ধর্ম ও জীবন

জুহদ বা দুনিয়া বিমুখতা (পর্ব- ১)

ঝিনাইদহের চোখঃ

সমস্ত প্রশংসা মহান সৃষ্টি কর্তার জন্যে, দুরুদ ও সালাম সর্বশেষ নবী ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য। আল্লহ রাব্বুল আলামীন এই পৃথিবীকে অপরুপ সৃষ্টিকুল দিয়ে সাজিয়েছিলেন, সব কিছুই মানুষের জীবন ধারনের উপকরণ হিসেবে দিয়েছেন, কিন্তু তারপরেও মানুষ সব কিছু ভোগ করতে পারবে না কারণ মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা তার একটা সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

কিন্তু মানুষ কোনো সীমানার প্রতি দৃষ্টি না দিয়েই তার মন খুশি মত চলছে, যার ফলে তারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি ডেকে নিচ্ছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে একটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করছি আর তা হল “জুহদ” বা দুনিয়া বিমুখতা যা প্রতিটি মুসলিমের জন্যেই অত্যন্ত জরুরী।

প্রথমেই জেনে নিব জুহদ অর্থ কি? জুহদ হচ্ছে আরবী শব্দ যার বাংলা অর্থ হচ্ছে দুনিয়া বিমুখতা।

অনেকেই দুনিয়া বিমুখতার মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে। তারা বলে থাকে দুনিয়া বিমুখতা বলতে পৃথিবীর প্রতি আকৃষ্টকারী সব কিছু থেকে বিমুখ হতে হবে যা সন্নাসী নামে পরিচিত। অথচ ইসলামে সন্নাসীর কোনো স্থানই নেই সেটা কোরআনে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে।

তাহলে দুনিয়া বিমুখতাটা কী? কোরআন এবং হাদীসের মাধ্যমে জেনে নিব, আল্লাহ রাব্বুল আল আমীন পবিত্র কোরআনুল কারীমে বলেন, “আর তারা দুনিয়ার জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট অথচ পার্থিব জীবন আখেরাতের তুলনায় ক্ষনস্থায়ী ভোগ মাত্র” (সূরা রাদ, আয়াত : ২৬)

সূরা আ’লার ১৭ নম্বার আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেন, “বরং তারা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিয়েছে, অথচ আখেরাতের জীবনটা হল স্থায়ী।” যার বাস্তব প্রতিফলন আমরা বর্তমান সমাজে দেখতে পাচ্ছি, প্রায় সকল মানুষই দুনিয়াকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ছে অথচ এটা হচ্ছে খুবই সংক্ষিপ্ত।

সূরা ত্বাহার ১৩১ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “আমি এদের বিভিন্ন প্রকার লোককে পরীক্ষা করার জন্য পার্থিব জগতের যে ভোগ বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি, আপনি সে সব বস্তুর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন না,আপনার পালনকর্তার দেওয়া রিযিক উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী।”

উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে জুহদ সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেল, আর তা হলো দুনিয়াকে নয় আখেরাতকে নিয়ে ব্যাস্ত হওয়া।

দুনিয়া বিমুখতার কয়েকটি স্তর রয়েছে। এগুলো হলো-

১. হারাম থেকে বিমুখতা : এই বিমুখতা অত্যাবশ্যক।

২. অপছন্দনীয় কার্যাদী থেকে বিমুখতা : এই বিমুখতা পছন্দনীয়।

৩. বৈধ কাজে সীমাতিরিক্ত ব্যাস্ত হওয়া থেকে বিমুখতা : যেমন, অসার কথা, প্রশ্ন করা, এরকম বিমুখতা মানুষের একটি বিশেষ পরিপূরক গুণ।

৪. মহান আল্লাহ ব্যাতীত অন্য সবকিছু এবং আল্লাহ থেকে বিমুখকারী : সব কিছু থেকে বিমুখ হওয়া আর এটাই পরিপূর্ণ বিমুখতা।

লেখক : রাসেল আহমাদ বিন জাকির হুসাইন, দাওরা হাদীস (আল জামিয়া আস-সালাফিয়্যাহ)।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button