ইসলামে অধীনস্থ ও সেবকদের অধিকার

ঝিনাইদহের চোখঃ ৬০. স্মরণ করো, যখন মুসা তার সঙ্গীকে বলেছিল, দুই সাগরের মিলনস্থলে না পৌঁছে আমি থামব না অথবা যুগ যুগ ধরে চলতে থাকব। [সুরা : কাহফ, আয়াত : ৬০ (তৃতীয় পর্ব)]
তাফসির : আলোচ্য দুই আয়াতে মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ মুসা (আ.)-কে খিজির (আ.)-এর কাছে পাঠিয়েছেন। মুসা (আ.) এক যুবককে সঙ্গে নিয়ে খিজির (আ.)-এর উদ্দেশে রওনা হলেন। ওই যুবক ছিল তাঁর খাদেম বা সেবক। কিন্তু পবিত্র কোরআনে তার জন্য এমন কোনো শব্দ আনা হয়নি, যা অমর্যাদাকর। বরং তাকে যুবক অভিধায় ভূষিত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শিষ্টাচার শেখানো হয়েছে। পৃথিবীর সব মানুষ সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্যে এক হলেও সামাজিক বিভাজন মানুষকে বিভক্ত করে রেখেছে বহু ভাগে। বংশ, বর্ণ, ধর্ম, শ্রেণি, পেশা, বিভক্তির কত যে ধরন, তার হিসাব মেলানো ভার।
দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিত্তবানদের যাবতীয় কায়কারবার আঞ্জাম দেয় দুমুঠো খাবার জোগাড় করার তাগিদে। কাজের ধরনানুসারে তাদের একেকজন একেক অভিধায় পরিচিত। কিন্তু সমাজে তারা কাজের ব্যাটা, কাজের বেটি, চাকর-চাকরানি, আয়া, বুয়া, ঝি ইত্যাদি নামে পরিচিত। অথচ তাদেরও রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। ওই নামগুলো বাদ দিয়ে কখনো কখনো তাদের কাইল্যা, ধইল্যা, বুয়া, বেটি ইত্যাদি ও নামের বিকৃত উচ্চারণে ডাকা হয়। এটি তাদের প্রতি চরম উপহাসের শামিল। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদাররা! কোনো পুরুষ যেন অন্য কোনো পুরুষকে উপহাস না করে। কেননা যাকে উপহাস করা হয়, সে উপহাসকারীর চেয়ে উত্তম হতে পারে। আর কোনো নারী যেন অন্য নারীকে উপহাস না করে। কেননা যাকে উপহাস করা হয়, সে উপহাসকারিণীর চেয়ে উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অন্যকে দোষারোপ কোরো না এবং মন্দ নামে ডেকো না। ঈমান আনার পর কাউকে মন্দ নামে ডাকা অতি মন্দ। যারা (এহেন কাজ থেকে) তাওবা করে না, তারাই জালেম।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১১)
অধীনদের সম্মানের চোখে দেখার পাশাপাশি ইসলাম তাদের খাদ্য, পোশাক, বাসস্থান, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা লাভের অধিকার দিয়েছে। ইসলামের বিধান হলো, বাড়ির অন্য সদস্যের মতো অধীনরাও অভিন্নভাবে জীবন যাপন করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন, ‘তোমরা অধীনস্থ ভৃত্য ও মজুরদের সম্পর্কে সাবধান থাকবে! তোমরা যা খাবে তাদেরও তা-ই খেতে দেবে, আর তোমরা যেমন পোশাক পরিধান করবে, তাদেরও তেমন পোশাক পরতে দেবে।’ (সহিহ বুখারি)
মানবজীবনের নানা রকম প্রয়োজনে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার উদ্ভব। দরিদ্র মানুষরা আর্থিক প্রয়োজনে ধনীদের দ্বারস্থ হয়; কিন্তু ধনীদের জীবনের একটি প্রহরও চলতে পারে না গরিব মানুষের সহযোগিতা ছাড়া। এই যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা, এটিই সামাজিক বন্ধন। আর এ বন্ধন যদি আন্তরিকতা ও মানবিক বোধের দ্বারা সংরক্ষিত হয়, তাহলেই সমাজে শান্তি স্থায়ী রূপ পায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি একজন নারী ও একজন পুরুষ থেকে এবং তোমাদের বিভিন্ন গোত্র ও শ্রেণিতে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পারো। নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত, যে সবচেয়ে বেশি মুত্তাকি। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু জানেন, সব খবর রাখেন।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১৩)