অকাল গর্ভপাত ও ভূমিষ্ট মৃত সন্তানের জন্য করণীয় কী?
![](https://i0.wp.com/jhc24.com/wp-content/uploads/2019/01/1103412-31.jpg?resize=730%2C450&ssl=1)
ঝিনাইদহের চোখঃ
চার মাস পূর্ণ হওয়ার পর যদি গর্ভস্থ সন্তান পড়ে যায় অর্থাৎ গর্ভপাত হয়, আট মাসের পর বা নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে বা পরে মৃত সন্তান জন্ম নেয়, তবে তাকে গোসল দেওয়া, কাফন পরানো ও দাফন করা ওয়াজিব। কেননা চার মাস পূর্ণ হলে প্রত্যেক ভ্রনে রূহ ফুঁকে দেওয়া হয়। যেমন- ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মানুষ! তোমার সৃষ্টি প্রক্রিয়া লক্ষ্য কর, আমি মানুষকে মাটির মূল উপাদান থেকে সৃষ্টি করেছি। অতপর তাকে আমি শুক্রকিট হিসেবে একটি সংরক্ষিত জায়গায় সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য রেখে দিয়েছি (চল্লিশ দিন)। এরপর এই শুক্র বিন্দুকে আমি এক ফোটা জমাট রক্তে (চল্লিশ দিন) পরিণত করি। অতপর এই জমাট রক্তকে (চল্লিশ দিন) মাংস পিন্ডে পরিণত করি। কিছুদিন পর এই পিন্ডকে অস্থিপাজরে পরিণত করি। তারপর একসময় (চল্লিশ দিন) এই অস্থিপাজরকে মাংসের পোশাক পরিয়ে দেই। অতপর বানানো প্রক্রিয়া শেষ করে আমি তাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি সৃষ্টি তথা পূর্ণাঙ্গ মানুষরূপে সৃষ্টি করি।’ (সূরা আল মুমিনুন : ১২-১৪)
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ. বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি সত্যবাদী এবং সত্যায়িত; তোমাদের কারো সৃষ্টি তার মাতৃগর্ভে প্রথম চল্লিশ দিন বীর্য আকারে সঞ্চিত থাকে। পরবর্তী চল্লিশ দিন ইহা জমাট রক্তে পরিণত হয়ে জরায়ুর দেওয়ালে ঝুলে থাকে। এরপর আরও চল্লিশ দিন পর তা মাংসপিন্ডে রূপান্তরিত হয়। অতপর আল্লাহ তাআলা একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন, সে তাতে রূহ ফুঁকে দেয়। এতে একশ বিশ দিন অর্থাৎ চার মাস পূর্ণ হয়। (সুনানে আহমদ হা- ২৬/১৭০১)
সে যদি এই সময়ে মাতৃগর্ভ থেকে পড়ে যায়, তবে তাকে গোসল দিতে হবে, কাফন পরাতে হবে এবং জানাযা পড়াতে হবে। আর সে মানুষের সাথে কিয়ামতের দিন পূণঃরুত্থিত হবে। কেননা- মুগীরা ইবনে শু’বা রাঃ. বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আরোহী ব্যক্তি লাশের পিছে পিছে যাবে আর পায়ে হাঁটা ব্যক্তি যেদিক দিয়ে ইচ্ছে যাবে এবং শিশুর জানাযাও আদায় করতে হবে।’ (সুনানে তিরমিযী হাঃ-৫২/১০৩১)
মুআ’য ইবনে জাবাল রাঃ. বলেন, নাবী (সা.) বলেন, ‘সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ। গর্ভপাত হওয়া সন্তানের মাতা তাতে নেকীর আশা করলে ঐ সন্তান তার নাভিরুজ্জ দ্বারা তাকে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হা-১৬০৯)
আলী রাঃ বলেন, নাবী (সা.) বলেছেন গর্ভপাত হওয়া সন্তানের প্রভু (আল্লাহ তাআলা) যখন তার পিতা মাতাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন তখন সে প্রভুর সাথে বির্তক করবে। তাকে বলা হবে, ওহে প্রভুর সাথে বিতর্ককারী গর্ভপাত হওয়া সন্তান! তোমার পিতা মাতাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। অতএব সে তাদেরকে নিজের নাভিরুজ্জু দ্বারা টানতে টানতে শেষে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ হা- ১৬০৮)
উল্লেখ্য যে, চার মাসের কম বয়সে গর্ভপাত হলে তাকে গোসল দিতে হবে না। কাফন পরাতে হবে না এবং জানাযাও দিতে হবে না। কেননা তা মাংসের একটি টুকরা মানুষ নয়। চারমাস পূর্ণ হয়ে পঞ্চম মাসে পদাপর্নকারী গর্ভপাত সন্তান, মৃত ভূমিষ্ট সন্তানকে গোসল দেওয়া, কাফন পরানো ও জানাযা পড়ানো ওয়াজিব।
আর যদি এর কোনটাই না করে তাকে কবরস্থ করা হয় এবং কবরস্থ জায়গা জানা থাকলে তার কবরে গিয়ে জানাযার নামায আদায় করতে হবে। আর জানা না থাকলে তার গায়েবানা জানাযা আদায় করলেই হবে। (ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম- ৩৪৬নং ফাতাওয়া দ্রঃ)
লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতীব, দুপ্তারা, কুমারপাড়া, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।