কুরআন ও হাদিসের ওপর আমল
ঝিনাইদহের চোখঃ
আল্লাহ তাআলা কুরআন নাজিল করেছেন আমলের মাধ্যমে তাঁর বিধি-বিধান, হুকুম-আহকাম বাস্তবায়ন করার জন্য। আল্লাহ তাআল বলেন, হে মানব সমাজ! তোমরা সেই কিতাবের অনুসরণ করো, যা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে নাজিল করা হয়েছে। (সূরা আ’রাফ- ৩)
রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমরা কুরআন পাঠ কর, সাবধান! কুরআনকে অপব্যাখ্যা করে বেঁচে খেয়ো না, রুজি-রোজগারের মাধ্যম বানাবে না। (মূসনাদে আহমদ, হা- ১৫৫৬৮)
সহীহ হাদিসের ওপর আমল করা ওয়াজিব-
আল্লাহ তাআলা বলেন, রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাকো। (সূরা হাশর- ৭)
রাসূল সাঃ সমগ্র উম্মতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমরা অবশ্যই আমার সুন্নত এবং আমার হেদায়াতধন্য খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নত অনুসরণ করে চলবে, তোমরা এই সুন্নতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো। (সুনানে তীরমিযী, হা- ২৬৭৬)
আমরা কি হাদিসের মুখাপেক্ষী? কুরআন বিদ্যমান থাকা সত্বেও আমরা কি হাদিসের মুখাপেক্ষী? কুরআন কি আমলের জন্য যথেষ্ট নয়? না। আমলের জন্য কুরআনের পরও হাদিসের প্রয়োজন আছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি তোমার প্রতি এই উপদেশবাণী নাজিল করেছি যাতে তুমি মানুষের প্রতি যা নাজিল করা হয়েছে তা সুষ্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে পার এবং তারাও যেন চিন্তা ভাবনা করে আমল করে। (সূরা নাহল- ৪৪)
রাসূল (সা.) বলেছেন, “জেনে রাখো, আমাকে দেওয়া হয়েছে কুরআন এবং তার সঙ্গে অনুরূপ আর একটি বস্তু যা হচ্ছে আমার সুন্নত।” ( সূনানে আবু দাউদ, হা- ৪৬০৬)
রাসূল (সা.) আরও বলেছেন, “বনী ইসরাঈল তথা ইহুদীরা ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ছাড়া বাকী সব লোকই জাহান্নামে যাবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা? তিনি বললেন, আমি এবং আমার সাহবীগণ যার উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছি। (সূনানে তিরমিযী, হা- ২৬৪১)
এ হাদীসকে ভিত্তি করে ইমাম তিরমিযী ও ইমাম ইবনুল জাওযী রাঃ. বলেন, এ হাদীস প্রমাণ করেছে যে, এক ‘‘জামাআত” বলতে সাহাবীগণের জামাআত কে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ বিশেষ কোনো একজন সাহাবী নন, বরং নাবী (সা.) এবং সামগ্রিকভাবে সাহাবীদের জামাআত যে সুন্নতকে পালন করে গেছেন, পরবর্তীযুগেও যারা সেই সুন্নতকে অনুসরণ করবে তারাই জান্নাতে
যাওয়ার অধিকারী। (তিরমিযী, ২৬৪১নং হাদীসের টিকা দ্রঃ)
ইমাম আওযায়ী রাঃ. বলেন, তোমার নিজকে তুমি সুন্নতের ওপর অবিচল রাখো। সুন্নতের ধারক লোকেরা যেখানে দাঁড়িয়েছেন অর্থাৎ যে নীতি গ্রহণ করেছেন তুমিও সেই নীতিই গ্রহণ করো, তারা যা বলেছেন তুমি তাই বলবে, আর তোমার পূর্ববতী লোকেরা যে পথ ধরে চলে গেছেন তুমিও সেই পথেই চলবে। তাহলে তারা যা করেছেন তুমি তাই করার তাওফিক পাবে। (হুলইয়াতুল আউলিয়া- ৬/১৪৪)
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথার আগে আমরা কি আর কারো কথাকে স্থান দিতে পারি ? না। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের কথার আগে আমরা কারো কথাকে স্থান দিতে পারিনা। কেননা আল্লাহ তাআলা স্বয়ং নিজে দ্ব̈র্থহীন ভাষায় এ বিষয়ে এভাবে নিষেধ করেছেন- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের থেকে এগিয়ে যেও না।” ( সূরা হুজরাত- ১)
রাসূল (সা.) বলেছেন, “সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নাফরমানী করে কোনো সৃষ্টির তথা কোন মানুষের হুকুম-আহকাম মানা ও আনুগত্য করা চলবে না। ( মুসনাদে আহমদ হা- ১০৯৫)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ. বলেন, কেউ যেন নিজের দ্বীনকে কোনো বস্তুর সঙ্গে এমনভাবে আষ্টে-পিষ্টে বেধে না নেয় যে, সে ঈমান আনলে, সেও ঈমান আনবে, আর সে কুফরী করলে, সেও কুফরী করবে। যদি তোমরা কারো অনুসরণ করতে বাধ্য হও তাহলে মরে যাওয়া লোকদের অনুসরণ করবে। কেননা মানুষ জীবিত থাকা অবস্থায় ফিতনা থেকে মুক্ত হতে পারে না। (সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী, হা- ২০৮৪৬)
অর্থাৎ কোনো ব্যক্তিকে আদর্শরূপে গ্রহণ করা সম্পর্কে ইবনে মাসউদ রাঃ. বলেন, কারো যদি সুন্নত ধারণ করতেই হয় তাহলে তার উচিত এমন ব্যক্তির সুন্নত ধারণ করা যে মরে গেছে। কেননা যে লোক এখনো জীবিত আছে সে যে ভবিষ্যতে ফিতনায় পড়বে না তার কোনো নিশ্চয়তাই নেই। আর মরে যাওয়া লোক হচ্ছেন- মুহাম্মদ (সা.) এর সাহাবীগণ। যারা ছিলেন এ উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম লোক, যাদের ছিল সমধিক পূণ্যময় গভীরতম জ্ঞান। কৃত্রিমতা তাদের মধ্যে ছিল না। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বাছাই করে নিয়েছিলেন তাঁর নবীর সাহাবী হওয়ার জন্য এবং তাঁর দ্বীন কায়েম করার জন্য। অতএব, তাদের সঠিক মর্যাদা অনুধাবন করে স্বীকার করো, তাদের পদাংক অনুসরণ করো আর তাদের চরিত্র ও স্বভাবের যতদূর সম্ভব তোমরা ধারণ করো ও গ্রহণ করো।
কেননা তাঁরা ছিলেন সঠিক ও সুদৃঢ় হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত। অতএব, এখানে কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা সাহাবীর কথা বলা হয়নি, সমষ্টিগতভাবে সাহাবীগণের জামাআতের কথা বলা হয়েছে। এই সাহাবীদের জামাআতই মুসলিমদের জন্য অনুসরণীয়। এ থেকে বুঝা গেল যে, মানব সমাজের জন্য কোনো এক ব্যক্তিকেই একান্তভাবে অনুসরণই কিছুতেই কল্যাণকর হতে পারে না।
ইসলাম কাউকেই সেই নির্দেশ দেয়নি, সে যে যুগের এবং যতবড় বুজুর্গ ও অলীই হোক না কেন। ইসলামে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
লিখেছেন : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতিব।