আল্লাহ কি নিরাকার (শেষ পর্ব)

ঝিনাইদহের চোখঃ
৮। আল্লাহর চোখ-
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, কোন চোখই তাঁকে দেখতে পায় না, অথচ তিনি সব চোখ দেখতে পান, তিনি সূক্ষ্মদর্শী এবং সবকিছু সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখেন। (সূরা আন আম- ১০৩)
আল্লাহ তাআলা অন্যত্রে বলেন, (হে নবী) তুমি তোমার মালিকের সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত ধৈর্যধারণ করো, তুমি অবশ্যই আমার চোখের সামনে আছ। (সূরা আত তূর- ৪৮)
রাসূল (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অন্ধ নন। সাবধান! নিশ্চয়ই দাজ্জালের ডান চোখ অন্ধ। তার চোখটা যেন একটি ফুলে যাওয়া আঙুরের মত। (সহীহ বুখারী, হা- ৩৪৩৯)
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাঃ বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভু অন্ধ নয়, তাঁর দু‘চোখ আছে। (সহীহ বুখারী, হা- ৪১৪১)
৯। আল্লাহর মুখমন্ডল-
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা যেদিকেই মুখ ফিরাবে সেইদিকেই তো আল্লাহ তাআলার মুখমন্ডল রয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বব্যাপি জ্ঞানী। (সূরা বাকারা- ১১৫)
আল্লাহ তাআলা অনত্রে বলেন, প্রতিটিই বস্তুই ধ্বংস হয়ে যাবে। শুধু মহান সত্ত্বার মুখমন্ডল ব্যতীত, হুকুম, ফয়সালা তাঁরই এবং তোমাদের সবাইকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। (সূরা কাসাস- ৮৮)
আলী রাঃ বলেন, রাসূল (সা.) শয্যা গ্রহনের সময় বলতেন “আল্লাহুম্মা ইন্নী আ-উযু বিকা বি-ওয়ায-হিকাল কারীম” অর্থ – হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি তোমার সম্মানীত মুখমন্ডলের মাধ্যমে আশ্রয় চাই। (আবু দাউদ, হাঃ- ৫০৫২, শামেলা)
১০। আল্লাহার হাসি ও আনন্দ-
আল্লাহ তাআলার হাসি সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা তার দু‘বান্দার কর্ম দেখে হাসেন। এদের একজন অপরজনকে হত্যা করে। অবশেষে তারা উভয়ে জান্নাতে প্রবেশ করে। একজন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে নিহত হয়। অতঃপর হত্যাকারী তাওবা করে। এরপর সে শাহাদাত বরণ করে। (সহীহ বুখারী,হা- ২৮২৬)
রাসূল (সা.) বলেন, বান্দা যখন তাওবা করে, আল্লাহ ঐ ব্যক্তির চেয়েও বেশি আনন্দিত হন যে ব্যক্তি মরুভূমিতে নিজ সাওয়ারীর উপর আরোহিত ছিল। আর সাওয়ারীটি তার কাছে থেকে হারিয়ে গেল। আর সেই সাওয়ারীতে ছিল তার খাদ্য ও পানীয়। এরপর সে নিরাশ হয়ে একটি গাছের ছায়ার নিচে বিশ্রাম করে এবং তার সাওয়ারী সম্পর্কে নিরাশ হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় হঠাৎ সাওয়ারীটি তার সামনে এসে দাঁড়ায়, অমনি সে তার সাওয়ারীর লাগাম ধরে ফেলে। তার সে অত্যাধিক আনন্দের কারণে বলে উঠে, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা, আমি তোমার রব। অত্যাধিক আনন্দের কারণে সে ভূল করে ফেলেছে। (সহীহ মুসলিম, হাঃ-৬৮৫৩)
১১। আল্লাহর ভালবাসা ও ঘৃণা-
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে । আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৩৫)
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, আর তোমারা তাদের মত হয়ো না, যারা বলে আমরা শুনেছি অথচ তারা শুনে না, নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট নিকৃষ্টতম বিচরণশীল প্রাণী হচ্ছে বধির ও বোবা, যারা বুঝেনা। (সূরা আন ফাল – ২১/২২)
১২। আল্লাহার ক্রোধ ও প্রতিশোধ-
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে পবিত্রগুলো খাও এবং এতে সীমালঙ্ঘন কর না। সীমালঙ্ঘন করলে তোমাদের উপর আমার ক্রোধ আপতিত হবে। আর যার উপর আমার ক্রোধ আপতিত হবে, সে অবশ্যই ধ্বংস হয়। (সূরা ত্বোহা- ৮১)
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি, আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, চরম প্রতিশোধ গ্রহনকারী। (সূরা আলে ইমরান- ৪)
১৩। আল্লাহার দর্শন-
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, সেদিন কিছু সংখ্যাক মানুষের চেহারা উজ্জ্বল আলোয় ভরে উঠবে, এ ভাগ্যবান ব্যক্তিরা তাদের প্রভুর দিকে তাকিয়ে থাকবে। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ২২/২৩)
আবু হুরাইরা আঃ বলেন, সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল (সা.) কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের প্রভুকে দেখতে পাব? রাসূল (সা.) বলেন, পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখতে কি তোমাদের কষ্ট হয়? তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রসূল, না। তারপর রাসূল (সা.) আবার বললেন, মেঘহীন আকাশের সূর্য দেখতে কি তোমাদের কষ্ট হয়? তারা বললেন, না। অতপর রাসূল (সা.) বললেন, অবশ্যই তোমরা তোমাদের প্রভুকে (পূর্ণিমা রাতে চাঁদ ও মেঘহীন আকাশেল সূর্যের ন্যায়) দেখতে পাবে। (সহীহ বুখারী, হা- ১৬১০)
ইমাম আ‘যম আবু হানীফা (রাঃ) এর ফতোওয়া- ইমাম আ’যম আবু হানীফা রঃ বলেন, আল্লাহর হাত, মুখমন্ডল ও নফস রয়েছে। যেমনভাবে পবিত্র কুর’আনে আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কারো সাথে সেগুলোর কোন সাদৃশ্য নেই। আর একথা বলা যাবে না যে, তাঁর কুদরতি হাত বা নেয়ামতি হাত। কেননা এতে আল্লাহর গুণকে বাতিল সাব্যস্ত করা হয়। আর এটা কাদরিয়া ও মু‘তাজিলাদের মত। ( ফিকহুল আকবার -৫৮/৫৯ ও ৩০২ পৃষ্ঠার)
লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতীব, দুপ্তারা, কুমারপাড়া, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।