জিলহজের তের দিনের গুরুত্ব

ঝিনাইদহের চোখঃ
পরম করুনাময় মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। দৈনিন্দন ইবাদত ছাড়া ও ইবাদতের বিশেষ মৌসুম নির্ধারিত করেছেন। বছরের কিছু দিনকে কিছু দিনের উপর প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তাতে কিছু ইবাদত নির্দিষ্ট করে অনেক নেকি দানে ওয়াদা করেছেন। আর তা শুধু আমাদের স্বার্থেই।
এমন একটি ইবাদতের মৌসুম জিলহজের তের দিন।
১। জিলহজের প্রথক দশ দিন-
আল্লাহ তাআলা বলেন, শপথ ঊষার, শপথ দশ রাতের। (সূরা ফাজর- ১/২)
আল্লাহ তাআলা এই দিনগুলির শপথ করেছেন। আর কোন জিনিসের নামে শপথ করা তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্মেরির প্রমাণ।
মহানবী (সা.) বলেছেন, জিলহজের মাসের প্রথম দশ দিন ছাড়া এমন কোন দিন নেই, যে দিনের নেক আমল আল্লার নিকট অধিক পছন্দনীয়। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রসূল! অন্যান্য দিনে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাও নয়? তিনি বলেলন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাও নয় । তবে হ্যাঁ, সেই ব্যক্তির আমল ঐদিন গুলির আমলের চেয়েও শ্রেষ্ঠতর হবে যে ব্যক্তি নিজের জীবন ও সম্পদ নিয়ে বের হয়ে আর কিছুই নিয়ে সে ফিরে আসে নাই। (সহীহ মুসলিম হা- ৯১৬/৯৬৯)
এই দিন গুলিতে অধিক তাসবীহ্, তাহ্মীদ ও তাকবীর পড়তে আদেশ রয়েছে। সুতরাং ঐ দিন গুলিতে মৌলিক ইবাদতসমূহ একত্রিত হয়েছে। মেমন, নামায, রোযা, সাদাকাহ্ এবং হজ। যা অন্যান্য দিন গুলিতে এইভাবে জমা হয় না। আর তার জন্যই ঐ দশ দিন সারা বছরের সর্বত্তোম দিন। অবশ্য রমযানের শেষ দশকের ফযিলত ও কম নয়। যেহেতু তাতে রয়েছে লাইলাতুর কাদর, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম রঃ বলেন, জিলহজের প্রথম দশ দিন বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন আর রমযানের শেষ দশকের রাত গুলি বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ রাত। (ফাতহুল কাদীর)
অতএব, সেই দিন গুলির বরকত হাসিলের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া আবশ্যক।
ক) বিশুদ্ধ অন্তরে তাওবা করা এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসা।
খ) এই সুবর্ণ সুযোগের সদ্ব্যবহার করার দৃঢ় সংকল্প হওয়া।
গ) জিলহজের চাঁদ দেখা গেলে এবং কুরবানী দেওয়ার নিয়ত থাকলে নখ, চুল ইত্যাদি কাটা হতে বিরত থাকা।
নবী (সা.) বলেন, যখন তোমরা জিলহজ মাসের চাঁদ দেখবে এবং তোমাদের মধ্যে কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করবে, তখন সে যেন কুরবানী না করা পর্যন্ত তার চুল ও নখ কাটা হতে বিরত থাকে।
অন্য এক বর্ণনায় নবী (সা.) বলেন, সে যেন তার মরা বা ফাটা চর্মাদির কিছুই না কাটে। (সহীহ মুসলিম, হা- ১৯৭৭)
যে ব্যক্তি নিজের ও পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী করার ইচ্ছা করেছে কেবল সেই ব্যক্তিই এই নিষেধের আওতায় পড়বে। পক্ষান্তরে যে, স্ত্রী সন্তানের পক্ষ থেকে কুরবানী করা হবে তারা এই নিষেধের আওতায় পড়বে না। এই নিষেধের পিছনে যুক্তি এই যে, কুরবানী দাতার কিছু আমল হজে ইহরাম বাধার মুহরিমের মতোই।
যেমন, কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা ইত্যাদি। তাই কুরবানী দাতাও মুহরিমের পালনীয় কিঞ্চিত কর্তব্য পালনে আদিষ্ট হয়েছে।
২। বেশি বেশি জিকির করা-
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, যাতে ওরা নির্দিষ্ট জানা দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে। (সূরা হজ- ২৮)
অধিকাংশ আলেমের মতে, উক্ত আয়াতে ‘‘জানা দিন গুলো” বলতে জিলহজের প্রথম দশদিন বলা হয়েছে।
ইবনে উমরা ও আবু হুরাইরা রাঃ এই দশ দিন বাজারে বের হতেন এবং উচ্চস্বরে তাকবীর পড়তেন। আর লোকেরাও তাদের তাকবীর সাথে তাকবীর পাঠ করত। (বুখারী, ফাতহুল বারী- ২/৫৩১)
বরকতময় দিনগুলোতে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকালে-বিকালে, রাতে-ভোরে, মসজিদে-বাড়িতে, পথে-গাড়িতে কর্মস্থলে-নির্জনে আল্লাহর জিকির পাঠ করতে হবে।
৩। নফল রোযা রাখা-
নবী (সা.) বলেন, আরাফার দিনের রোযা বিগত ও পরবর্তী এক বছরের (গুনাহ মোচনকারী) কাফফারা হয়ে যাবে। (সহীহ মুসলিম, হা- ১৪৬০)
৪। আরাফার দিনে ফযিলত-
নবী (সা.) বলেন, আরাফাহ্, কুরবানী ও তাশরীকের (১০,১১,১২,১৩) দিনসমূহ আহলে ইসলাম, আমাদের ঈদ। আর তা হলো পান- ভোজনের দিন। (আবু দাউদ,হা- ২৪১৯, তিরমিযী, হা- ৭৭৩)
নবী (সা.) বলেন, আরাফাহ দিন ছাড়া এমন কোন দিন নেই যাতে আল্লাহ তাআলা অনেক অনেক বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেন। (সহীহ মুসলিম, হাঃ- ১৩৪৮)
তাই এই দিনগুলোতে বেশি বেশি দু‘আ করা দান-খয়রাত প্রভৃতি নেক আমল করা আব্যশক।
লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতীব, দুপ্তারা, কুমারপাড়া, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।