ধর্ম ও জীবন

জমজমের পানি নিয়ে জাপানি বিজ্ঞানীর বিস্ময়!

ঝিনাইদহের চোখঃ

ইব্রাহিম (আ.) মক্কার ধু ধু মরুভূমির পাশে স্ত্রী হাজেরা এবং সন্তান ইসমাঈলকে এক মশক পানি আর কিছু খেজুর দিয়ে চলে গিয়েছিলেন সেবার। প্রথমে কোনো সমস্যা না হলেও একটা সময় তৃষ্ণায় কাতর হয়ে ওঠেন বিবি হাজেরা। পানির খোঁজে একবার সাফা, একবার মারওয়া পাহাড়ে ওঠেন তিনি। এমন অবস্থায় মহান আল্লাহ ফেরেশতা জিব্রাঈলকে সেখানে পাঠান।

তার পাখার আঘাতে মাটিতে গর্ত হয়। সৃষ্টি হয় জমজম কূপের। অনেকে বলে থাকেন, বিবি হাজেরা উত্তাল পানিকে থামার জন্য বলেছিলেন ‘জমজম বা থেমে যাও’। এরপর থেকে এই কূপের নাম জমজম। এ ব্যাপারে অন্যান্য মতবাদও রয়েছে।

কাবাঘর থেকে মাত্র ২১ মিটার দূরে অবস্থিত এই কূপ ও এর পানি নিয়ে কম আলোড়ন ওঠেনি। এর পানি যেন কখনোই শেষ হয় না। এটি যেমন সুস্বাদু, তেমনি জীবাণুমুক্ত। কেবল তৃষ্ণা নয়, মানুষের ক্ষুধা ও ক্লান্তিও দূর করতে সক্ষম জমজমের পানি। এই পানি নিয়ে মানুষের চিন্তা তাই কখনোই থেমে থাকেনি। আর সেই চিন্তার অংশ হিসেবেই এবার এক জাপানি বিজ্ঞানী জমজমের পানির উপরে পরীক্ষা চালিয়েছেন।

বলছিলাম জাপানি বিজ্ঞানী মাসরু ইমোতোর কথা। তিনি যখন জানতে পারেন যে, আকাশ থেকে মাটিতে পড়া তুষারের একেকটি কণা একে অন্যের চাইতে আলাদা হয়ে থাকে, তখনই পানি ও তুষারের উপরে তার আগ্রহ জন্ম নেয়। কোনো স্থানের সব পানির বৈশিষ্ট্য এক হতে বাধ্য। তাহলে আকাশ থেকে ঝড়ে পড়া তুষারের গঠন কী করে আলাদা হয়!

পানিতে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন থাকে। তাই তুষারের ক্ষেত্রেও অনন্যতা থাকার কোনো প্রশ্ন ওঠে না। এ ব্যাপারে আগ্রহ থেকেই গবেষণার কাজ শুরু করেন ইমোতো। তিনি তুষারকণাকে জমাটবদ্ধ করার চেষ্টা করেন। কারণ জমাটবদ্ধ অবস্থায় তুষারকণা জ্যামিতিক আকার ধারণ না করে তার প্রাথমিক আকার ধারণ করবে- এমনটাই ভেবেছিলেন তিনি।

পরবর্তী সময়ে, ইমোতো অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন যে তার ভিন্ন ভিন্ন নমুনা থেকে আসলেই ভিন্ন ভিন্ন তুষারকণা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। একটি কামরাকে মাইনাস ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস উষ্ণতায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেখানে ক্যামেরা ধারণা করা হয় শুধু বরফের গলে যাওয়ার সময়টুকু দেখার জন্য।

অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন ইমোতো যে, দুইটি নল, দুইটি খাল, দুইটি নদী থেকে নেওয়া তার নমুনা সম্পূর্ণ আলাদা। পানির মূল উপাদান এক হলেও এদের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন। এই গবেষণা করার মাঝপথেই বিজ্ঞানীকে জমজমের পানির কথা বলা হয়। এক সৌদি ছাত্র ইমোতোকে পরিচয় করিয়ে দেয় জমজমের পানির সাথে। নিজের গবেষণাকে আরেকটু বাড়িয়ে নিয়ে জমজমের পানির উপরে পরীক্ষা শুরু করেন এই বিজ্ঞানী।

কোনোভাবেই পানিটির স্ফটিকায়ন করা সম্ভব হচ্ছিল না। ১০০০ গুণ পাতলা করেও কোনো লাভ হচ্ছিল না। অবশ্য এর আরেকটু পরেই এক ঘন সেন্টিমিটার পানিটি এক লিটারে পরিণত হয় এবং স্ফটিকের আঁকার ধারণ করে। এই স্ফটিকে দুটি স্তর ছিল। জম এবং জম- মোট দুটো শব্দের মিশ্রনে গঠিত পানি বিধায় এমন হয়েছে বলে ধারণা করা হয় তখন।

পরবর্তীতে ইমোতোকে প্রস্তাব দেওয়া হয় যে, কেউ একজন স্ফটিকের সামনে দাঁড়িয়ে কোরআন পাঠ করবেন। ইমোতো কথাটি মেনে নেন। এবং তারপরেই জন্ম নেয় বিস্ময়! একেবারে সঠিক আকারের একটি স্ফটিক তৈরি হয়। এরপর পানির সামনে আল্লাহর নাম পাঠ করে যেতে থাকলে একটির পর একটি স্ফটিক জন্ম নিতে থাকে। ১৫ বছর ধরে গবেষনা চালানোর পর ‘ম্যাসেজেস ফ্রম ওয়াটার’ নামে একটি ৫ খণ্ডের বই প্রকাশ করেন ইমোতো। তিনি সেখানে লেখেন যে, জমজমের মতো বিশুদ্ধ পানি আর কোথাও নেই। এটি বারবার ব্যবহার করলেও নিজের গুণ বদলায় না। এক বোতল পানির মাঝে এক ফোঁটা জমজমের পানি ফেলে দিলে পুরো বোতলের পানিই জমজমের পানির গুন ধারণ করে।

জমজমের পানিকে নিজের দেখা এখন পর্যন্ত সবচাইতে অনন্য পানি বলে স্বীকার করে নেন এই বিজ্ঞানী!

রেফারেন্স : মার্সিফুলসারভেন্ট, সিয়াসাসডটপিকে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button