ধর্ম ও জীবন

আমাদের ওলি কে?

ঝিনাইদহের চোখঃ

ওলি শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, অভিভাবক, বন্ধু, সাহায্যকারী। দুনিয়ার কার্যকলাপে মানুষ মানুষের ওলি হতে পারে। যেমন গৃহকর্তা পরিবারের অন্যান্যদের ওলি। দ্বীনের ক্ষেত্রে অলি তিনিই-

ক) মানুষ যার কথামতো চলে, বা আমল করে নির্ধারিত নিয়মনীতি প্রথা আইন-বিধান পদ্ধতির অনুসরণ করে, কুরআনের ভাষায় তাকে ওলি বলে।

খ) মানুষ যার পথ প্রদর্শনের ওপর বিশ্বাস করে এবং মনে করে যে, সে তার জন্য সঠিক পথ বলে দেয় ও ভুল-ভ্রান্তি হতে রক্ষা করেন সে ওলি।

গ) যার সম্পর্কে মানুষ মনে করেন যে, সে অতিপ্রাকৃতিক উপায়ে তাকে সাহায্য করে, তাকে বিপদে আপদে রক্ষা করে, তাকে রুজী-রোজগার দেয়, আশা-আকাঙ্খা পূরণ করে সে ওলি।

দ্বীনের ওলির সম্বন্ধে আল্লাহ তাআলা বলেন :

ক) তারা যখন নিরাশ হয়ে পরে তখনই তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তার করুণা বিস্তার করেন। আর তিনিই ও সর্বপ্রশংসিত ওলি। (সূরা শুরা- ২৮)

খ) তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো ওলি নেই এবং কোনো সুপারিশকারী নেই। তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? (সূরা সাজদা- ৪)

গ) আল্লাহকে তোমরা পৃথিবীতে ব্যর্থ করতে পারবে না। আর আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোনো ওলি নেই এবং কোনো সাহায্যকারীও নেই। (সূরা শুরা- ৩১)

ঘ) যারা আল্লাহকে ছেড়ে অপরকে ওলি (মাওলা) হিসেবে গ্রহণ করে তাদের দৃষ্টান্ত মাকড়সার ন্যায়, যে নিজের জন্য ঘর বানায়। আর ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘরইতো দুর্বলতম ঘর। (সূরা আনকাবুত-৪১)

ওলি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা অন্যান্য সূরাতেও উল্লেখ করেছেন। যেমন- সূরা কাহাফ- ১৭, সূরা আ’রাফ- ৩, ২৭, ৩০, সূরা বাকারা- ৫৭ ইত্যাদি।

অতএব দ্বীনের ক্ষেত্রে একটু চিন্তা করলে বোঝা যায় যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেও ওলি মানা এবং তার নির্দেশ পালন করা আল্লাহর সাথে শরীক বানানো হয়ে যায় এবং এটা স্পষ্টতই শিরক। কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর প্রমাণাদী ব্যতীত কেউ যদি নিজের ধারণা, অনুমান, ইচ্ছা ও বাসনার ভিত্তিতে বিভ্রান্তিকর কথা বলে সে নিশ্চয়ই সেই শয়তানের চ্যালা, যার কথা আল্লাহ তাআলা বলেন, (ইবলিশ আল্লাহকে বলল) আমি অবশ্যই তাদেরকে (আদম সন্তানদেরকে) পথভ্রষ্ট করবই, তাদের হৃদয়ে মিথ্যা কামনা-বাসনার সৃষ্টি করবই, অবশ্যই আমি তাদেরকে নির্দেশ দিব, ফলে তারা পশুর কর্ণচ্ছেদ করবেই এবং অবশ্যই তাদেরকে নির্দেশ দিব ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই। আল্লাহর পরিবর্তে কেউ শয়তানকে অলিরূপে গ্রহণ করলে সে স্পষ্টতই ক্ষতিগ্রস্থ। (সূরা নিসা- ১১৯)

রাসূল (সা.) বলেন, সৎ এবং অসৎ ওলির উপমা হলো মিশক বিক্রেতা ও কামারের হাপর। মিশক বিক্রেতার নিকট গেলে তার নিকট হতে তুমি শুণ্য হাতে ফিরে আসবে না। তুমি তার নিকট হতে কিছু মিশক ক্রয় করবে কিংবা অন্তত পক্ষে তার থেকে সুগন্ধি পাবে। কিন্তু কামারের হাপর তোমার শরীরে ধোয়া লাগিয়ে দিবে অথবা কাপড় জ্বালিয়ে দিবে অথবা তুমি তা থেকে একটু দুর্গন্ধ লাভ করবে। (সহীহ বুখারী, হা- ১৯৫৬)

রাসূল (সা.) বলেন, সাবধান! অমুক বংশের লোকেরা আমার ওলি নয় বরং আমার ওলি হচ্ছেন আল্লাহ ও পূণ্যবাণ মুমিনগণ। (সহীহ মুসলিম, হা- ৪২৬)

রাসূল (সা.) বলেন, যদি তোমরা আল্লাহর ওপর যথাযথ ভরসা কর তাহলে তিনি তোমাদেরকে অনুরূপ রিজিক দিবেন যেরূপ পাখিদের রিজিক দান করেন। তারা ভোরে খালি পেটে বের হয়ে যায় এবং দিন শেষে ভরা পেটে ফিরে আসে। (মিশকাত, হা- ৫০৬৯)

অতএব এই বিশ্বলোকে যা কিছু আছে তার সবকিছু ওলি হলেন আল্লাহু সুবহানাহু ওয়াতাআলা। আল্লাহ সবার সাহায্যকারী, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। আল্লাহ যাকে বন্ধু বলেছেন সেই আল্লাহর বন্ধু। যে কোনো মানুষ, পীর, দরবেশ, ইমাম, মুর্শিদকে আল্লাহর অলি বলা আল্লাহর সার্বভৌমত্বের ওপর আক্রমণ করার শামিল। তাই একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে অলি বা মাওলা বা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর জন্য কল্যাণকর।

লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, ইমাম ও খতীব

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button