ধর্ম ও জীবন

দুঃখবোধ থেকে মুক্তির উপায়

ঝিনাইদহের চোখঃ

দুঃখবোধ মানুষের জন্য মহা পরীক্ষা ও এক ধরনের মানসিক চাপ। সুখের পাশাপাশি মানুষ মাত্ররই দুঃখবোধ থেকে থাকে। কেননা সুখ-দুঃখ মিলেই মানুষের জীবন।

নানান কারণে মানুষ দুঃখে পতিত হয়। কিন্তু এ দুঃখের সময় অনেক মানুষই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। অথচ কুরআন সুন্নাহর আলোকে সহজেই মানুষের এ দুঃখবোধকে সহজে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

কুরআন-সুন্নাহর আলোকে মানুষ দুঃখবোধ হালকা করা কিংবা তা থেকে বেঁচে থাকার উপায়গুলো তুলে ধরা হলো-

> দুঃখকে পরীক্ষা হিসেবে গ্রহণ

কোনো মানুষের দুঃখে পতিত হওয়া মহান আল্লাহর কাছে এক মহা পরীক্ষা। আল্লাহ তাআলা কুরআনে উল্লেখ করেন-
‘এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করবো কিছু ভয়, ক্ষুধা ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে।’ তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে নিশ্চয় আমরাসবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তারই সান্নিধ্যে ফিরে যাব। তারাই হলো সেসব লোক, যাদের প্রতি মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এ সব লোকই সৎপথ প্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৫-১৫৭)

> দুঃখের সময়েও ইতিবাচক থাকা

চরম দুঃখের সময় ইতিবাচক মনোভাব পোষনেই দুঃখের যন্ত্রণা ও ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়। কারণ দুঃখের সময় নেতিবাচক ধারণা পোষণ করলে দুঃখ বেড়ে যাওয়া ছাড়া কমার সম্ভাবনা থাকে না। হাদিসে এসেছে-
‘হজরতে ইবনে জায রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেয়ে বেশি হাসি-খুশি কাউকে দেখিনি।’ (তিরমিজি)

> কখনো ভয় না করা

আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘শয়তান তোমাদের অভাব-অনটনের ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতার নির্দেশ করে। পক্ষান্তর আল্লাহ তোমাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও বেশি অনুগ্রহের ওয়াদা করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সুবিজ্ঞ।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৬৮)

সুতরাং দুঃখের সময় কোনো কাজেই ভয় পাওয়া যাবে না। এ কথা সব সময় মনে রাখা যে, মহান আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন। আল্লাহ কখনো বান্দার কল্যাণ ছাড়া খারাপ কিছু চান না। অর্থাৎ আল্লাহ মানুষের সুখে-দুঃখে সাহায্যকারী।

> কুরআন তেলাওয়াত ও নামাজ পড়া

দুঃখের সময় প্রশান্তি লাভে কুরআন তেলাওয়াত ও নামাজের বিকল্প নেই। তাইতো প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া দুঃখের সময় শান্তি লাভে সাহাবায়ে কেরামকে নামাজে আসার আহ্বান করতে হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। হাদিসে এসেছে-
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করে বলেছেন, হে বেলাল! নামাজের জন্য আহ্বান কর; কেননা নামাজ আমাদেরকে (মানুষকে) প্রশান্তি দেয়।’ (আবু দাউদ)

সুতরাং দুঃখের সময় কুরআন তেলাওয়াত ও নামাজ প্রকৃতপক্ষেই মানুষের আত্মার শান্তি নিশ্চিত করে।

> আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

যাদের সুখ-শান্তি আপনার তুলনায় কম, তাদের দিকে তাকিয়ে দুঃখের সময় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘আর তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো তবে তোমাদেরকে আরো দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৭)

সুতরাং সময় যত কঠিন কিংবা দুঃখময় হোক না কেন, সব সময় আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা পোষণ করা জরুরি। কেননা অকৃতজ্ঞ হলেই আল্লাহর শাস্তি সুনিশ্চিত।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুখের সময় উল্লেখিত বিষয়গুলো যথাযথ পালনের তাওফিক দান করুন। সব সময় সবকিছুকে ভালোভাবে দেখার মাধ্যমে নিজের দুঃখকে সহজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button