কা’বা ঘর : মিলন ও হেদায়াতের কেন্দ্রস্থল (প্রথম পর্ব)
ঝিনাইদহের চোখঃ
পবিত্র কা’বা ঘরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সমগ্র মানব জাতির এক মহা মিলনকেন্দ্র করে তৈরি করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ বলেন, “আর (স্মরণ করো) যখন আমি কা’বা ঘরকে মানব জাতির মিলনকেন্দ্র ও নিরাপত্তাস্থল করেছিলাম। আর (বললাম) তোমরা মাকামে ইব্রাহীমকে নামাজের জায়গা নির্ধারণ করে নাও। এবং আমি ইব্রাহীম ও ইসমাঈল (আঃ) থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম, তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী ও ই’তেকাফকারী এবং রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রেখো।” (সূরা বাকারা : ১২৫)
আয়াতটি অবতীর্ণের কারণ-
সহীহ্ বুখারীতে আনাস ইবন মালিক রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, উমার ইবন খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “তিনটি বিষয়ে আমি আমার রবের আনুকূল্য পেয়েছি,অথবা বললেন, তিনটি বিষয়ে আমার রব আমাকে আনুকূল্য করেছেন।” অর্থাৎ আল্লাহ্ যা চেয়েছিলেন তাই তার (উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু) মুখ দিয়ে বের হয়েছিল।
উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “আমি বললাম যে, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি আমরা মাকামে ইব্রাহীমকে সালাতের স্থান করে নিতাম! তখন এই আয়াতটি (সূরা বাকারা : ১২৫) অবতীর্ণ হয়।”
পবিত্র কা’বা সম্পর্কে উল্লেখিত আল্লাহর এ বাণীর সত্যতা ও যথার্থতা যুগে যুগে প্রমাণিত। ইসলাম পূর্ব অন্ধকার যুগেও কা’বা ঘর ছিল সংঘাতমুক্ত। তৎকালীন আরবে নীতি-নৈতিকতার চরম অবক্ষয়, সংঘাত, হানাহানি সত্ত্বেও কা’বা ঘর ছিল এসব থেকে মুক্ত।
সূরা আল আনকাবুতের ৬৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা এ বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে এরশাদ করেন- “তারা কি দেখে না, আমি ‘হারামকে’ নিরাপদ স্থান করেছি, অথচ এর চতুস্পার্শ্বে যেসব মানুষ রয়েছে, তাদের উপর হামলা করা হচ্ছে। তাহলে কি তারা মিথ্যার প্রতিই বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?” (সূরা আনকাবুত ৬৭)
মক্কার হেরেম হারাম হওয়া প্রসঙ্গে হাদীসে এসেছে, ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন বলেছিলেন, “এখন আর হিজরত নেই। তবে জিহাদ ও নিয়তের ধারা অব্যাহত আছে। সুতরাং যখন তোমাদেরকে জিহাদের জন্যে বের হতে বলা হবে তখন বের হয়ে পড়বে।”
মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুনরায় বলেন, “আল্লাহ তা‘আলা এ শহরকে সেদিন থেকেই মহিমান্বিত করেছেন, যে দিন তিনি আকাশ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। এটা আল্লাহ কর্তৃক সম্মানিত হওয়ায় কিয়ামত পর্যন্ত সম্মানিত থাকবে। এটা এমন এক শহর যাতে আমার পূর্বেও কোনো ব্যক্তির জন্যে যুদ্ধ বিগ্রহ বৈধ ছিল না। আর আমার জন্যেও একদিনের কিছু সময় ব্যতীত হালাল নয়। এটা আল্লাহ্ কর্তৃক সম্মানিত হওয়ার কারণেই সম্মানিত। এ শহরের কাঁটাযুক্ত গাছও কাটা যাবে না। তাতে কোনো শিকার তাড়ানো যাবে না। এর মাটিতে পড়ে থাকা কোনো জিনিস কেউ ওঠাতে পারবে না ঘোষনাকারী ব্যতীত। আর তার ঘাসও কাটা যাবে না।”
বর্ণনাকারী বলেন, এমন সময় (আমার পিতা) আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ইযখির ব্যতীত (ইযখির এক প্রকার ঘাস) কেননা, এটা তো কর্মকারদের জন্যে এবং ঘরের ছাদের জন্যে নিতান্তই প্রয়োজন।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আচ্ছা, ইযখির ব্যতীত। (বুখারী ও মুসলীম হাদীস নং ২২১২)
(চলবে…)
লেখক : শাইখ শফিকুল ইসলাম, ইসলামিক লেখক ও গবেষক, সাবেক প্রিন্সিপাল মারকাজ আবু বাকর সিদ্দীক(রাঃ) কিশোরগঞ্জ।