কা’বা ঘর : মিলন ও হেদায়াতের কেন্দ্রস্থল (শেষ পর্ব)
ঝিনাইদহের চোখঃ
কা’বা শরিফের অবস্থান পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে। আল্লাহ তার ইবাদাতের জন্য এ ঘর তৈরির নির্দেশ দেন। ফেরেশতারা আল্লাহর হুকুম পালন করে কা’বা ঘর তৈরি করে এবং তারা সর্বপ্রথম এ পবিত্র ঘর তাওয়াফ করে।
পবিত্র কুরআন মাজিদে এ সম্পর্কে আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ করেছেন, “নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানবজাতির জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তা ঐ ঘর যা মক্কায় অবস্থিত, এটি বরকতময় এবং সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য পথপ্রদর্শক কেন্দ্রস্থল। তার মধ্যে প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহ বিদ্যমান রয়েছে, মাকামে ইব্রাহীম উক্ত নিদর্শনসমূহের অন্যতম, আর যে এতে প্রবেশ করে সে নিরাপত্তা প্রাপ্ত হয় এবং আল্লাহর উদ্দেশে এ ঘরের হজ করা সেসব মানুষের কর্তব্য যারা সেখান পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য রাখে, এবং যদি কেউ অস্বীকার করে তাহলে (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সৃষ্টিকুলের মুখাপেক্ষী নন। (সূরা আলে ইমরান : ২৬,২৭)
সমগ্র আরবের ধারাবাহিক ইতিহাস ও ঐকমত্য ভিত্তিক বর্ণনায় প্রমাণিত যে, কা’বাঘর ইব্রাহীম আলইহিস সালাম, স্বীয় পুত্র ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে সঙ্গে নিয়ে আল্লাহর নির্দেশে পুনঃনির্মাণ করেন। ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম, মূসা আলাইহিস সালাম থেকে প্রায় নয় শত বছর পূর্বে অতিক্রান্ত হয়ে গেছেন।
সুতরাং কা’বার অগ্রবর্তীতা এমন প্রমাণিত সত্য যে, এতে কোনো প্রকার প্রশ্নের অবকাশ নেই। অর্থাৎ এ ঘরে এমন কিছু সুষ্পষ্ট নিদর্শন পাওয়া যায় যাতে প্রমাণিত হয় যে, এ ঘর আল্লাহর নিকট গৃহিত হয়েছে এবং আল্লাহ্ তা’আলা একে নিজের ঘর হিসেবে মনোনীত করেছেন। ঊষর মরুভূমিতে ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। অতপর আল্লাহ তা’আলা এর আশেপাশে বসবাসকারীদের রিযিকের উত্তম ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
আড়াই হাজার বছর পর্যন্ত জাহিলিয়াতের কারণে সমগ্র আরব ভূমিতে চরম অশান্তি ও নিরাপত্তাহীনতা বিরাজমান ছিল। এরপরও কা’বা ও তার চারপাশের কিছু এলাকায় নিরাপত্তা ও শান্তি বিরাজমান ছিল। কা’বার এমনই বরকত ছিল যে, তার চারপাশে বসবাসকারী অধীবাসীদের সুস্বাদু ফল দ্বারা রিযিকের উত্তম ব্যবস্থা কিয়ামত পর্যন্ত করে দিয়েছেন। বছরের চারটি মাসের জন্য কা’বার বদৌলতে সমগ্র আরবে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হত।
কুরআন মাজিদ অবতীর্ণের মাত্র অর্ধ শতাব্দী পূর্বেও সবাই দেখেছে যে, আবরাহার সেনাবাহিনী কা’বা ঘর ধ্বংসের লক্ষ্যে মক্কায় আক্রমণ করতে গিয়ে কীভাবে আল্লাহর গজবে পড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ঘটনা তখনকার শিশু-কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ সকলে অবগত ছিল এবং এ আয়াত নাযিল হওয়ার সময়েও এ ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছে এমন লোক জীবিত ছিল। জাহিলিয়াতের অন্ধকার যুগেও এ কা’বা ঘরের এমন পরস্পরের ওপর হাত ওঠাবার দুঃসাহস দেখাতো না।
ফলে কা’বা ইসলামপূর্ব যুগেও বরবর মানুষের নিকট যেমন সম্মানিত ছিল আজও বিশ্বমানবজাতীর হেদায়াতের কেন্দ্র মর্যাদা হিসেবে আছে যে, রক্ত পিপাসু শত্রুও একে অপরকে কা’বার এলাকায় দেখেও হিসেবে সমন্বত রয়েছে ও থাকবে।
যে ব্যক্তি কা’বাতে যেদিন সিয়াম শুরু হয়, সেদিন সিয়াম শুরু করলো, কা’বাতে যে দিন জুম’আ হয়, সে দিন জুম’আ আদায় করলো, কা’বাতে যে দিন হজ হয়, সে দিন হজ আদায় করলো, কা’বাতে যেই পদ্ধতিতে নামাজ হয়, সেই পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করলো- সে অবশ্যই হেদায়াত লাভ করবে।
পবিত্র কা’বা তথা মক্কা ও মাদীনা মর্যদাগত দিক থেকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম স্থান। সুতরাং, এ দু’স্থানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন প্রতিটি মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। কা’বাঘরের মহামিলন সমগ্র মুসলীম উম্মাহর শক্তির উৎস হোক। আমিন!
লেখক : শাইখ শফিকুল ইসলাম, ইসলামিক লেখক ও গবেষক, সাবেক প্রিন্সিপাল মারকাজ আবু বাকর সিদ্দীক(রাঃ) কিশোরগঞ্জ।