রোহিঙ্গাদের কারও বাড়ী ঝিনাইদহে?
ঝিনাইদহের চোখঃ
সৌদি সরকার সে দেশ থেকে ১৩ জন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে দলটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। গতকাল মঙ্গলবার দিনভর জিজ্ঞাসাবাদকরা হয়েছে। এখন তাদের বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তরকরার প্রস্তুতি চলছে।
যে ১৩ জন গতকাল ঢাকায় এসে পৌঁছান তাঁদের সবাই পুরুষ। তাঁদের নাম ওমর ফারুক, মোসালিম, মোআরিফ, আবদুল মজিদ, খাজা মাঈনুদ্দীন, হাসিবুররহমান, নাজিম বিল্লাহ, জামাল হোসেন, শামসুলআলম, আমানউল্লাহ, বকুল, মিজানুর রহমান ও মোমিয়া।
তাঁরা নিজেদের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, বগুড়া, জয়পপুরহাট, পাবনা, ঝিনাইদহ, মাদারীপুরেরবাসিন্দা হিসেবেঘোষণা দিয়ে পাসপোর্ট করেছে।
তাদের প্রত্যেকেই ওমরাহবা হজের জন্য তিন মাসেরভিসা নিয়েছিলেন। নির্দিষ্ট সময় পরও দেশে ফিরে না যাওয়ায় সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন এবং জেদ্দার সুমাইসিকারাগারে ছিলেন।
পুলিশ সদর দপ্তরেরসহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেলরানা প্রথম আলোকে বলেন, সৌদি আরব থেকে ফিরে আসা ওই ১৩ ব্যক্তি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে তারা মিয়ানমারের নাগরিক। বাংলাদেশিপাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব গিয়েছিল। অবৈধভাবে পাসপোর্ট করা ও আইন না মানার কারণে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দপ্তরেরঅপর একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, বাংলাদেশিপাসপোর্টধারী ওই রোহিঙ্গা নাগরিকেরা শুধু কক্সবাজার বা চট্টগ্রাম নয়, দেশের উত্তরাঞ্চলীয় কয়েকটি জেলার স্থায়ী বাসিন্দা পরিচয়েও পাসপোর্ট করেছেন। পাসপোর্ট করতে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন এবং অনুমোদনের আগে পুলিশ পাসপোর্ট পেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের সব তথ্য যাচাই-বাছাই করে থাকে। কাদের সহযোগিতায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেলেন, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে আরও যারাজড়িত তাদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
গত ৬ জানুয়ারি মিডল ইস্ট আই অনলাইন সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গাদের ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে এমন একটি খবর প্রকাশ করে। ফেরত পাঠানোর আগে রোহিঙ্গা নাগরিকেরা গোপনে ভিডিও ও অডিও রেকর্ড করেন এবং সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে শেয়ার করেন। সেখানে একজন ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, তিনি পাঁচ/ছয় বছর ধরে সৌদি আরবে এবং তাঁকে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। প্রত্যাবাসনের আগে তাঁদের হাতে হাতকড়া ছিল। অপর এক ব্যক্তি একটি অডিও ক্লিপে উল্লেখ করেন, তিনি রোহিঙ্গা-বাংলাদেশি নন। তারপরও তাঁকে এমন একটি দেশে পাঠানো হচ্ছে যেটি তাঁরদেশ নয়। প্রত্যাবাসনের আগে রাত ১২ টার দিকে হঠাৎ কারা কর্তৃপক্ষ এসে তাঁদের গোছগাছ করে নিতে বলেন।
যে ১৩ জন ফিরে এসেছেন তাঁদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেছে বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, তাদের কারও কাছেই চুক্তিপত্র নেই। তারা সাময়িক ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে গিয়ে অবৈধ হয়ে যায়। অপর একটি সূত্র জানায়, ফিরে আসা রোহিঙ্গাদের একজনের চট্টগ্রাম শহরে বাড়ি রয়েছে। সাধারণত তাঁরা কক্সবাজার বা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বললেও, এই রোহিঙ্গারা বেশ ভালোবাংলায় কথা বলেন। বাংলাদেশিদের সঙ্গে চেহারার মিল থাকায় তাঁদের আলাদা করাও কঠিন।
সূত্র- প্রথম অালো