ইসলামের দৃষ্টিতে চিল্লার বিধান
ঝিনাইদহের চোখঃ
‘চিল্লা’ ফারসী শব্দ। যার শাব্দিক অর্থ ‘চল্লিশ দিনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে’। যেমন হাদীস শরীফে মাতৃ উদরে মানব জন্মের ধারাবাহিকতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, মানুষ চল্লিশ দিন যাবত বীর্যরূপে অবস্থান করে। অতঃপর চল্লিশ দিনে গোশত পিণ্ডরূপ ধারণ করে।
তারপর প্রতি ৪০ দিনে এক এক অবস্থায় রূপান্তরিত হতে থাকে, এই কারণে ছুফী দরবেশদের নিকট চিল্লার একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। (ফাজায়েলে নামাজ পৃষ্ঠা- ৬৬), (জামিউল লুগাত, ২৫৩ পৃঃ)।
সূফী ও পীরদের পরিভাষায় ‘চিল্লা’ বলা হয় কোনো একটি বিশেষ জায়গায় (অর্থাৎ খানকায়) অবস্থান করে কিছু বিশেষ আমল চল্লিশ দিন ধরে অভ্যাস করা। দেওবন্দি পীর মুরিদীর বাহক প্রতিষ্ঠাতা তাবলীগী জামা’আত জনাব ইলিয়াস ঐ চিল্লাকেই সুকৌশলে তাঁর তাবলীগী মিশনে লাগিয়েছেন।
তবে তিনি চিল্লার একটু তারতম্য ঘটিয়েছেন। তা হলো এই যে, তাঁদের তাবলীগী চিল্লা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় কিংবা খানকায় বসে নয়, বরং তা তাবলীগী গাশত বা ঘোরাফেরায় হবে। বর্তমানে দেখা যায় তাবলীগী দা’ওয়াতের পদ্ধতি নিম্নরূপ :
১। দ্বীনের দা’ওয়াতের জন্য বিভিন্ন রকমের চিল্লা লাগানো।
২। নিজের পরিবার ও প্রতিবেশীকে দা’ওয়াত না দিয়ে দূর-দূরান্তে দ্বীনের দা‘’ওয়াতী কাজে বের হওয়া।
৩। দ্বীনের দা’ওয়াতের কাজে সপ্তাহে একদিন, মাসে তিনদিন, বছরে ৪০ দিন, সারা জীবনে ১২০ দিন অর্থাৎ তিন চিল্লার সময় নির্দিষ্ট করে চিল্লা লাগানো।
এগুলো বিদ’আত হবার কারণ হচ্ছে, রসূল (সা.) ও সহাবাগণ দ্বীনের দা’ওয়াতের ক্ষেত্রে এ জাতীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক, বাৎসরিক ও আজীবনের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারন করেননি। আমরা কেন নতুন করে তা করতে যাব?
বরং কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘আপনি আপনার প্রতিপালকের পথে আহবান করুন জ্ঞানগর্ভ কথা ও সদুপদেশের মাধ্যমে।’’ (সূরা নাহল : ১২৫)
‘‘আল্লাহ সাধ্যের বাইরে কাউকে কষ্ট দেন না।’’ (সূরা বাক্বারাহ : ২৮৬)
‘‘তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় করো।’’ (সূরা তাগাবূন : ১৬)
এ আয়াতগুলোর দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, সাধ্যানুসারে হিকমাতের সাথে উপযুক্ত সময়ে দা’ওয়াতের কাজ করা উচিত। এক্ষেত্রে বাধা-ধরা কোনো সময় চাপিয়ে দেয়া হয়নি। সর্বোপরি রসূল (সা.) থেকে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই এটি বিদ’আত।
কেননা রসূল (সা.) বলেন : ‘‘যে কেউ আমাদের দ্বীনের মধ্যে নতুন অবাঞ্ছিত কিছু আবিষ্কার করল যা তাতে নেই, তা অবশ্যই প্রত্যাখ্যাত।’’ (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
আরেকটি বর্ণনা এসেছে : ‘‘যে ব্যক্তি এমন কাজ করগোশত আমাদের দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।’’ (সহীহ মুসলিম)
অতএব নিজের স্ত্রী এবং পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণ ও অন্যান্য অধিকারের দিকে খেয়াল না রেখে খালি হাতে তাদেরকে আল্লাহর উপর সোপর্দ করে দ্বীনের কাজের নামে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর দূরে থাকা বিদ‘আত।
রসূল (সা.) এমনটি করেননি। এমনকি যুদ্ধে যাবার সময়ওতিনি লটারীর মাধ্যমে বাছাই করা স্ত্রীকে সাথে করে নিয়ে গেছেন। অতএব সকল বিষয়ে রসূলের সুন্নাতকেই আঁকড়ে ধরে নিজেকে বিদ’আতমুক্ত রাখাটাই প্রত্যেক মুসলিমের উচিত।
লেখক : মুরাদ বিন আমজাদ।