ধর্ম ও জীবন

কাজা নামাজ নিয়ে বিভ্রান্তি কেন?

ঝিনাইদহের চোখঃ

কাজা নামাজ অবশ্যই পড়তে হবে। নামাজ নির্ধারিত ওয়াক্তের মধ্যে না পড়ে পরে পড়লে তা হয় কাজা নামাজ। কোরআন ও হাদিসে যথা সময়ে ওয়াক্তের নামাজ আদায়ের প্রতি যেমন গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, তেমনি কাজা নামাজ আদায়ের তাগিদ দেয়া হয়েছে। যুগ যুগ ধরে মুহাদ্দিস ও ফকিহরা এ শিক্ষাই দিয়ে গেছেন।মাসআলাটি এত প্রসিদ্ধ যে সাধারণ মুসলমানরাও এ সম্পর্কে অবগত। কিন্তু ইদানিং এ নিয়ে নতুন বিভ্রান্তি শুরু হয়েছে। কেউ কেউ প্রচার শুরু করছেন নতুন নতুন মত। ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দিলে তার কাজা নেই। এমন বক্তব্য প্রচার হয়েছে কোনো এক গণমাধ্যমেও। সঙ্গত কারণেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন মুসলমানরা।

একদিন আমাকে এক বৃদ্ধ বললেন, হুজুর আমাকে আপনি কাজা নামাজ সম্পর্কে কিছু বলুন। আমি যা জানি তা বলতে শুরু করলাম। লোকটি আমাকে বলল, হুজুর থাক! থাক! আর বলতে হবে না। আপনি আমার কাছ থেকে শুনুন। তিনি আমাকে বললেন কাজা বলতে কোনো নামাজই নাই। তখন আমি লোকটির দিকে আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে থাকলাম। আমি তাকে বললাম চাচা এমন কথা আপনি কীভাবে বললেন। তিনি উত্তরে বললেন, আপনাদের মতো হুজুরদের থেকেই তো শুনেছি। আমি তখন চুপ থাকলাম। কারণ, লোকটির মাথায় যা ঢুকেছে, তা বের করতে সময়ের প্রয়োজন। আস্তে আস্তে তাকে বোঝাতে হবে।

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবিরা কীভাবে কাজা নামাজ পড়েছেন তা প্রত্যেক মুসলমানের জানা দরকার। খন্দকের যুদ্ধে শত্রুবাহিনী দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকার কারণে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবিদের কয়েক ওয়াক্ত নামাজ কাজা হয়ে যায়। তারা রাতের বেলায় তা আদায় করেন।

(বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফ)যেখানে শক্তিশালী হাদিস রয়েছে, সাহাবাদের ও তাবেয়ীদের মতামত রয়েছে, তারপরও কীভাবে আমরা এই মাসআলার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি ছড়াই।

আসুন আরো একটি হাদিস জেনে নিই। এক রাতে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবিদের নিয়ে সফর করছিলেন। শেষ রাতে তারা বিশ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা বিরতি করলেন এবং হজরত বেলাল (রা.) কে ফজরের নামাজের জন্য জাগিয়ে দেয়ার দায়িত্ব দিয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়লেন। এদিকে হজরত বেলাল (রা.)ও তন্দ্রাভিভূত হয়ে গেলেন এবং সবার ফজরের নামাজ কাজা হয়ে গেল। ঘুম থেকে জাগার পর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবাইকে নিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করলেন। তারপর তিনি বললেন ‘ঘুম বা বিস্মৃতির কারণে যার নামাজ ছুটে গেল, যখন সে জাগ্রত হবে, তখন যেন তা আদায় করে।

(মুসনাদে আহমদ শরিফ)কাজা নামাজ পড়তে হবে না এ কথার কোনো ভিত্তি নেই। এটা মনগড়া কথার মতো। মনগড়া কথা যেমন কেউ একজন কারো কাছ থেকে কিছু টাকা ঋণ করল, আর সে তাকে ঋণের টাকা ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় দিতে পারল না। পরে আর তাকে ঋণ দিতে রাজি হবে না। এটা যেমন অনর্থক কথা ঠিক তেমনি নামাজ ছুটে গেলে আর পড়তে হবে না। এটাও মনগড়া মাসআলা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button