপজেলার পাঠামারা গ্রামের রবিউল ইসলামের সাথে। বিয়ের পর রবিউল কালীগঞ্জ শহরের বিভিন্ন হোটেলের বাবুর্চির কাজ করতো। মিম নামে তাদের ৬ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। পরে তহমিনার গর্ভে আরো একটি সন্তান এসেছে। গর্ভের সন্তানের বয়স ২ মাস হলে পাষন্ড স¦ামী রবিউল অন্য এক মেয়ের সাথে সম্পর্ক করে তাকে ফেলে অন্যত্র চলে গেছে। স্ত্রী সন্তানের সাথে কোন যোগাযোগ নেই। এখন একদিকে নিজের অসুস্থ শরীর। আর ঘরে শয্যাশায়ী অসুস্থ বাবা। বৃদ্ধা মায়ের হাড় ভাঙা পরিশ্রম এরমধ্যে আবার সিজারের টাকা জোগাড় করা খুবই অসম্ভব ব্যাপার ছিল। এমন অবস্থায় শশুর বার বার সন্তান বিক্রির নিষ্ঠুর প্রস্তাব দিয়েছে। সামর্থ না থাকায় যে প্রস্তাবে রাজিও হতে হয়েছে। পরে সাংবাদিকদের শরনাপন্ন হয়ে বুকের ধনকে আর অন্যদের হাতে দিতে হলো না। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা নেই।

অসহায় তহমিনার মা আম্বিয়া বেগম জানান, নিজে বৃদ্ধা বয়সে পরিশ্রম করি। কাপড় নিয়ে গ্রাম গ্রাম ঘুরে আমাদের খাবারই জোগাড় করতে পারি না। সেখানে মেয়ের সিজারের খরচ দেয়া সম্ভব ছিল না। এদিকে টাকার জন্য নবজাতককে অন্যের হাতে তুলে দেয়ার নিষ্ঠুর পরিকল্পনা সাংবাদিক বাবারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে রুখে দিয়েছেন। আমি সকলের কাছে চিরঋনী।

কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি জামির হোসেন জানান, প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা অনেক অর্থশালী নয়। তারপরও টাকার জন্য তহমিনা গর্ভের সন্তান বিক্রি করবেন এটা শুনে সাংবাদিকরা সকলেই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। আমাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় ফারিয়াও। তিনি বলেন, আমরা যেটা করেছি সমাজের একজন মানুষ হিসেবে মানুষের জন্য করেছি।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সার্জারী বিভাগের প্রধান ডাক্তার এম এ কাফি জানান, সিজারের পরে মা ও শিশু দ’ুজনই ভালো আছেন। টাকার অভাবে সন্তান বিক্রি করতে চাওয়া মা তহমিনার সিজার আমি নিজ হাতে করতে পেরে ভালো লাগছে। তিনি বলেন, এমন অসহায় মানুষের জন্য স্থানীয় কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিক ভাইদের সহযোগীতা মনে রাখার মত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button