হযরত নূহ আলাইহিস সালামের জীবনী (শেষ পর্ব)

ঝিনাইদহের চোখঃ
(গত পর্বের পর)
৫। দাওয়াতের ফলশ্রুতি-
আল্লাহ তাআলা নূহ আঃ কে ৯৫০ বছরে সুদীর্ঘ জীবন দান করেছিলেন, তিনি এক পুরুষ হতে দ্বিতীয় তৃতীয় পুরুষকে শুধু এ আশায় দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছিলেন যে, তারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। শতাব্দির পর শতাব্দির অক্লান্তভাবে দাওয়াত দেওয়ার পরও তার স্বজাতি ঈমান আনেনি।
মূলত এই সময় তার স্বজাতি জনবল ও অর্থবলে বিশ্বে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। সংখ্যাধিক্যের কারণে ইরাকের ভূখন্ডের আবাস সংকুলান হচ্ছিল না। আল্লাহর চিরন্তন নীতি এই যে, তিনি অবাধ্য জাতিকে সাময়িক ভাবে অবকাশ দেন। (সূরা বাকারা- ১৫)
৬। বদ দু’আ-
এই সুদীর্ঘ দাওয়াতি জিন্দেগিতে তিনি যেমন কখনো চেষ্টায় ক্ষান্ত হননি, তেমনি কখনো নিরাশও হননি। স্বজাতির পক্ষ হতে নানাবিধ নির্যাতানের সম্মুখিন হয়েও ধৈর্যধারণ করেন। তাদের অহংকার ও অত্যচার চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল এবং পাপ ষোলকলায় পূর্ণ হয়েগিয়েছিল। ফলে নূহ আঃ বললেন-
ক) হে আমার পালনকর্তা! আমাকে সাহায্য কর। কেননা ওরা আমাকে মিথ্যবাদী সাব্যস্ত করেছে। (সূরা মুমিন-২৬)
খ) তুমি আমার ও তাদের মাঝে চূড়ান্ত ফায়সালা করে দাও এবং আমাকে ও আমার সাথী মুমিনদেরকে তুমি মুক্ত কর। (সূরা শুআরা- ১১৮)
গ) আমি অপারগ হয়ে গেছি। এক্ষণে তুমি ওদের ওপর প্রতিশোধ নাও। (সূরা ক্বামার-১০)
ঘ) হে আমার প্রভু! পৃথিবীতে একটি কাফের গৃহবাসীকেও তুমি ছেড়ে দিওনা। যদি তুমি ওদের রেহাই দাও তাহলে ওরা তোমার সৎ বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করবে এবং ওরা পাপাচারী ও কাফের ব্যতীত কোনো সন্তান জন্ম দিবে না। (সূরা নূহ ২৬-২৭)
৭। জাহাজ নির্মাণ-
নূহ আঃ কে যখন জাহাজ তৈরীর নির্দেশ দেওয়া হয় তখন তিনি জাহাজ চিনতেন না, তৈরী করতেও জানতেন না। আর সে কারণেই তাঁকে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিলেন, ‘তুমি আমার চোখের সামনে জাহাজ তৈরী কর আমার ওহী অনুসারে।’ (সূরা হুদ- ৩৭)
এভাবে সরাসরি অহীর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা নূহ আঃ এর হাতে জাহাজ শিল্পের গোড়া পত্তন করেন। যুগে যুগে উন্নত সাধিত হয়েছে, আজ আধুনিক বিশ^ সভ্যতা যার উপরে দাড়িয়ে আছে।
৮। চুলা ও তুফান-
আল্লাহ তাআলা বলেন, অবশেষে যখন আমার আদেশ আসল এবং চুলা উথলে উঠল। (সূরা হুদ- ৪০)
ইরাকের মুছেল নগরীতে অবস্থিত নূহ আঃ এর পারিবারিক চুলা থেকে পানি উথলে বের হয়। এটি ছিল মহা প্লাবনের প্রাথমিক আলামত। (তাফসীর কুরতুবী)
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তখন আমি আকাশ সমূহের দুয়ার খুলে দিলাম প্রবল বারিপাতের মাধ্যমে এবং আমি ভূমি থেকে প্রবাহিত করলাম ঝর্ণা সমূহকে। অতঃপর উভয় পানি মিলিত হল পূর্ব নির্ধারিত (ডুবিয়ে মারার) কাজে। (সূরা ক্বামার- ১১/১২)
৯। পরিত্রান ও মুক্তি-
১০ রযব মাসের শুরু হওয়া এই মহা প্লাবনের সমাপ্তি ঘটে, ইরাকের মুছেল নগরীর উত্তরে ‘‘ইবনে ওমর” দ্বীপের অদূরে আর্মেনিয়া সীমান্তে অবস্থিত যুদি পবর্ত মালায়, ১০ মহাররাম তারিখে জাহাজটি মাটি স্পর্শ করার মাধ্যমে। (নবীদের কাহিনী-১ম খন্ড,৭০ পৃঃ)