ঝিনাইদহের ৪ গ্রামের সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ, নিরাপত্তাহীনতায় হাজারো মানুষ
মো: মিজানুর রহমান, ঝিনাইদহের চোখঃ
মাত্র ৮ ফুট চওড়া সেতু, যার উপর দিয়ে চলাচল করে পথচারী ও যানবাহন। দীর্ঘদিন এই সেতুটির দুই পাশের রেলিং ভেঙ্গে পড়ে আছে। রেলিং নির্মানে ব্যবহার হওয়া রড়গুলোও চোরেরা কেটে নিয়ে গেছে। আর এই রেলিং ছাড়া সেতুতে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দূর্ঘটনা। কিন্তু সংষ্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। এই অবস্থা ঝিনাইদহের পোড়াহাটি-বারইখালী সড়কের নবগঙ্গা নদীর উপর নির্মিত সেতুটির।
স্থানিয়রা বলছেন, বিষয়টি তারা স্থানিয় এলজিইডি বিভাগকে অবহিত করেছেন, কিন্তু কোনো ফল হয়। এখন এই সেতুটির উপর দিয়ে চলাচল করতে তাদের ভয় হয়। তারপরও উপায় না পেয়ে চলাচল করছেন।
খোজনিয়ে জানাগেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বারইখালী, ইস্তেকাপুর, আড়ুয়াডাঙ্গা ও বাস্তেপুর নামের চারটি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ দীর্ঘদিন বাঁশের সাকো ব্যবহার করতেন। বারইখালী গ্রামের শেষে নবগঙ্গা নদীতে এই সাকো বসিয়ে ঝিনাইদহ শহরে যাতায়াত করতেন। তাদের এই অবস্থা দেখে এবং এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০০২-০৩ অর্থ বছরে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ এই স্থানে ৩৯ মিটার লম্বা একটি সেতু নির্মান করেন। ২০০৩ সালের ৩০ জানুয়ারি সেতুটির উদ্বোধন করা হয়। এরপর থেকে ওই এলাকার মানুষগুলো সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করছেন।
বারইখালী গ্রামের সলিম উদ্দিন লষ্কার জানান, গত ৩ থেকে ৪ বছর হলো সেতুর রেলিং ভাংতে শুরু করে। প্রথমে একপাশের রেলিং ভেঙ্গে পড়ে। এর কয়েক মাসের মধ্যে আরেক পাশের রেলিংও ভেঙ্গে যায়। মাঝে মধ্যে দুই একটা পিলার দাড়িয়ে থাকলেও গত ২ বছর হলো যার একটিও আর নেই। এমনকি দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারনে রেলিং নির্মান করতে যে রড় ব্যবহার করা হয়েছিল সেগুলোও চোরেরা কেটে নিয়ে গেছে। এখন দেখলে খুব একটা বোঝার উপায় নেই এই সেতুতে কখনও রেলিং ছিল।
ওই গ্রামের আরেক বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা জানান, সেতুর উপর রেলিং না থাকায় তাদের খুবই ঝুকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। এই সেতুটি ব্যবহার না করলে ঝিনাইদহ শহরে আসতে তাদের আরো তিন কিলোমিটার ঘুরতে হয়। যে কারনে ঝুকি হলেও তারা এই সেতুই ব্যবহার করেন। তিনি জানান, রেলিং না থাকায় ভ্যান-রিক্সা সেতুর উপর উঠতে চান না। যারা ঝুকি নিয়ে ওঠেন, তাদেরও মাঝে মধ্যে নিচে পড়ে যাবার ঘটনা রয়েছে। তিনি আরো জানান, কয়েকদিন হলো দুইটা ইট বহনকারী নসিমন গাড়ি ওসতুর উপর উঠে নিচে পড়েছে। এতে ২ চালকই কমবেশি আহত হয়েছেন। তিনি জানান, সেতুটি মাত্র ৮ ফুট চওড়া করে নির্মান করা। যে কারনে সেতুর উপর একটা ভ্যানগাড়ি থাকলে পাশ দিয়ে কোনো পথচারী যেতে পারে না। অথচ রেলিং থাকলে দুইটি ভ্যানগাড়িও পাশাপাশি যাওয়া সম্ভব।
স্থানিয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান জানান, এই ভাঙ্গা সেতুর বিষয়ে তারা উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরে ইতিপূর্বে একাধিকবার জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ না হওয়ায় ধর্ণা দেওয়া বন্ধ করেছেন। তিনি বলেন, সাধারন মানুষের যান-মালের রক্ষায় দ্রুত এই সেতুটির রেলিং মেরামত করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ৈ ঝিনাইদহ সদর উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, সড়কটি গ্রাম্য সড়ক। সেই সময়ে এলাকার মানুষের প্রয়োজনে সেতুটি নির্মান হলেও এখন গ্রাম্য সড়কের সংষ্কার কাজে বাজেট পাওয়া কষ্টকর। যে কারনে তারা ইচ্ছা থাকলেও এটা মেরাতম করতে পারছেন না। তবে সেতুটি খুবই ঝুকিপূর্ণ এবং দেখলে তার কষ্ট হয় বলে জানান। তিনি আরো জানান, বাসুদেবপুর ও ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাসড়কের সংযোগ স্থাপন করেছে এই সেতুটি।