ক্যাম্পাসটপ লিড

প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঝিনাইদহ ভেটেরিনারি কলেজের শিক্ষার্থীর খোলা চিঠি

ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি (অনুষদ) হিসেবে অন্তর্ভুক্তকরণের দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৫ফেব্রæয়ারি) থেকে কলেজের প্রধান ফটক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলানোসহ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও আন্দোলন চালিয়ে আসছিল সাড়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী। টানা তিন দিনের কর্মসূচীর পর শুক্রবার (১মার্চ) সকাল ১০টার দিকে ক্যাম্পাস ও হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। এর পরপরই ক্যাম্পাসজুড়ে পুলিশ অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ হলে হলে গিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের বের হওয়ার জন্য আধা ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়। এবং পুলিশ অভিযান চালিয়ে শিক্ষার্থীদের আধা ঘণ্টার মধ্যে হল ত্যাগে বাধ্য করে। কোনো রকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কলেজ কর্তৃপক্ষের এমন নির্দেশে বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) অমলেন্দু ঘোষ অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ কে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এর অনুষদ হিসেবে বাস্তবায়নের দাবিতে সোববার ভেটেরিনারি কলেজের শিক্ষার্থী মোঃ জাহিদ হাসান প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি লেখেন। এই চিঠিতে তিনি যা লিখেছেন-

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
সালাম ও শুভেচ্ছা নিবেন । আমরা সাধারণ নাগরিক ও ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজের শিক্ষার্থী। জাতির জনকের সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে সামনে নিয়ে, দক্ষ প্রাণি চিকিৎসক হওয়ার আশায় আমরা ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম।
আমাদের সে স্বপ্ন আজ মাঝ নদীতে ভাসমান কচুরিপানার মত। ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজটি, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় এর প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের একটি স্থাপন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে এটি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত।
কিন্তুু প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের আন্ডারগ্র্যাজুয়েশন লেভেলের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার আইনি কোনো বৈধতা নেই এবং কলেজটি পরিচালনা করার মত সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। যার ফলে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই শিক্ষার্থীদের নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
আমাদের কলেজটিতে অবকাঠামো আছে কিন্তু দক্ষ ও পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই । পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ নেই। ল্যাবরেটরি আছে রিঅ্যাজেন্ট নেই। ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান নেই।
অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, বিশ্ববিদ্যালয় সমমর্যাদা সস্পূর্ণ কলেজটিতে একজন অধ্যাপক অথবা একজন সহযোগি অধ্যাপকও নেই। এখানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জেলা ও উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জনদের, কিছু গেষ্ট শিক্ষক দিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
গেষ্ট শিক্ষকদের সম্মানিভাতা, কর্মচারিদের বেতন, ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসন সংকট। সুষ্ঠু ভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার মত কোনো অভিজ্ঞতা নেই যার ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সেশন জট। ইন্টার্ন প্রাণি চিকিৎসকদের সম্মানি ভাতার কোনো ব্যবস্থা এখন অবধি করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের সুযোগ থাকে, গবেষণার সুযোগ থাকে যা একটি ভেটেরিনারি কলেজে সেভাবে থাকে না। আর উচ্চতর শিক্ষা, গবেষণা এসবের মাধ্যমে একটি দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যায়। একমাত্র ভেটেরিনারিয়ানরাই পারে বাড়তি জনসংখ্যার চাপ সামলে, দেশের আমিষের চাহিদা পূরণ করতে।
উপরোক্ত কারণে ২০১৫ সাল থেকে শিক্ষার্থীরা কলেজটিকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ করার জন্য দাবী জানিয়ে আসছিলো, সে সময় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবির সাথে একাত্ত্বতা প্রকাশ করেন এবং দক্ষ ভেটেরিনারিয়ান তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ করণের পক্ষে মত দেন। কিন্তু প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের বাঁধার কারণে তা সম্ভব হয়নি।
৩১ জানুয়ারি ২০১৯ সালে কলেজ প্রতিস্থাপণ প্রকল্প ধাপ-২ শেষ হবার পর থেকে প্রত্যেকটি সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে এবং কলেজের স্বাভাবিক কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে। ৩৬০ জন শিক্ষার্থীর প্রাণি চিকিৎসকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ ফেব্রæয়ারি ২০১৯ থেকে আমরা নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণভাবে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ করণের জন্য আন্দোলন শুরু করি।
শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য কলেজ প্রশাসন, গত ১ মার্চ ২০১৯ পূর্ব নোটিশ ব্যতীত ছাত্র-ছাত্রীদের ৩০ মিনিটের মধ্যে হল ত্যাগ করার নির্দেশ জারি করে এবং অনির্দিষ্ট কালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন। পুলিশি সহযোগিতায় সবাইকে ৩০ মিনিটের মধ্যে কলেজ ক্যাম্পাস ত্যাগে বাধ্য করে।
মমতাময়ী মা,
এই খোলা চিঠির মাধ্যমে আমরা আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আপনার সন্তান সমতূল্য ছেলে-মেয়েরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সামনে দাঁড়িয়ে! আপনি অনতিবিলম্বে ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ কে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এর অনুষদ হিসেবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যৎকে আলোকিত করুন। তা নাহলে আত্মহত্যা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকবেনা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button