ফেরেশতাদের সৃষ্টি ও তাদের কাজ
ঝিনাইদহের চোখঃ
সুরা বাক্বারা ২৯ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা আকাশ-পৃথিবী ও জগতের সমূদয় সৃষ্টির সৃষ্টা হিসেবে নিজেকে ঘোষনা দিয়েছেন। ফেরেশতারাও এর অন্তর্ভূক্ত। ফেরেশতাদের সৃষ্টি এবং তাদের কাজের বর্ণনায় আল্লাহ তাআলা কুরআন-হাদিসে সুস্পষ্ট বর্ণনা করেছেন।
ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, ‘ফেরেশতারা এমন নুরানি মাখলুক, যারা বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করতে পারেন এবং তারা কখনো আল্লাহ তাআলার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করেন না। বরং সব সময় আল্লাহর নির্দেশ পালনে রত থাকেন।
ফেরেশতাদের নিজস্ব জগতে তাদের আকার আকৃতি আছে কিন্তু বান্দার কাছে তাদের প্রকাশ্য কোনো আকার আকৃতি নেই। তবে তারা আল্লাহর হুকুমে বিভিন্ন আকার-আকৃতি ধারণ করতে পারেন।
ফেরেশতারা মানুষের মতো রক্ত-মাংসে সৃষ্টি কোনো জীব নয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস দ্বারা উল্লেখিত বিষয়গুলো প্রমাণিত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ফেরেশতারা নূর হতে, জিনেরা অগ্নি স্ফুলিঙ্গ হতে, আর আদম আলাইহিস সালাম মাটি হতে সৃষ্ট। (মুসলিম)
ফেরেশতারা আল্লাহ তাআলা এক অনুগত সৃষ্টি। আল্লাহর প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনায় সব সময় ব্যস্ত থাকে তারা। আল্লাহর নির্দেশ পালনে কখনো তাঁর অবাধ্য হয় না।
মানুষের যেমন কামনা-বাসনা-চাহিদা, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, তন্দ্রা-নিদ্রাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ফেরেশতাদের সে রকম কামনা-বাসনা, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, তন্দ্রা-নিদ্রা এমনকি কোনো চাহিদার প্রয়োজনীয়তাও নেই।
ফেরেশতারা সব সময় আল্লাহর হুকুম পালনে ইবাদাত-বন্দেগিতে মশগুল থাকেন। আল্লাহ যখন যা হুকুম করেন তখনই তা পালন করে থাকেন।
ফেরেশতাদের কর্মনিষ্ঠার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ। আল্লাহ তা’আলা তাদের যা আদেশ করেন, তারা তা অমান্য করেন না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে।’ (সুরা তাহরিম : আয়াত ৬)
আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি জগতের জন্য যত রহমত বা শাস্তি নাজিল করেন, তাও ফেরেশতাদের মাধ্যমেই নাজিল করেন। ফেরেশতাদের মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলা নবি-রাসুলগণের নিকট আসমানি কিতাব ও প্রত্যাদেশ প্রেরণ করছেন।
আল্লাহ তাআলা বান্দার আমলনামা লিখার কাজে ফেরেশতাদের নিযুক্ত করেছেন। ফেরেশতারাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি পঠিত দরূদ ও সালাম তাঁর নিকট পৌছান। করান।
ফেরেশতার মাধ্যমেই বান্দার মৃত্যুর সময় রূহ কবজ করান। দুনিয়াতে প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে বৃষ্টি বর্ষণ করান ফেরেশতাদের মাধ্যমে। দুনিয়াতে মুমিন বান্দার জন্য মাগফিরাত কামনায় তিনি ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন।
সর্বোপরি আল্লাহ তাআলা এ ফেরেশতার শিঙ্গায় ফুৎকারের মাধ্যমে পৃথিবীতে কিয়ামত (মহাপ্রলয়) ঘটাবেন। আবার কিয়ামত পরবর্তী পুনরুত্থান ঘটাবেন। হাশরের ময়দানে এ ফেরেশতাদের মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলা বান্দার ভালো ও মন্দ কাজের সাক্ষ্য নেবেন।
পরিশেষে…
আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকে ঈমানের অংশ নির্ধারণ করেছেন। যা কুরআন এবং হাদিসে সুস্পষ্টভাষায় বর্ণিত রয়েছে। তাই ফেরেশতারা আল্লাহর অনুগত সৃষ্টি অন্তরে এ বিশ্বাস রাখা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক কর্তব্য।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে আল্লাহ আনুগত্যে তাদের অবস্থানের নমুনা কুরআনের বিধান পালনে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।