ঝিনাইদহে ফসলি জমিতে ইটভাটা, প্রকৃতিতে পড়ছে বিরুপ প্রভাব
মনজুর আলম, ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহের অধিকাংশ ইটভাটাগুলো ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে। আবার ইটপোড়াতে বনের হাজার হাজার মন কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। সুবিধার্তে কাঠ চেরাই করার জন্য ইটভাটার পাশে স’মিল (করাতকল) বসিয়ে নেয়া হয়েছে। স্থানীয় ভাবে প্রভাবশালি ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আইনকে অমান্য করে ইটভাটা তৈরি করে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে বনই উজাড় হচ্ছেনা। পরিবেশেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এক্ষেত্রে প্রশাসন কর্তারাও দেখেও না দেখার ভান করছে। নাকি নারায়নে তুষ্ট হয়ে দেখতে চাইছেন–না। এ নিয়ে চলছে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা।
জেলা ইটভাটা সমিতি সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৬ উপজেলায় ১’শ ৭টি ইটভাটা রয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলায় ৯২ টি ইট ভাটা রয়েছে। যার মধ্যে ১৮ টি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ নিবন্ধন রয়েছে। আর বাকি ৭৪ টি ইটভাটা রয়েছে অবৈধ।
অভিযোগে জানাগেছে, ইট প্রস্তুত এবং ভাটা স্থাপনা (নিয়ন্ত্রন) আইন ২০১৩-এর ৮ ধারা অনুযায়ি, লোকালয় ও কৃষি জমিতে ইটভাটা তৈরি দন্ডনিয় অপরাধ। কিন্তু কর্মকর্তাদের উদাসিনতা এবং ইট ভাটা মালিকেরা স্থানীয় ভাবে প্রভাবশালি ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আইনকে অমান্য করে ইটভাটা গড়ে তোলেন। যে কারনে কোন সময় অভিযোগ উঠলেও বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সক্ষম হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন খোঁজনিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ ইটভাটাগুলোই ফসলি জমিতে, যা পাশের জমি গুলোর ফসল ছাই,ধোয়ায় নষ্ঠ হচ্ছে। অন্যদিকে তাদেও কোন বৈধ লাইসেন্স নেই। তারা আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে ফসলি জমিতে ও অবাধে কাঠ পোড়াচ্ছেন। সেই সাথে ব্যারেল চিমনিও ব্যবহার করছেন মফস্ফলের ইটভাটাতে। কৃষকের অভাবের সুযোগে কমদামে গাছপালা কিনছে। আর উজার করা হচ্ছে বন। ঝিনাইদহ-কালীগঞ্জ মহাসড়কের পাশের দুটি ইটভাটায় দেখা যায়, ২ ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। একটি ইটভাটায় ব্যারেল চিমনি ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে উঠেছে নতুন নতুন অনুমোদনহীন ইটভাটা। অনুমোদনের জন্য আবেদন কেরই চলছে বছরের পর বছর।
মহেশপুরের অলিয়ার রহমান বলেন, প্রতিটি ভাটায় অনবরত কাঠবোঝাই যানবাহন প্রবেশ করে। ভাটাগুলোতে মজুদ রয়েছে হাজার হাজার মণ কাঠ। কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। কৃষিজমি এবং জনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে ওঠা এসব ভাটায় স্বল্প উচ্চতার টিনের তৈরি চিমনি দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে। এতে ফসলসহ পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে। দ্রুত এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলে কয়েক বছর আগে আমরা অভিযোগও করেছিলাম। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
জেলা পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক বলেন, জেলায় যত্রতত্রই গড়ে উঠছে ইটের ভাটা। কেউই মানছে না সরকারী কোন নীতিমালা। নিয়ম মানানোর জন্য কর্তৃপক্ষেরও নেই কোন নজরদারী। আমরা পরিবেশ নিয়ে কাজ করি, মানুষকে উদ্বুুদ্ধ করি। কিন্তু আমাদের কথাও ভাটা মালিকরা মানছে না। এর জন্য দরকার সরকারের পদক্ষেপ। পরিবেশ রক্ষার্থে ইতিমধ্যে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচী পালন করেছি।
ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, ব্যারেল চিমনী ও কাঠ পোড়ানে দন্ডনীয় অপরাধ। মালিক সমিতির পক্ষ থেকে প্রত্যেককে বলে দেওয়া হয়েছে। যদি কাঠ পোড়ায় তাহলে তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে।
এব্যাপারে জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, আমরা খুব দ্রুত অবৈধ ও পরিবেশ দুষণকারী ইট ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতে প্রচুর পরিমান ইটের প্রয়োজন। ফলে পরিবেশ বান্ধব ইটভাটা তৈরিতে অনুরোধ জানাবো।##