বসন্তকালে ফুলের জন্য হতে থাকে মারাত্নক অ্যালার্জি!

ঝিনাইদহের চোখ:
আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে,. এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়,. বসন্তকাল চলে এসেছে। তবে এই বসন্ত কিন্তু সবার জন্য আনন্দময় নয়। কারণ এই ঋতুতে অ্যালার্জি এবং অ্যালার্জিজনিত নানা সমস্যা দেখা যায়। গাছে ফুল আসে। চারিদিকে ঘুরে বেড়ায় অজস্র ফুলের রেণু, বাতাসবাহিত হয়ে ওই রেণু আমাদের নাক- চোখ এবং ফুসফুসে প্রবেশ করে। তাতে অনেকের মারাত্মক অ্যালার্জি হয়। এর ফলে চোখে কনজাংটিভাইটিস, ফুসফুসে প্রদাহ জনিত রোগ বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এছাড়াও অনেকের ত্বকেও নানা রকমের সমস্যা হয়।
ফুলের রেণু আমাদের শরীরে ইমিউনো সেলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। কোষ থেকে হিস্টামিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক বার হয়। এই হিস্টামিনই নানা রকম অ্যালার্জি, চোখের প্রদাহ, ত্বকের রোগের জন্য দায়ী। হিস্টামিন মানুষের রক্ত থেকে ফ্লুইড বার করে দেয়। এর ফলে চোখ লাল হয়। অতিরিক্ত জলক্ষরণ হয়।
আর এই বসন্তেই অ্যালার্জিজনিত কারণে অ্যাজমা বা হাঁপানি বাড়ে। সিওপিডির রোগীদের কষ্ট আরো বেড়ে যায়। গ্রামবাংলায় এই ঋতুতে অ্যালার্জিক এলভিওলাইটিস দেখা দেয়। এটা হাঁপানির মতো এক ধরনের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। যদিও এ রোগে সাঁই সাঁই শব্দ শুনতে পাওয়া যায় না। একজাতীয় ছত্রাক বা ফুলের রেণু নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে ঢুকে এই রোগের জন্ম দেয়।
আর হিস্টামিন নাক-কান গলার চুলকানির জন্য দায়ী। নাক অনেকসময় বন্ধ হয়ে যায়। নাক থেকে পানি গড়ায়, নাক ও গলা খুশখুশ করে, অতিরিক্ত হাঁচি হয় এবং চোখের নীচে কালি পড়ে যায়।
এর থেকে বাঁচতে নাকে-মুখে মাস্ক কিংবা রুমাল ব্যবহার করতে হবে। শিশুরা যাতে ফুল বা ঘাস নিয়ে এই সময় খেলা না-করে সে দিকে বা-মাকে খেয়াল রাখতে হবে। ঘরের দরজা-জানলা সব সময় খোলা রাখলে রেণুর অবাধ প্রবেশ করে। তাই যারা অ্যালার্জিপ্রবণ তারা দরজাজানলা বন্ধ করে রাখবেন।
ঋতু পরিবর্তের এই সময়ের তাপমাত্রার আচমকা তারতম্যের জন্য সাধারণ সর্দি-কাশির সমস্যাও বাড়ে। এর জন্য প্রথমেই কোনো অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না। প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। গরম পানির ভাপ নেওয়া ও গার্গল করা ভালো।
বসন্তের সঙ্গে ডিপ্রেশন বা অবসাদেরও সম্পর্ক রয়েছে। একেবারে সুনির্দিষ্ট কারণ জানা না-গেলেও এই সময় মস্তিস্কে সেরোটোনিন কমে যায়। মানুষের মুড নিয়ন্ত্রণ করে এই সেরোটোনিন। এটা কমে যাওয়ার ফলে অনেকের মধ্যে ডিপ্রেশন আসে। ফলে ওজনবৃদ্ধি ও মানসিক শিথিলতা দেখা যায়।
কিছু টিপস:
ঠাণ্ডা বাতাসে বেশিক্ষণ না থাকা।
ফুলের রেণু এড়াতে মাস্ক ব্যবহার।
ভিটামিনযুক্ত খাবার বেশি করে খাওয়া।
হাঁচি-কাশির সময় রুমাল ব্যবহার করা।
পারলে জনবহুল জায়গা এড়িয়ে যাওয়া।
সারা দিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
ফলমূল খান ও আদাযুক্ত লাল চা পান করুন।
ফ্রিজের পানি ও আইসক্রিম থেকে বিরত থাকুন।
অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমোন।
এই সময়ে অনেকেরই চিকেন পক্স বা জলবসন্ত হয়। এটি একটি অতি ছোঁয়াচে রোগ। এর সংক্রমণের হার প্রায় ৯০ শতাংশ। নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলের এই রোগ হয়। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এই রোগ হওয়ার প্রবণতা বেশি। এখন এই রোগের টিকা রয়েছে। সেটা নিয়ে নিতে পারলে ভালো।
এই রোগ এক বার যাদের হয় তারা সাধারণত দ্বিতীয় বার এই রোগে আক্রান্ত হন না। এই রোগের ভাইরাস ক্যারিসেলা জোস্টারকে প্রতিহত করার জন্য দু’ বছর বয়সে টিকা দেওয়া হয়। এখন এই টিকা নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।
চিকেন পক্স হলে জ্বর, মাথা ও পেশিতে ব্যথা হয়। শরীর জুড়ে পানিভরা গুটি বের হয়। এগুলি সাধারণত সপ্তাহ দু’য়েক থাকে। চিকিৎসার পর রোগী পুরোপুরি সেরে ওঠার পরেও তাকে কিছুদিন সাবধানে থাকতে হয়। কারণ ওই সময়ে শরীর দুর্বল থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে নিউমোনিয়া, ডায়েরিয়া প্রভৃতি রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাড়ির কারো এই রোগ হলে তাকে যথাসম্ভব আলাদা রাখতে হবে। না হলে অন্যরাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
হাঁচি-কাশি ও সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এই সময়ে দিনের বেলায় তাপমাত্রা বেশ চড়া হওয়ায় বাইরে থেকে ঘরে এসেই অনেকেই ঠাণ্ডা পানি বা সরবত খান। এর ফলে গলা ব্যথা হয়। ঢোক গিলতে সমস্যা হয়। টনসিল ফুলে যায়। জ্বর আসে। ঋতু পরিবর্তনের সময় ঘরে ঢুকেই ঠাণ্ডা পানি খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করলে ভালো।
কিছুটা শীত কিছুটা গরমের এই আবহাওয়ায় বিভিন্ন ভাইরাসের সঙ্গে মশারাও সক্রিয় হয়ে ওঠে। মশার কামড়ে এই সময়ে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়ার মতো নানা রকমের রোগ হয়।
তবে আমাদের দেশে প্রতি বছরই বহু মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সঠিক চিকিৎসায় রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। এই রোগে ডায়েরিয়া হতে পারে। অনেকক্ষেত্রে লিভারের ক্ষতি হয়। ডেঙ্গু রোগীর জন্ডিস হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। ডেঙ্গু ছড়ায় চার রকমের ভাইরাস। একটি ভাইরাস এক বার ডেঙ্গু ঘটালে, অন্য ভাইরাস পরে কোনো সময়ে ফের এই রোগ ডেকে আনতে পারে।
এই ঋতুতে হাম ও ভাইরাল ফিভার হতে দেখা যায়। টাইফয়েড এবং প্যারাটাইফয়েডও দেখা দিতে পারে। ভাইরাল ফিভারে সাধারণত সর্দি-কাশির সঙ্গে মাথাব্যথা ও শরীর ব্যথা দেখা দেয়। জ্বরের শুরুতে এ জ্বর এবং টাইফয়েড জ্বরের মধ্যে পার্থক্য বের করা মুশকিল হয়ে পড়ে।
জ্বরের ধরন ও ব্লাড টেস্টের পর রোগীকে ভালমতো পরীক্ষা করে বোঝার চেষ্টা করা ভাইরাল ফিভারে রোগীকে পুরোপুরি বিশ্রামে রাখতে হয়। পুষ্টিকর খাবার খেতে দিতে হয়। জ্বর ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপর থাকলে প্যারাসিটামল ধরনের ওষুধ খেতে হবে এবং রোগীর মাথায় পানি ও শরীরে কোল্ড স্পঞ্জিং দিতে হবে। রোগীকে বেশি করে পানি খেতে দিতে হবে। এ অবস্থায় এক থেকে চার দিনের মধ্যেই জ্বরের প্রকোপ কমতে থাকে। পাঁচ-সাত দিনের মধ্যেই রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়। এই নিয়মে জ্বর না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না।