মহাকাশ ভ্রমণের ইতিকথা
ঝিনাইদহের চোখ ডেস্ক: মহাকাশ সম্পর্কিত বিষয়ে ছোট বড় সকলেই বেশ কৌতূহলী! আর এই কৌতূহলের বশেই কিন্তু যুগে যুগে অনেকেই মহাকাশে ভ্রমণের মাধ্যমে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন। আর বিজ্ঞানের উন্নতির কারণেই যুগে যুগে মহাকাশ যাত্রা সফল হয়েছে। নেহাৎ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে নয় যুগে যুগে বিজ্ঞানীরা মহাকাশ চষেছেন বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহ উদ্ভাবনার নেশায়। মহাকাশ সম্পর্কিত ইতিহাস জানতে আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৯৪০ এর দশকে-
১. ওয়ার্নার ভন ব্রোন ১৯৪২ সালে জার্মান ভি-২ নামক একটি রকেটের ডিজাইন সম্পন্ন করেন। যেটিই প্রথম রকেট যে কি-না ১০০ কি.মি (৬২ মাইল) গতিবেগে মহাকাশপথে অতিক্রম করতে সক্ষম। ব্রোন পরবর্তীতে, নাসায় কাজ করা শুরু করেন এবং তার তৈরি একটি রকেটটি চাঁদে পৌঁছাতে সক্ষম হয়।
২. মহাকাশে প্রাণী! বিষয়টি অবাস্তব হলেও ১৯৪৭ সালে এর নমুনা পাওয়া যায়। পৃথিবীর বাইরের পরিবেশ মানুষের জন্য কতটুকু সহনীয় তা জানতেই বিজ্ঞানীরা নাজি ভি-২ রকেটের মাধ্যমে মাছি পাঠায় মহাকাশে।
৩. অ্যালবার্ট নামক একটি বানর ১৯৪৯ সালে মহাকাশ ভ্রমণে যায়। ইউএস ভি-২ রকেটের সাহায্যে পৃথিবী থেকে ৮৩ মাইল দূরে উড়ে যায় বানরটি। তাকেও উদ্ভাবনার কাজে পাঠানো হয়।
৪. রাশিয়া তাদের প্রথম মাহাকাশ স্যাটেলাইট ‘স্পূটনিক-১’ পাঠায় ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর। উক্ত বছরের নভেম্বরে রাশিয়ান কুকুর লাইকা প্রথম প্রাণী হিসেবে পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করে। ‘স্পূটনিক-২’ পাঠানোর সময়ও লাইকা মহাকাশ ভ্রমণ করে।
৫. মার্কিন এবং রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা ১৯৫৯ সালে একসঙ্গে চাঁদে পাড়ি দেয়ার প্রতিযোগীতায় নামে। যদিও রাশিয়া তাতে সফল হয়।
৬. রাশিয়ান মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিন ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল, সর্বপ্রথম মানুষ হিসেবে মহাকাশ পাড়ি দেন। তিনি ভোস্টক-১ এ দুই ঘন্টায় পৃথিবীর পুরো কক্ষপথ বিচরণ করেন।
৭. যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে প্রথম মহাকাশে যান জন গ্লেন। তিনি ফ্রেন্ডশিপ-৭ রকেটের সাহায্যে পুরো পৃথিবীর কক্ষপথ পদক্ষিণ করেন।
৮. রাশিয়ার ভ্যালেন্তিনা তেরেস্কোভা প্রথম মহাকাশচারী নারী হিসেবে মহাকাশ পাড়ি দেন।
৯. ১৯৬৩ সালে জন এফ. কেনেডি অঙ্গিকারবদ্ধ হন, ১৯৭০ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্র থেকে চাঁদে মানুষ পাঠানো হবে। এরপর শুরু হয় তোড়জোড়। নাসা কর্তৃক মহাকাশযানে করে চাঁদে পাঠানো হয় রোবট ‘সার্ভেয়র ১’। সে চাঁদে অবতরণ করে সেখানকার ছবি তুলে নাসায় পাঠানোর পর বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে জানতে পারেন চাঁদে মানুষের অবতরণ সম্ভব।
১০. নেইল আর্মষ্ট্রং এবং বাজ আল্ড্রিন অ্যাপোলা ১১ তে চড়ে ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই চাঁদে পৌঁছান।
১১. ‘অ্যাপোলো ১৩’ ১৯৭০ সালের ১৩ এপ্রিল দ্বিতীয় বারের মত চাঁদে যাত্রাকালে যান্ত্রিক সমস্যার কারণে মহাকাশচারী পৃথিবীতে অবতরণ করেন।
১২. ইলেক্ট্রিক যান হিসেবে চাঁদে লুনার রোভার ব্যবহার করা হয় ১৯৭১ সালে। এর সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮ এমনপিএইচ (১৩ কেপিএইচ)। এটি চতুর্থ, পঞ্চম এবং ষষ্ঠ অ্যাপোলো মিশনের জন্য কাজ করে। অন্যদিকে, উক্ত বছরই প্রথমবারের মত ‘রাশিয়ান স্যালাউট ১’ নামক স্পেস স্টেশন চালু হয়।
১৩. মঙ্গলগ্রহ সম্পর্কে জানতে ‘মার্স ২’ মাহাকাশযান পাঠানো হয় ১৯৭৩ সালে। এর পূর্বে ‘মার্স ১’ যানটি টানা ১ বছর পৃথিবীর কক্ষপথ ঘুরে ঘুরে ছবি পাঠাতে থাকে। এসব ছবির মাধ্যমে মঙ্গলগ্রহের অবয়ব সকলের সামনে আসে। একটি নিয়ন্ত্রণহীন প্যারাস্যুটের কবলে পড়ে এটি ধ্বংস হয়ে যায়। পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ‘মার্স ২’ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
১৪. যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ১৯৭৭ সালে ‘ভোয়েগার ১’ নামক মহাকাশ রোবোটিক যান মহাকাশে পাঠানো হয়।
১৫. হেলেন শারম্যান প্রথম বিট্রিশ মহাকাশচারী হিসেবে ১৯৮৯ সালে খেতাব লাভ করেন।
১৬. অতঃপর সকল প্রতিদ্বন্দ্বিতার অবসান ঘটিয়ে ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া এক হয়ে মাহাকাশ বিষয়ে কাজ শুরু করে।
১৭. সোজার্নার মঙ্গল গ্রহে অবস্থিত একটি রোবোটিক্স মঙ্গল রোভার। এটি ১৯৯৭ সালের জুলাইয়ে এরেস ভ্যালিস অঞ্চলে অবতরণ করে এবং প্রায় তিন মাস ধরে মঙ্গলের সন্ধাণ করে। এর সামনে এবং পিছনের ক্যামেরা ও এতে থাকা হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রিত হত ও নাসার সঙ্গে সংযোগ রাখত।
১৮. ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (আইএসএস) ২০০০ সালে স্থায়ীভাবে কাজ শুরু করে।
১৯. মার্কিন মিলিয়নার ড্যানিস টিটো প্রায় ২ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করে ২০০১ সালে মহাকাশে ঘুরতে যান। তিনি ৯০০ ঘন্টার টেনিং সমাপ্ত করে প্রথম মহাকাশ টুরিস্ট হিসেবে ‘রাশিয়ান সোয়াজ’ মাহাকাশযানে চড়ে টানা সাতদিন পৃথিবীর কক্ষপথে বিচরণ করেন।
২০. প্রথম ব্যক্তিগত বেসরকারি নভোযান হিসেবে ২০০৪ সালের ৪ অক্টোবর মহাশূন্যে ভ্রমণ করে স্পেশিপওয়ান। যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্কেলড কম্পোসিটস’ নামক একটি কোম্পানি এটি তৈরি করে।