ধর্ম ও জীবন

ছেলে-মেয়েদের অবৈধ সম্পর্ক : ইসলাম কী বলে?

ঝিনাইদহের চোখঃ

পরনারীর প্রতি আসক্তি মানুষের বিকৃত মানসিকতা ও মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধ। মানবতা ও বিশুদ্ধতার একমাত্র জীবন ব্যবস্থা দিয়েছে ইসলাম। কোনো গর্হিত কাজই ইসলাম অনুমোদন দেয় না। আর বিবাহবহির্ভূত নারী-পুরুষের আসক্তি কিংবা সম্পর্ক সবচেয়ে গর্হিত নিষিদ্ধ কাজ।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীর জন্য ‘ঘনিষ্ঠ আত্মীয়’ দেবরকে (স্বামীর ভাইকে স্ত্রীর জন্য) মৃত্যুর সমতুল্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ঠিক স্বামীর জন্য স্ত্রীর বোনও (শ্যালিকাও) অনুরূপ।

স্ত্রীর জন্য দেবর আর স্বামীর জন্য শ্যালিকা মৃত্যুর সমতুল্য মানেই হলো একে-অপরের সঙ্গে অবাধ দেখা-সাক্ষাৎ এবং আসক্তিমূলক সম্পর্ক হারাম বা নিষিদ্ধ। ইসলামে এ সবের শাস্তিও খুব ভয়াবহ।

দেবর কিংবা শ্যালিকার ব্যাপারে যদি ইসলামের এ রকম কঠোর নির্দেশনা আসে তবে পরনারী কিংবা পরপুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিধান কেমন হতে পারে? তা বিবেকবানদের জন্য অনুমেয়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের কারো মাথায় লোহার পেরেক ঠুকে দেয়া ওই নারীকে স্পর্শ করা থেকে অনেক ভাল, যে নারী তার জন্য হালাল নয়।’ (তাবারানি)

ইসলামে বিবাহবিহির্ভূত প্রেম, যৌন সম্পর্ক, আসক্তিমূলক আচরণ, সামাজিকতার নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ফাহেশা কথা-বার্তা বা চ্যাটিং সবই হারাম তথা নিষেধ।

যৌন সম্পর্ক, অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা তো দূরের কথা, বিবাহবহির্ভূত নারী-পুরুষরা কোমল বা নরম ভাষায় সরাসরি, মোবাইলে কিংবা চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে আসক্তিমূলক কথা-বার্তাও বলা যাবে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন-

‘হে নবি পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মতো নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না। যার ফলে সে ব্যক্তির কুবাসনা সৃষ্টি হয়, যার অন্তরে আসক্তি আছে। তোমরা উত্তম (সংযত) কথাবার্তা বলো।’ (সুরা আহযাব : আয়াত ৩২)

আবার নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি বিনিময়েও রয়েছে সুস্পষ্ট হুকুম। এ প্রসঙ্গে কুরআনে পাকে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট নীতিমালা ঘোষণা করেছেন।

> পুরুষদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

‘(হে রাসুল! আপনি) মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা রয়েছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তাআলা সে ব্যাপারে খবর রাখেন।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩০)

> আবার নারীদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

‘(হে রাসুল! আপনি) ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। সাধারণতঃ প্রকাশমান ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বুকের ওপরে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, বাবা, শ্বশুর, ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, স্ত্রীলোক অধিকারভূক্ত বাদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও (এমন) বালক- যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতিত অন্য কারো সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। (এমনকি) তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তাওবা কর; যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩১)

কুরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা হলো, মুসলিম নারী-পুরুষ উভয়ে অবৈধ সংস্পর্শ, কথা-বার্তা ও দেখা-সাক্ষাৎ, আসক্তি ও সাজ-সজ্জা থেকে বেঁচে থাকা। নিজেদের দ্বীন ও আত্মসম্মান রক্ষা করা।

সুতরাং প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেই ছোট হাদিসটির ওপর আমল করা জরুরি। যার বাস্তবায়নে তিনি মুসলিম উম্মাহকে দিয়েছেন জান্নাতের গ্যারান্টি। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের জিহ্বা ও লজ্জাস্থান হেফাজত করবে; আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার হবো।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর নারী-পুরুষ উভয়কে অবৈধ আসক্তি, সম্পর্ক, দেখা-সাক্ষাৎ, কথা-বার্তা ও যৌন লালসা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button