শিশুদের ভালোবাসবেন যে কারণে
ঝিনাইদহের চোখঃ
শিশুদের ভালোবাসা আল্লাহর ইবাদত। শিশুর প্রতি ভালোবাসায় জাহান্নাম হারাম হয়ে জান্নাত আবশ্যক হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা শিশুদের স্বার্থ রক্ষায় গর্ভধারিনী কিংবা দুগ্ধদানকারী মায়ের অনেক ফরজ ইবাদতও শিথিল করে দিয়েছেন।
শিশুদের প্রতি মানুষের নিষ্পাপ ভালোবাসায় রয়েছে বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা বা দয়ার প্রতিফলন। হাদিসে পাকে প্রিয়নবি বর্ণনা করেন-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক ব্যক্তি একটি শিশু নিয়ে বিশ্বনবির খিদমতে এসে শিশুটিকে চুমু দিতে লাগলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দৃশ্য দেখে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, শিশুটির প্রতি কি তোমার দয়া জেগে উঠেছে? সে বলল, ‘হ্যাঁ’, হে আল্লাহর রাসুল! তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ তাআলা তোমার প্রতি এর চেয়েও অধিক দয়া করেন। কেননা তিনি দয়ালুদের শ্রেষ্ঠ দয়ালু। (বুখারি)
শিশুর প্রতি ভালোবাসা দেখানো ব্যক্তির জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনিব। ইমাম মুসলিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ মুসলিমে একটি হাদিস সংকলন করেন-
হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে একদিন এক নারী দুটি কন্যা শিশু নিয়ে আসলেন। তিনি তাদের ৩টি খেজুর দিলেন। ওই নারী দুই শিশু সন্তানকে ২টি খেজুর দিলেন। বাকি একটি সে নারী মুখে দিতে যাবেন, এমন শিশুরা সেটিও খেতে চাইলে ওই নারী নিজে না খেয়ে খেজুরটি দুই টুকরো করে দুই শিশু সন্তানকে দিয়ে দিলেন।
শিশু সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসায় হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা চমকে গেলেন। তিনি এ ঘটনাটি বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বর্ণনা করলেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আয়েশা! আল্লাহ তাআলা ওই নারীকে এ ভালোবাসার বিনিময়ে জান্নাত দান করবেন অথবা এ ভালোবাসার বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন।’ (মুসলিম)
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তম সন্তান লাভে উত্তম নারীদের বিয়ে করার পরামর্শ দিয়েছেন। যে উত্তম নারীর গর্ভের সন্তানও হবে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ধন-সম্পদ, বংশীয় আভিজাত্য, রূপ-গুণ এবং দ্বীনদারী-এ চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রেখেই মেয়েদের বিবাহ কর। কারণ একজন শিশু তাঁর মায়ের ধন-সম্পদ, রূপগুণ, বংশীয় আভিজাত্যের পাশাপাশি তাঁর দ্বীনদারীর গুণাবলীও উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকে।’
আল্লাহ তাআলা শিশুদের অধিকারের প্রতি এত বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন যে, শিশু মায়ের গর্ভে আসার কারণে গর্ভবর্তী নারীর জন্য কষ্টকর সব কাজকে সহজ করে দেন।
আল্লাহ তাআলা গর্ভবর্তীদের অনাগত সন্তানের নিরাপত্তায় এমনকি শিশুর জন্মের পর দুগ্ধদানকারী মায়েদের জন্যও শিশুর খাদ্যাভাব ও নিরাপত্তার কথা ভেবে আল্লাহ তাআলা রমজানের রোজা রাখার বাধ্যবাধকতাকে উঠিয়ে দিয়েছেন।
মায়ের বুকের দুধে রেখে দিয়েছেন শিশুর রোগ-বালাই প্রতিরোধকারী প্রতিশেধক। যা শিশুদের প্রতি আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমত ও ভালোবাসার অনন্য নিদর্শন।
সুতরাং শিশুদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ ও উত্তম চরিত্রবান হিসেবে গড়ে তুলতে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। যাতে রয়েছে জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে থেকে মুক্তির ঘোষণা। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
‘ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্তুতি পার্থিব জীবনের শোভা এবং স্থায়ী সৎকর্ম। তোমরা প্রতিপালকের পুরষ্কার পাওয়ার জন্য শ্রেষ্ঠ এবং কাঙ্ক্ষিত হিসেবেও উৎকৃষ্ট। (সুরা কাহাফ: আয়াত ৪৬)
তাই আসুন, শিশু সন্তানের প্রতি সদয় হই। আল্লাহ বিধান পালনার্থে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে শিশুদের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি, নিরাপত্তা ও অধিকারের ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এগিয়ে আসি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিশুদের কল্যাণে কাজ করার ও তাদের স্বার্থ রক্ষায় সতর্কতা অবলম্বন করার পাশাপাশি তাদের ভালোবাসার তাওফিক দান করুন। শিশুদের ভালোবাসার বিনিময়ে জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।