ঝিনাইদহে হারিকেনের আলো এখন শুধুই স্মৃতি !
মনজুর আলম, ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহে এক সময় ছিল সন্ধে হলেই হারিকেন জ¦ালানোর নানা আয়োজন। সলতে ঠিক করে চিমনিটা পরিকার করে পাত্রে কেরোসিন মজুদ আছে কিনা চিশ্চিত করার পালা। কিন্তু বর্তমানে বিদ্যুতের যুগে এমন দৃশ্য আর চোখে পড়েনা। ঐতিহাসিক হারিকেন এখন শুধুই স্মৃতি।
তবে কখন কোন সময় থেকে হারিকেনের প্রচলন ঘটে তা নিশ্চিত করে না জানা গেলেও মোঘল আমলে গ্রামবাংলায় হারিকেনের প্রচলন ছিল। হারিকেন হচ্ছে তেলের মাধ্যমে বদ্ধকাচের পাত্রে আলো জ¦ালাবার বিশেষ ব্যবস্থা। হারিকেনের বাইরে অংশে অর্ধবৃত্তকার কাঁচের অংশ থাকে যাকে বলা হয় চিমনি, যার ভেতরে তেল থাকে। আর তেল শুষে অগ্নি সংযোগের মাধ্যমে আলো জ¦ালাবার জন্য কাপড়ের বিশেষ ব্যবস্থা যাকে বলা হয় সলাকা বা গ্রামের প্রচলিত ভাষায় বলা হয় সলতে। আর সম্পূর্ন হারিকেন বহন করার জন্য বহিরাংশে একটি লোহার দন্ডের তৈরি ধরনী থাকে। আলো কমানো বা বাড়ানোর জন্য নি¤œবহিরাংশে থাকে একটি চাকতি। এই হারিকেন ছিল বাহরি ডিজাইনের। গৃহকর্তা তার সামর্থ অনুযায়ি হারিকেন কিনে ব্যবহার করতেন। বাজারে সাধারনত ছোট আর বড় দুই ধরনের হারিকেন পাওয়া যেত। বর্তমানে বৈদ্যুতিক ছোয়ার কারনে হারিকেনের কদর হারিয়েছে। যেখানে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য প্রতি গৃহের অতি প্রয়োজনীয় হারিকেন আজ বিলুপ্তির পথে।
জানা গেছে, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ‘ডাক হরকরা’ গল্পের নায়ক তার এক হাতে হারিকেন আর অন্য হাতে বল্লম নিয়ে রাতের আধারে কর্ম পালনে ছুঁটে চলার দৃশ্য ফুটে উঠেছে। একটা সময় ছিল বাহারি হারিকেনই ছিল মানুষের অন্ধকার নিবারনের অবলম্বন। কিন্তু কালের বিবর্তে হারিকেনের স্থান দখল করে নিয়েছে বিজ্ঞান প্রযুক্তির বৈদ্যুতিক বাল্ব, সৌরবিদ্যুত, চার্জার লাইট, মোমবাতি আরো অনেক কিছুই। ফলে আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় এই নিদর্শনটিও বিলুপ্তির পথে।
এ বিষয়ে বাজার গোপালপুর গ্রামের প্রবীণ আব্দুর রহমান জানান, এক সময় ছিল গ্রামে সন্ধে হলেই আলো জ¦ালোন জন্য প্রতি বাড়িতে হারিকেন নিয়ে ব্যস্ততার শেষ ছিলনা। গ্রামের লোকজন রাতের পথ চলাচলের জন্য হারিকেনের আলো মিটিমিটি জ¦ালিয়ে পথ চলতো। তিনি আরো জানান, আগের বাংলা সিনেমায় গুলোতে রাতে পথ চলাচলের জন্যও হারিকেনের ব্যবহার দেখা যায়।
ঝিনাইদহ শহরের বয়োবৃদ্ধ রিকশা চালক ইদ্রিস আলি জানান, এক সময় ছিল ভ্যান আর রিক্সার নিচেই রাতের আধারে হারিকেন জ¦ারিয়ে পথ চলা হত। কিন্ত আজ রাতে চলাচল করা ভ্যান আর রিক্সা গুলোকে বিশেষ ভাবে বৈদ্যুতিক আলো জ¦ালিয়ে করতে দেখা যায়।