কালীগঞ্জটপ লিড

ঝিনাইদহ চিনিকলের শনির দশা

দক্ষিন বঙ্গের একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের মোবারকগঞ্জ চিনিকল চলতি মাড়াই মৌসুমের শুরু থেকেই গত মৌসুমের মত ব্রেক ডাউনে পড়তে শুরু করেছে।

গত ৭ ডিসেম্বর বিকালে এ মৌসুমের উদ্বোধনের কিছুক্ষণ পরেই কারখানার টারবাইনের সমস্যায় দেখাদিলে মিল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময়ে আখ মাড়াই বন্ধ হয়ে গেলেও ১৬ ঘন্টা পরে আবারও মিলটি চালু করতে সম্ভব হয়। কিন্ত বারবার একই সমস্যা দেখা দেয়ায় আখ মাড়াই ব্যাহত হচ্ছে। একইভাবে গত মাড়াই মৌসুমেও বারবার ব্রেকডাউনে পড়ে আখ মাড়াই ব্যাহত হয়েছিল। সে সময়ে অনেক কৃষকের আখ মিল ইয়ার্ড ও ক্ষেতে শুকিয়ে নষ্ট হয়েছিল। চলতি মাড়াই মৌসুমেও শুরু থেকে আবার এ সমস্যা দেখা দেওয়ায় চিন্তায় পড়েছেন আখচাষীরা।

তারা বলছেন,যান্ত্রিকত্রুটির কারনে সমস্যা হতেই পারে। কিন্ত একবার সমস্যা দেখা দিলে সেটা আবার চালু করতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। আখচাষীরা বলছেন,কারখানার অদক্ষ শ্রমিকদের কারনেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।

তবে মিল কর্তৃপক্ষের দাবি ভিন্ন। তারা বলছেন,অনেক দিন আগের মিল ফলে মিলের যন্ত্রপাতিগুলো অত্যন্ত পুরাতন হয়ে গেছে। সে কারনেই বারবার এমন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

চিনিকলসূত্রে জানাগেছে,১৮৬৫ সালে তৎকালীন নেদারল্যান্ড সরকারের আর্থিক সহযোগীতায় দেশের দক্ষিণাঞ্চালের এ সবচেয়ে ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর থেকে এ এলাকার কৃষকেরা আখ চাষ করে আসছেন। চলতি মাড়াই মৌসুমটি ৫২ তম। প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে মাঠ ভরা আখ চাষ হলেও সাম্প্রতিককালে সময় মত আখের টাকা না পাওয়াসহ নানাবিধ কারনে ক্রমেই আখচাষ কমতে শুরু করেছে। মিলের রেকর্ড অনুযায়ী প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত কয়েকটি মাত্র মাড়াই মৌসুমে লাভের মুখ দেখলেও অধিকাংশ মৌসুমেই লোকসান গুণতে হয়েছে।

অবস্থাটা এমন লাগাতর লোকসানে চিনিকলটি আজ অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে।গত শুক্রবার সকাল ৬ টায় কারখানার টারবাইন মেশিনে ত্রুটি দেখা দেওয়ার পরই মিলটি বন্ধ হয়ে যায়। ৩ দিন পার হয়ে দুপুরে এ রিপোর্ট লেখা পর্ষন্ত এখনও পুনরায় চালু করা সম্ভব হয়নি। কখন চালু করা সম্ভব হবে সেটাও বলতে পারছেনা মিল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে মিল চালু না করা অবধি কৃষকদের নতুন করে জমি থেকে আখ না কাটার জন্য এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। তবে চিনিকলের আওতাধীন ছয়টি সাব-জোনের ৩৮ টি আখ ক্রয় কেন্দ্র,কৃষকের ক্ষেতে এবং মিল ইয়ার্ডে হাজার হাজার মন আখ রোদে শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে।

অপরদিকে মিল হাউজে মাড়াইকৃত লাখ লাখ টাকা মূল্যের আখের রস নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে শুরু থেকেই মিলের লোকসানের ইঙ্গিত জানান দিচ্ছে।একাধিক আখচাষী জানান,গত ৭ ডিসেম্বর উদ্বোধনের মাত্র দুই ঘন্টা পরই যান্ত্রিক ত্রুটিতে বন্ধ হয়ে ১৬ ঘন্টা পর চালু হয়েছিল।

যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে গত ২০১৭-২০১৮ মোৗসুমে ৮৭ দিনে প্রায় তিনশ ঘন্টা বন্ধ ছিল। ফলে গত মৌসুমে যান্ত্রিকত্রুটি আর অনিয়মে মিলের প্রায় ৩৩ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়।চিনিকলের একটি সূত্র জানায়,এখনও পর্যন্ত ১৪ কোটি টাকা মূল্যের আড়াই হাজার মেট্রিক টন চিনি অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে শ্রকিদের বেতন পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমনকি কয়েক মাস পর পর বেতন দেওয়া হলেও ৮ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত টাকা কেটে রাখা হচ্ছে।

আর মিলের নানা অনিয়মের কারনে দিনে দিনে কৃষকরাও আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন।মিলের কারখানা ব্যবস্থাপক শহিদুল হক জানান, মিল হাউজের টারবাইন মেশিনের সমস্যায় মিলটি বন্ধ হয়ে যায়। যে কারনে আখ মড়াই বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, মেরামতের জন্য ইঞ্জিনিয়ারদের ৩ টি গ্রুপ দিনরাত কাজ করছেন। আশা করছেন খুব শীঘ্রই চালু করতে পারবেন।

তিনি বলেন,অনেক দিনের পুরানো এই মিলে যান্ত্রিক ত্রুটি হতেই পারে। আর কোন যন্ত্রপাতি নষ্ট হলেও মিলকর্তৃপক্ষ নতুন যন্ত্র কিনে আনলেও সেটা অনেক সময় সেটিং হচ্ছে না। ফলে এটাও একটা বড় ধরনের সমস্যা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button