ঝিনাইদহের কৃতি সন্তান, ‘মাওলানা হাতেম আলী’
ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহ জেলার আলেম দ্বীন মাওলানা হাতেম আলী ১৯১০ সালে শৈলকুপা উপজেলার ভাটই গ্রামে (চাঁদপুর ইউনিয়ন) জন্ম গ্রহন করেন। পিতার নাম মো: সদর উদ্দীন, দাদা হিরাজতিল্লাহ। ৭ ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ৬ষ্ঠ সন্তান এবং ভাইদের মধ্যে কনিষ্ঠ ।
বাল্যকালে পিতা হারান, ফলে অভাব অনুটনের মধ্যে পড়তে হয় তাকে। এক ফুফু দায়ীত্ব নেন তাঁর লালন পালনের জন্য। ছোটকালেই সেখানে তিনি এক মোল্লাজির নিকট আরবি ভাষা শিক্ষা নেন এবং পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ও পড়াশোনা করতেন মোল্লাজির কাছে। তৎপর ভাটই বাজারের মসজিদের ইমাম সাহেবের নিকট থেকে সহিশুদ্ধভাবে কোরআন শিক্ষা করেন। এ সময় হতে তিনি হুগলী জেলার ফুরফুরা শরীফের পীরের কথা শুনে অত্যন্ত অনুরক্ত হয়ে পড়েন পীরের প্রতি।
ঐ সময় দুধসরের ( শৈলকুপা উপজেলা) মৌলবী এনায়েত উল্লাদ থাকতেন ফুরফুরা শরীফে। তারই অনুপ্রেরণায় ফুরফুরা যাওয়ার আকর্ষন তাঁকে বাড়িতে আটকিয়ে রাখতে পারেনি । সকলের অগোচরে নি:স্ব অবস্থায় ফুরফুরার পথে বেরিয়ে পড়েন। তিনি সেখানে জায়গির থেকে মদ্রাসায় লেখাপড়া করতে থাকেন অত্যন্ত দীনহীন ভাবে। নিউ স্কিম মাদ্রাসার গন্ডি পেরিয়ে ওল্ডস্কিম মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং এই মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাশ করেন ১৩৪৯ বঙ্গাব্দে। ফাজিল পাশ করার পর তিনি ফুরফুরা শরীফের নিকটস্থ একটি মসজিদে ইমামতি করার সুযোগ পান। এতে তাঁর আর্থিক দীনতার অনেকটা লাঘব হয়। তাৎপর বাড়ি ফিরে এসে খামারাইল জুনিয়র মাদ্রাসায় আরবি শিক্ষক পদে যোগদান করেন। কিছুদিন পর তিনি চলে আসেন ঝিনাইদহ উজির আলী জুনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষক হয়ে।
দ্বীন শিক্ষার তীব্র আগ্রহে তিনি পুনরায় চলে যান ফুরফুরা শরীফে।
একজন দানশীল ব্যক্তির সহায়তায় মাদ্রাসায় ভর্তি হন কালিম লেখাপড়ার জন্য কিন্তু নানা পতিকুল অবস্থায় কালিম পরিক্ষায় উত্তীর্ন না হতে পেরে আবার ঝিনাইদহতে ফিরে আসেন এবং ইসলামের খেদমতে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। জনগনের মধ্যে ইসলাম চেতনা বোধ জাগ্রত করার জন্য তিনি কাজ করে গেছেন আজীবন।
ওয়াজ মাহফিল,মসজিদ মাদ্রসা পতিষ্ঠা ও পৃষ্ঠপোষকতা করা, ঈদগাহসহ নানা ইসলামী প্রতিষ্ঠান স্থাপনা তাঁর জীবনের প্রশংসনীয় কৃতিত্ব। ১৯৩৫ সালে ঝিনাইদহ সিদ্দিকিয়া মাদ্রসা প্রতিষ্ঠায় তাঁর বিষেশ ভুমিকা ছিল। সেই সংগে ছিলেন মাওলানা হানিফ ও তাঁর বড় ভাই কারী মো: হাবিবুর রহমান। এ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী তোয়াজউদ্দীন আহমেদ। মাওলানা হাতেম আলী সুদীর্ঘ ৫৪ বছর ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হিসাবে দায়ীত্ব পালন করেন।
বার্ধক্যজনিত করনে খতিবের পদ থেকে অব্যহতি নেন। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত ফেকাশাস্ত্রবিদ। সমাজ থেকে শিরক উৎখাতে ছিলেন অত্যন্ত সোচ্চার ব্যত্তিত্ব। ঝিনাইদহ অঞ্চলে ইসলামের বাণী প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একজন নিবেদিত পুরুষ। দলমত ধর্ম- বর্ন নির্বিশেষে সকলেই স্বীকার করেন তাঁর ইসলাম খেদমতের কথা। ১৯৭০ সালের দিকে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। হাফেজী হুজুরের প্রতিষ্ঠিত খেলাফত আন্দোলন সংগঠনের প্রার্থী হিসাবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন। এর পর তিনি রাজনীতি থেকে সরে আসেন।
১৯৭৪ সালে তিনি হজ্ব পালন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন সদালাপি। তিনি জীবন পরিচালনা করতেন রুটিনমাফিক। মাওলানা হাতেম আলীর বিবাহ হয় পবহাটি গ্রামের মাওলানা ইজ্জাতুল্লাহ সাহেবের কন্যার সাথে। ১০০ বছর বয়সে ২০১১ সালে মৃত্যুবরন করেন তাঁর ঝিনাইদহের বাসায়। ব্যাপারিপাড়ার সিদ্দিকিয়া রোড ( বর্তমানে মাওলানা হাতেম আলী রোড) শাপলা চত্তরের উত্তরে তিনি শেষ জীবনে ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন মোহাম্মাদিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসাটি কোরআনে হাফেজ হওয়ার এক উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিগনিত।