ঝিনাইদহে দশের সহযোগিতায় স্বভাবিক জীবনে পঙ্গু রেজাউল

টিপু সুলতান, ঝিনাইদহের চোখঃ
দশের সহযোগিতায় এবার ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে কর্ম জীবনে ফিরে গেল পঙ্গু রেজাউল। একটি পা নেই তার। সংসারে বৃদ্ধ মাতা, স্ত্রী ও ১ সন্তান নিয়ে ৪ সদস্যের অন্ন যোগাতে বাধ্য হয়েই ক্রাচে ভর করে ভিক্ষাবৃত্তি করত।
সোমবার শহরে এসে ভিক্ষাবৃত্তি কালে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সে জানায়, মাত্র ৩ হাজার টাকা সহযোগিতা পেলেই আর ভিক্ষা করবে না। চার্জার ভ্যান চালিয়ে কর্ম করে খাবে। তার এমন আবেগী ওই মানবিক আবেদনটি শুনেই কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিবৃন্দ তাৎক্ষনিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ষ্টাটাস দেন।
ওই পোষ্টটি পড়েই এগিয়ে আসতে থাকেন সমাজের হৃদয়বাদ মানুষেরা। মাত্র ১ ঘন্টার ব্যাবধানে প্রবাসি ও স্থানীয় সাংবাদিক সহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষেরা প্রায় ৫ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে তার পাশে দাড়ান। পঙ্গু রেজাউলের বাড়ী কালীগঞ্জ উপজেলা বহিরগাছী ইউনিয়নের কুল্লাপাড়া গ্রামে।
অসহায় পঙ্গু রেজাউল জানায়, পেশায় তিনি ছিলেন একজন রাজমিস্ত্রির যোগালে। ৫ বছর আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে পাচিল ভেঙ্গে পড়ে তার ডান পা টি অকেজো হয়ে পড়ে। অনেক টাকা পয়সা খরচ করেও তার পা টি ভাল করা সম্ভব হয়নি। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় এক সময়ে তার পায়ের ওই ক্ষত স্থানটিতে পচন ধরে। ডাক্তাররা তার জীবন বাচাতে ডান পা টি কেটে ফেলে। এরপর থেকেই সে ভিক্ষাবৃত্তি করছিল। সোমবার সকালে সে প্রতিদিনের ন্যায় কালীগঞ্জ শহরে ভিক্ষা করতে এসেছিল।
একপর্ষায়ে কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সে জানায়, ভিক্ষার যোগাড় করা কিছু টাকা দিয়ে একটি চার্জার ভ্যান কিনেছে। কিন্তু বিক্রেতার বাকী আরো ৩ হাজার টাকা দিতে না পারায় বিক্রেতা তাকে ভ্যান দেয়নি। সে জানায়, ভ্যান পেলে আর ভিক্ষাবৃত্তি করবে না, কর্ম করে খাবে। এমনই আবেগ প্রবন মানবিক ওই কথা শুনেই সাংবাদিকগন তার ছবি সহ মানবিক সহযোগিতার আবেদন জানিয়ে তাৎক্ষনিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোষ্ট দেয়।
এরপর মাত্র ১ ঘন্টার ব্যাবধানে এস এস সুমন নামে এক সৌদী প্রবাসি বিকাশে ৩০৬০ টাকা ও স্থানীয় সাংবাদিক সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষেরা নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার টাকা অনুদান দেন। বিকালে কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের মাধ্যমে ইউপি সদস্য ও ভ্যান বিক্রেতার উপস্থিতিতে অনুদানপ্রাপ্ত টাকায় ভ্যানের বাকী টাকা পরিশোধ সহ পঙ্গু রেজাউলকে কিছু নগদ টাকা প্রদান করা হবে। এ সময় প্রেসক্লাবের সভাপতি জামির হোসেন, সাধারন সম্পাদক সাবজাল হোসেন সহ ক্লাবের সাংবাদিকবৃন্দগন উপস্থিত থাকবেন।
বহিরগাছী ইউনিয়নের কুল্লাপাড়ার গ্রামের ইউপি সদস্য মোবারক বিশ^াস জানায়, অসহায় হতদরিদ্র রেজাউল সংসার চালাতে নিরুপায় হয়েই ভিক্ষাবৃত্তি করছিল। ৫ বছর আগেও তার চিকিৎসার জন্য এলাকাসীরা প্রায় ২ লাখ টাকা তুলে সহযোগিতা করেছিল। কিন্তু তার পা টি বাচানো সম্ভব হয়নি। বর্তমানে বৃদ্ধ মাতা, স্ত্রী ও ১ সন্তান নিয়ে ৪ সদস্যের পরিবারে অভাব অনটনের মধ্যেই দিন কাটছে তাদের। তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতায় অনুদান প্রদানকারীদের কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
এছাড়াও সাংবাদিকদের আহব্বানে সাড়া দিয়ে একজন অসহায় পঙ্গু অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোর জন্য কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি/সম্পাদক সহ সকল সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।