অন্যান্য

লিভার ক্যান্সার কেন হয়?

ঝিনাইদহের চোখ ডেস্ক: ক্যান্সার মানেই আতঙ্ক, আর তা যদি হয় লিভার ক্যান্সার তাহলে তো কথাই নেই। একথা সত্যি যে শরীরের বেশির ভাগ ক্যান্সারের মতোই লিভার ক্যান্সার নিরাময় এখনো আমাদের সাধ্যের অতীত। তবে পাশাপাশি একথাও সত্যি যে লিভার ক্যান্সার চিকিৎসায় সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের অগ্রগতিও কম কম। সবচেয়ে বড় কথা, আজ বাংলাদেশে বসেই লিভার ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসাগুলো পাওয়া সম্ভব। আর সেই সব আশার কথা নিয়েই এ লেখার অবতারণা। লিভার ক্যান্সার কেন হয়? সারা পৃথিবীতেই লিভার ক্যান্সার, ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে চার লাখ লোক এ রোগে আক্রান্ত হন।

পুরুষদের ক্ষেত্রে মোট ক্যান্সারের ৭.৫ ভাগ লিভার ক্যান্সার, আর মহিলাদের বেলায় এ সংখ্যাটি ৩.২ ভাগ। আশঙ্কাজনক সত্যটি এই যে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় লিভার ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব পৃথিবীর জন্য যে কোনো অঞ্চলের চেয়ে অনেক বেশি। বিশ্বব্যাপী লিভার ক্যান্সারের মূল কারণ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস আর অ্যালকোহল। আমাদের দেশে অবশ্য হেপাটাইটিস বি মূল খলনায়ক, কারণ এদেশে প্রায় ৮০ লাখ লোক এ ভাইরাসের বাহক বা ঐইংঅম পজেটিভ। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত ৫ থেকে ১০ শতাংশ লোক জীবনের কোনো এক পর্যায়ে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ যে কোনো বয়সের লোকই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি পুরুষদের ক্ষেত্রে মহিলাদের চেয়ে ৪ থেকে ৬ গুণ বেশি। সাধারণত ক্যান্সার হওয়ার আগে লিভারে সিরোসিস দেখা দেয়, তবে এর ব্যতিক্রম হওয়াটাও অস্বাভাবিক না।

লিভার ক্যান্সারের রোগীরা প্রায়ই পেটের ডান পাশে উপরের দিকে অথবা বুকের ঠিক নিচে মাঝ বরাবর ব্যথা অনুভব করেন যার তীব্রতা রোগী ভেদে বিভিন্ন রকম। সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়া, পেট ফাঁপা, ওজন কমে যাওয়া আর হালকা জ্বর জ্বর ভাব এ রোগের অন্য লক্ষণ। লিভার ক্যান্সার রোগীদের প্রায়ই জন্ডিস থাকে না, আর থাকলেও তা খুবই অল্প। রোগীদের খাওয়ায় অরুচি, অতিরিক্ত গ্যাস কিংবা কষা পায়খানায় কমপ্লেন থাকতে পারে- আবার কখনো দেখা দেয় ডায়রিয়া। পেটে পানি থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে। লিভার ক্যান্সার নির্ণয় লিভার ক্যান্সার নির্ণয়ে সহজ উপায় একটি নির্ভরযোগ্য আল্ট্রাসনোগ্রাম। তবে কখনো সিটি-স্ক্যানেরও দরকার পড়ে।

আরও পড়ুন: যে কাজগুলো করলে হবে পিঠের ব্যথা

রক্তের অঋচ পরীক্ষাটি লিভার ক্যান্সারের একটি মোটামুটি নির্ভরযোগ্য টিউমার মার্কার। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরই উচিত প্রতি ৬ মাসে একবার অঋচ ও আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করা। তবে লিভার ক্যান্সারের ডায়াগনোসিস কনফার্ম করতে হলে আল্ট্রাসনোগ্রাম গাইডেড ঋঘঅঈ অত্যন্ত জরুরি আর অভিজ্ঞ হাতের এর সাফল্যের হারও প্রায় শতভাগ। লিভার ক্যান্সারে নতুন আশা শুরুতেই যেমনটি বলেছি লিভার ক্যান্সারে আশার এখন শেষ নয়, বরং শুরু। শুরুতে ধরা পরলে আর আকারে ছোট থাকলে অপারেশনের মাধ্যমে এ টিউমার লিভার থেকে কেটে বাদ দেয়া যায়। আর এর জন্য প্রয়োজনীয় কুসা মেশিন ও দক্ষ হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন এদেশেই বর্তমান।

পাশাপাশি আছে বিনা অপারেশনে টিউমার অ্যাবলেশন বা টিউমারকে পুরিয়ে দেয়া। নামমাত্র খরচে আল্ট্রাসনোগ্রাম গাইডে আমাদের দেশে এখন অহরহই লিভার ক্যান্সারের অ্যালকোহল দিয়ে অ্যাবলেশন আমরা করছি। আছে আরো কিছু আশা। যেমন এসেছে আগের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর, কিন্তু অনেক কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কেমোথেরাপি জেলোডা ও সুরাফিনের। সুরাফিনের এখনো আমাদের দেশে না পাওয়া গেলেও, আমরা জেলোডা দিয়ে আমাদের লিভার ক্যান্সারের রোগীদের চিকিৎসা করছি। আর তাই লিভারের ক্যান্সারে শেষ হয়নি আশা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button