ধর্ম ও জীবন

ইবরাহীম ও ইসমাঈল আঃ এর জন্ম বৃত্তান্ত-

ঝিনাইদহের চোখঃ

পারস্য উপসাগর হতে আনুমানিক ১০০ মাইল দূরে ঐতিহাসিক নদী দজলা ও ফুরাতের তীরবর্তী নিন্ম অববাহিকা অঞ্চলের একটি জনপদ, যার প্রাক্তন নাম ব্যাবিলন এবং বর্তমান নাম ইরাক। ঐ ব্যাবিলনের একটি জন পদের নাম ছিল “উর”। সেই জনপদে জন্মগ্রহন করেন ইবরাহীম আঃ। এই শূন্য উদ্যানের যারা আবিস্কারক তারা ছিলেন সে যুগে পৃথিবীর সবচেয়ে সভ্য ও শিক্ষিত জাতি “কালদানী” বা চ্যালডিস জাতি। তারা সবাই চাঁদ, সূর্য, তারকা ও প্রতিমার পুজারী মুশরিক ছিল।

বহুত্তবাদিতা ও নাশিকতার পরিবেশে প্রতিপালিত হয়ে যখন জ্ঞান চক্ষু উম্মাল হল এবং মহান মহিমাময়ের কল্পনাতীত মহিমায় তিনি উদ্ধার পেয়ে যখন উপলব্ধি করলেন যে, পিতা ও তার আত্মীয় স্বজনসহ সমস্ত দেশবাসী তাঁর তাওহীদের বাণী কবুল করতে কোনো মতেই রাজি নয়, তখন তিনি সবকিছুকে আল্লার রাহে কুরবানি করে স্বীয় বিবি সারাহ ও তাঁর মতানুসারী ভাইপো লুত আঃ কে সঙ্গে নিয়ে ইরাক ত্যাগ করে সিরিয়ার দিকে হিজরত করেন। কেউ কেউ বলেন ঐ হিজরতের সময় তাঁর বয়স ছিল ৭৫ বছর। পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি হিজরত করে নিজ মাতৃভুমি ত্যাগ করেন। (ফাতহুল রায়ান-৭/১৫৩)

ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, যখন তিনি সিরিয়ায় হিজরত করেন, তখন তিনি এই দূ’আ করেন, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি সু-পুত্র দান করুন (ফাতহুল বায়ান- ৮/৬৮, সূরা সাফফাত- ৩৭/১০০)

যখন ইসমাঈল আঃ জন্ম গ্রহণ করেন তখন ইবরাহীম আঃ এর বয়স ছিল ৮৬ বছর। (তাফসীর ইবেন কাসীর-৪/১৫)

ইসমাঈল যখন দৌড়-ঝাঁপ করতে শিখল এবং ১৩ বছর বয়সে পদার্পন করল তখন ইবরাহীম আঃ কে স্বপ্নে নির্দেশ দেয়া হল, তুমি তোমার কলিজার টুকরা ইসমাইলকে আল্লাহর পথে কুরবানি কর (ফাতহুল বায়ান-৮/৬৯)

মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, তারপর সে যখন তার পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল তখন ইবরাহীম আঃ বললেন, হে বৎস আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ্ করছি, এখন তুমি বল, তোমার মত কী? সে বলল, হে আমার পিতা! আপনাকে যে আদেশ দেওয়া হয়েছে তা পূর্ণ করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন। (সূরা সাফফাত- ৩৭/১০২)

কাতাদাহ রাঃ বলেন, ছেলেটি জীবনের মালিক আল্লাহর সামনে তার জীবনের তোহফা পেশ করলেন এবং তাঁর পিতা নিজ কলিজা ছিড়ে আল্লাহর সামনে রেখে দিলেন। (তাফসীরে কাবীর ০৭/১৫৩ ফাতহুল বাযান- ৮/৭১)

এবার শুরু হল আসল ইতিহাস রচনা। একদিকে জনমানবহীন মক্কা শহর, অন্যদিকে ধু ধু বালির মধ্যে খাঁ খাঁ করছে মিনা প্রান্তর, আর তার মাঝে একজন ৯৯ বছরের বৃদ্ধ পিতা এবং তাঁর ছুরির তলায় রয়েছে ১৩ বছরের সুন্দর এক তরুণ। এক অচিন্তনীয় পরিস্থিতিতে বিশ্বজগতে সবাই যখন হতভম্ব এবং হতবাক ও শ্বাসরুদ্ধ, তখন মহান আল্লাহ তাআলা জান্নাত থেকে জিবরীল আঃ এর মাধ্যমে একটি দুম্বা পাঠিয়ে দিলেন এবং ইসমাইলকে বাঁচিয়ে নিয়ে সে দুম্বাটিকে তাঁর দ্বারা জবেহ করিয়ে নিলেন।

ইবনে আবী হাতিম ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্নণা করেছেন যে, এটা সেই দুম্বা যেটা আদম আঃ এর ছেলে হাবীল আল্লাহর দরবারে কুরবানি করেছিল এবং সেটা কবুল ও হয়েছিল। তখন থেকে ওটা জান্নাতে চরতে থাকে। পরিশেষে ওর দ্বারা আল্লাহ তাআলা ইসমাঈলকে বাঁচিয়ে নেন। (তাফসীর ইবনে কাসীর-৪/১৭, তাফসীর কাবীর-৭/১৫৪, ফাতহুল বয়ান-৮/৭২)

জন্মের দিন থেকে জীবনের ৯৯টি বছর ধরে একটার পর একটা পরীক্ষা করে যখন আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম আঃ এর প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, তখন তাঁর রোমাঞ্চকর চিত্তহারী ও বিপ্লব সৃষ্টিাকারী কীর্তিকে কিয়ামত পর্যন্ত অক্ষয় করার এ ঘোষণা দিলেন।

“আমি তার জন্য এ বিষয়টি (কুরবানি) ভবিষ্যত বংশধরদের মধ্যে কায়েম রাখলাম। সালাম বর্ষিত হোক ইবরাহীমের উপর।” ( সূরা সাফফাত- ১০৮/১০৯)

অতপর আল্লাহর ঘোষনা অনুযায়ী তখন থেকে চলে আসছে এই ইবরাহীম আদর্শের বাস্তবায়ন।

লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতীব, দুপ্তারা, কুমারপাড়া, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button