নামাজের শুরুতে নিয়ত পাঠ করা সঠিক কি না?
ঝিনাইদহের চোখঃ
আজকের প্রশ্ন : নামাজে তো, নাওয়াইতুয়ান উসাল্লি’য়ালা + কোন ওয়াক্তের কত রাকাআত ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত পড়া হচ্ছে + কা’ বাতিশ শারিফাতি + আল্লাহু আকবার- আগে / পূর্বে এইভাবে নিয়ত করা হত। কিন্তু বর্তমানে অনেক শাইখ, মুফতি, আলেমেদ্বীন এভাবে নিয়ত করাকে বিদাআত বলছেন। তাহলে তো ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত নামাজের নিয়ত সংখ্যা ঠিক রেখে “বাংলাতেই” মনে মনে করতে হবে? প্রশ্ন হলো- এই বক্তব্য সঠিক কি না?
উত্তর : নিয়ত আরবী শব্দ। যার অর্থ হল, ইচ্ছা বা সংকল্প। আর ইচ্ছার স্থান হচ্ছে অন্তর। তা মুখে উচ্চারণ করার প্রয়োজন নেই।
আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে নবী! (আপনি বলে দিন, তোমরা মনের কথা গোপন করে রাখ অথবা প্রকাশ করে দাও, আল্লাহ সে সবই জানতে পারেন। আর আসমান জমিনে যা কিছু আছে সে সবই তিনি জানেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।” (সূরা আল ইমরান- ২৯)
উমার বিন খাত্তাব রা. বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি, হে লোক সকল! কাজ-কর্মের ফলাফল দৃঢ় সংকল্পের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিটি মানুষের ভাগ্যে তাই জুটবে যা সে নিয়ত বা সংকল্প করেছে। (সহীহ বুখারী, হা- ৬৪৭০)
একজন বিবেকবান, সুস্থ মস্তিষ্ক, বাধ্য করা হয়নি— এমন লোক কোনো কাজ করবে আর সেখানে তার কোনো নিয়ত বা ইচ্ছা থাকবে না সেটা সম্ভব নয়। নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল, সুতরাং নামাজের পূর্বে নিয়ত করা প্রয়োজন। নিয়ত হল অন্তরের সাথে দৃঢ় সংকল্প, শব্দের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রা. তার পূর্ণাঙ্গ নামাজ শিক্ষা বইয়ের ১০১-১০৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত সকল নামাজের নিয়ত আরবিতে উল্লেখ করেছেন।
অবশ্য উক্ত বইয়ের টিকা লিখতে গিয়ে মাওলানা আজিজুল হক সাহেব লিখেছেন যে, আমাদের সমাজে নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণের বাধ্য বাধকতা স্বরূপ যে কিছু গৎবাঁধা আরবি শব্দের প্রচলন আছে তা নিষ্প্র্রয়োজন। নিয়ত পড়ার বিষয় নয় বরং নিয়ত করার বিষয় এবং এর সম্পর্ক মুখের সাথে নয় বরং অন্তরের সাথে। (পূর্ণাঙ্গ নামাজ শিক্ষা– ১৪৩ পৃষ্ঠা)
সুতরাং অন্তরের দৃঢ় সংকল্প ও ইচ্ছা করার নামই হল নিয়ত। মুখে আরবিতে নামাজে নিয়ত পড়া নব উদ্ভাবিত বিষয়, আর তা বিদআত এবং বিদআত বর্জনীয়।