মরমী কবি হাসন রাজার জন্মদিন আজ
ঝিনাইদহের চোখঃ
আজ ২১ ডিসেম্বর, ‘মাটির পিঞ্জরার মাঝে বন্দি হইয়ারে কান্দে হাসন রাজার মন মুনিয়ায়রে’; ‘মায়ে বাপে বন্দি কইলা খুশির মাজারে লালে ধলায় হইলাম বন্দি পিঞ্জরার ভিতরে’; ‘কান্দে হাসন রাজার মন মুনিয়ায়রে’ -এমনই অসংখ্য গানের রচয়িতা মরমী কবি এবং বাউল হাসন রাজার ১৬৪তম জন্মদিন।
মরমী এই সাধক ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে সুনামগঞ্জে লক্ষ্মণশ্রী গ্রামের এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী এবং মাতা মোসাম্মৎ হুরমত জান বিবি। হাসন রাজা ছিলেন তাদের দ্বিতীয় পুত্র।
হাসন রাজার পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস ছিল ভারতের উত্তর প্রদেশের অয্যোধ্যায়। বংশ পরম্পরায় তারা হিন্দু ছিলেন। পরবর্তীতে তারা দক্ষিণবঙ্গের যশোর জেলা হয়ে সিলেটে এসে থিতু হন। তার দাদা বীরেন্দ্র চন্দ্র সিংহদেব মতান্তরে বাবু রায় চৌধুরী সিলেটে এসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
হাসন রাজার বয়স যখন মাত্র ১৫ বছর তখন তার বাবা মারা যান। এরপর সংসার ও জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব তার ওপর ন্যস্ত হয়। যৌবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সৌখিন ও ভোগবিলাসী, কিন্তু পরিণত বয়সে সব বিষয়-সম্পত্তি বিলি করে দরবেশ জীবন যাপন করেন। তারই উদ্যোগে সুনামগঞ্জ হাসন এমই স্কুল, অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও আখড়া স্থাপিত হয়। বিদ্যালয়ের অনেক মেধাবী ছাত্রের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও তিনি করতেন।
হাসন রাজা ছিলেন একজন স্বশিক্ষিত ব্যক্তি। তিনি সহজ-সরল সুরে আঞ্চলিক ভাষায় প্রায় এক হাজার আধ্যাত্মিক গান রচনা করেন। এছাড়াও আরবী ও ফার্সি ভাষায় ছিল বিশেষ দক্ষতা। হাসন রাজা যৌবনে ছিলেন ভোগবিলাসী এবং সৌখিন। বিভিন্ন সময় তিনি অনেক নারীর সঙ্গে মেলামেশা করেছেন। প্রতি বছর, বিশেষ করে বর্ষাকালে, নৃত্য-গীতের ব্যবস্থাসহ নৌবিহারে চলে যেতেন এবং বেশ কিছুকাল ভোগ-বিলাসের মধ্যে নিজেকে নিমজ্জিত করে দিতেন। এই ভোগবিলাসের মাঝেও হাসন প্রচুর গান রচনা করেছেন তিনি।
হাসন রাজার স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজারে গড়ে তোলা হয়েছে একটি জাদুঘর, যার নাম মিউজিয়াম অব রাজাস। এখানে দেশ বিদেশের দর্শণার্থীরা হাসন রাজা ও তার পরিবার সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে প্রতিদিন ভিড় করেন। এছাড়াও, সুনামগঞ্জ শহরের তেঘরিয়ায় এলাকায় সুরমা নদীর কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে হাসন রাজার স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি। এ বাড়িটি একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। কালোত্তীর্ণ এ সাধকের ব্যবহৃত কুর্তা, খড়ম, তরবারি, পাগড়ি, ঢাল, থালা, বই ও নিজের হাতের লেখা কবিতা ও গানের পাণ্ডুলিপি আজও বহু দর্শনার্থীকে আবেগাপ্লুত
করে।
মরমী এই সাধক ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। পরে সুনামগঞ্জের লক্ষ্মণশ্রীতে মায়ের কবরের পাশে দফিন করা হয় তাকে। এই কবর তিনি মৃত্যুর আগে নিজেই প্রস্তুত করেছিলেন।