ধর্ম ও জীবন

প্রিয়নবির শ্রেষ্ঠ উপহারের মাস ‘রজব’

ঝিনাইদহের চোখঃ

আল্লাহ তাআলা যে ৪টি মাসকে মুসলিম উম্মাহর জন্য হারাম ঘোষণা করেছেন, তাহলো- রজব, জিলকদ, জিলহজ ও মহররম। এ ৪টি মাসকে হারাম ঘোষণা করার কারণ হলো এ মাসগুলোতে আল্লাহর বিধান পালন করবে। আর আল্লাহর বিধান পালনই হচ্ছে সর্বোত্তম ইবাদত।

এ ৪টি মাসের মধ্যে রজবকে বলা হয় ওমরা পালনের মাস। আর বাকি তিন মাসকে বলা হয় হজের মাস। কেননা জিলকদ মাস থেকে হজের প্রস্তুতি ও কার্যক্রম শুরু হয় যা শেষ হতে হতে মহররম চলে আসে।

যেহেতু আল্লাহ তাআলা এ মাসগুলোকে দুনিয়ার যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে মুক্ত থাকার জন্য সুনির্দিষ্ট করেছেন; সেহেতু এ মাসের ইবাদত-বন্দেগি অন্যান্য মাসের ইবাদত-বন্দেগির তুলনায় অনন্য এবং ফজিলতপূর্ণ।

রজব মাস এ মর্যাদার মাসগুলোর মধ্যে একটি। এ মাসেই আল্লাহর রাসুল সাইয়্যেদুনা মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজে বরকত লাভের এবং রমজান পর্যন্ত হায়াত লাভের দোয়া করতে শুরু করেছেন।

তিনি আল্লাহর কাছে বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি রজব ও শাবান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজানে পৌছে দিন।’

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিস থেকে বুঝা যায় গুরুত্বপূর্ণ মাস রজব। রজব মাস বান্দার গোনাহ থেকে মুক্তির মাস।

অন্য হাদিসের এক বর্ণনায় এসেছে, ‘রজব মাসের প্রথম রাতে বান্দার কোনো ইবাদত বা দোয়া আল্লাহ তাআলা ফিরিয়ে দেন না।’

রজব মাসের গুরুত্ব বুঝায় প্রিয়নবির নবুয়তের সত্যতার এক মহা আশ্চর্যজনক ঘটনা। যা পৃথিবীর ইতিহাসে মানুষের দ্বারা অসম্ভব এবং ইসলামের ইতিহাসে বিরল। আর তাহলো মেরাজ।

এ মাসেই আল্লাহ তাআলা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার দিদারে ধন্য করেছেন। সব বড় বড় নবি রাসুলদের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেছেন। সবার মধ্যে বায়তুল মোকাদ্দাসের ইমামতির মাধ্যমে করেছেন সম্মানিত।

দুনিয়ার মানুষের সামনে ছুঁড়ে দিয়েছেন অসম্ভব চ্যালেঞ্জ। এক রাতে মক্কা থেকে সুদূর জেরুজালেমে গমন এবং সেখান থেকে আল্লাহর দিদার মেরাজ সংঘটিত হওয়া আবার সে রাতেই দুনিয়ার জমিনে এসে ফজর আদায় করা। (সুবহানাল্লাহ) তা সংঘটিত হয়েছে এ রজম মাসে।

এ মাস এতই মর্যাদার মাস। যে মাসে মহান আল্লাহ বান্দার প্রধান শারীরিক ও আধ্যাত্মিক ইবাদত নামাজকে শ্রেষ্ঠ উপহার হিসেবে দান করেছেন। আর এ নামাজকে মুমিনের মিরাজ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।

প্রিয়নবি ঘোষণা করেছেন, ‘রজব মাস হচ্ছে আমার উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার মাস। এ মাসে আমার উম্মতের উপর আল্লাহর অত্যধিক রহমত বর্ষিত হয়।

সুতরাং এ মাসের সুনির্দিষ্ট কোনো নফল নামাজ বা রোজা না থাকলেও সামগ্রিকভাবে রজব মাসজুড়ে আল্লাহর কাছে রোনাজারির বিকল্প নেই।

তাই যেহেতু রজব মাস শুরু হলে প্রিয়নবি বেশি বেশি এ দোয়া পাঠ করতেন, তাই আমরাও এ দোয়া বেশি বেশি পাঠ করব-

প্রিয়নবির শেখাানা দোয়াটি হলো-

اَللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ رَجَبَ وَ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাঝাবা ওয়া শা’বানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জন্য রজব ও শা’বান মাসে বরকত দাও এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও।

পাশাপাশি আমরা সুন্নাত ও নফল নামাজ বেশি বেশি আদায় করবো। তা হতে পারে তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, তাসবিহ, আওয়াবিন ইত্যাদি এবং রোযা, কুরআন তেলাওয়াত, অর্থসহ কুরআন অনুধাবন, তাসবীহ-তাহলিল, দরূদ শরীফ ও ইস্তেগফার-তওবা ইত্যাদি।

পরিশেষে…
রজব শুধু যাবতীয় অন্যায় অনাচারের জন্য হারাম মাসই নয় বরং প্রিয়নবির জন্য শ্রেষ্ঠ উপহারের মাস। এ মাসে প্রিয়নবি দুনিয়ার জীবনের শ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠ উপহার লাভ করেছেন। আর এ সবের উত্তরসূরী হয়েছে তাঁর প্রিয়ন উম্মত। নামাজ, মেরাজ, গোনাহ থেকে ক্ষমা লাভসহ অসংখ্য নেয়ামতের ঘোষণা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ রজব মাসে তাঁর ইবাদত-বন্দেগি করে পরকালের চিরস্থায়ী জীবনকে আলোকিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button