অন্যান্য

উল্টো পথে হাঁটছে হিমবাহ

ঝিনাইদহের চোখঃ

হিমবাহগুলোর মধ্যে গ্রীনল্যান্ডের জ্যাকবশ্যাভন হিমবাহটি অন্যতম। তবে ২০১২ সাল থেকে হিমবাহের বরফ গলে এটি ছোট হয়ে আসছিল। বছরে এটি ১.৮ মাইল করে দৈর্ঘ্যে ছোট হচ্ছিল এবং ১৩০ ফিট করে পাতলা হচ্ছিল।

তবে অদ্ভূত খবর হলো যে, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় নাসা দেখছে এ হিমবাহটি আবার বড় হচ্ছে এবং সেটিও সেই বরফ গলার একই হারে। নেচার জিওসায়েন্সে এ গবেষণার বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে। ব্যাপারটিকে ক্ষণস্থায়ী বলে মনে করছেন এ বিষয়ে বিদ্বানরা।

জেসন বক্স নামে একজন জলবায়ু বিজ্ঞানী বলছেন, বিষয়টা বিস্ময়কর বটে। আসলে আমরা এতদিন ভেবেছি প্রকৃতির এসব বিসয়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে এবং ওই ভাবনাতেই আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। তবে এই হিমবাহটি নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনার মধ্যে দিয়ে আমরা বুঝলাম যে, নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার বিষয়টি একটাও দ্রুততার সাথে ঘটছে না। তবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

বক্স অবশ্য নাসার ওই গবেষণা দলে ছিলেন না। এই হিমাবহটি সম্পর্কে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহই নেই যে, জ্যাকবশ্যাভন গ্রিনল্যান্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিমবাহ, কারণ এ হিমবাহ থেকেই উত্তর গোলার্ধ সবচেয়ে বেশি বরফ পেয়ে থাকে। গ্রিনল্যান্ডের জন্য এ হিমবাহটিই সব।

নাসার ওশেন্স মেল্টিং গ্রিনল্যান্ড প্রজেক্টের (ওএমজি) গ্লেসিওলোজিস্ট ও গবেষকদলের প্রধান আলা খাজেনদার বলেন, প্রাকৃতিক চক্রেই উত্তর আটলান্টিকের পানি আরও শীতল হওয়ার কারণে গলে যাওয়ার বদলে উল্টো পথ ধরেছে হিমবাহটি। খাজেনদার ও তার সহকর্মীরা এর সাথে আরও একটি বিষয়ের কথাও বলছেন, যেটি কাজ করেছে কাকতালীয়ভাবে। আর তা হলো- নর্থ আটলান্টিক ওশিলেশন। এ প্রক্রিয়াতে প্রাকৃতিকভাবে অল্প কিছু সময়ের জন্য সমুদ্রের পানি শীতল ও উষ্ণ হয়। প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনো যে প্রক্রিয়াতে কাজ করে আটলান্টিকে এটি অনেকটা সেই প্রক্রিয়াতে কাজ করে।

গবেষকরা বলছেন, জ্যাকবশ্যাভন যেখানে সমুদ্র ছুয়েছে, সেই ডিস্কো বে’র পানি এখন আগের বছরগুলোর তুলনায় ৩.৬ ডিগ্রি ঠান্ডা।

নাসার জলবায়ু বিজ্ঞানী জশ উইলিস বলছেন, আপাতত এটাকে ভালো খবর বলে মনে হলেও লম্বা সময়ের জন্য এটা বেশ খারাপ খবর। কারণ এর ফলে বিজ্ঞানীরা এখন এ বিষয়টা বুঝবেন যে, হিমবাহের বরফ গলার পেছনে সমুদ্রের তাপমাত্রার বড় অবদান রয়েছে এবং আগে যা ভাবা হতো এটা তারচেয়েও বড় আকারে। মানবসৃষ্ট কারণে জলবায়ুপরিবর্তনের ফলে কয়েক দশক ধরেই সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বাড়ছে এবং তা বাড়তেও থাকবে। গ্রিনহাউস এফেক্টের কারণে আটকে পড়া গ্যাসের ৯০ শতাংশই যায় সমুদ্রে।

উইলিস আরও বলেন, ভবিষ্যতের জন্য আমরা সমুদ্রপানির উচ্চতা বৃদ্ধির যে আশঙ্কা করে আসছিলাম, তা সম্ভবত আরও বাড়াতে হবে।

খাজেনদার বলছেন, এসকেলেটর যেভাবে ধীরে ধীরে ওপরে দিকে ওঠে, গ্রিনল্যান্ডের নিকটবর্তী সমুদ্রের পানির তাপমাত্রাও সেভাবে ধীরে ধীরে বাড়ছে। নর্থ আটলান্টিক ওশিলেশন হলো একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যার ফলে এই তাপমাত্রা একবারে কয়েক ধাপ ওপরে উঠে যেতে যারে বা নীচে নেমে যেতে পারে। সমুদ্রের পানি আরও শীতল হতে পারে এবং তার আলাদা প্রভাব পড়বে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে পানি উষ্ণ হচ্ছে এবং বরফ গলার চিত্র আরও খারাপই হবে।

গবেষণা দলে ছিলেন না এমন আরও চারজন বিজ্ঞানী এ গবেষণা প্রতিবেদনটিকে অর্থপূর্ণ বলেই মনে করছেন।

ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের বরফ বিজ্ঞানী ইয়ান জৌঘিন এমন একটা ঘটনার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন বছর সাতেক আগেই। তিনি বলছেন, যদি মনে করা হয় জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিজ্ঞানে আগে যা বলা হয়েছিল এখনকার এ তথ্য তার উল্টো চিত্র দেখাচ্ছে তাহলে ভয়াবহ ভুল হবে।

জৌঘিন বলছেন, বৃহৎ পরিসরে ভাবতে গেলে যা হচ্ছে তা হলো সাময়িক একটি বিষয়মাত্র। মন্দাভাব পুঁজিবাজারেও আসতে পারে, কিন্তু সার্বিকভাবে উর্ধ্বমুখিতাই তার স্বাভাবিক ধারা। এটাও ওই একই ঘটনা।

সূত্র : এনবিসি নিউজ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button